ঈদ বিনোদনে ঐতিহাসিক মুজিবনগর কমপ্লেক্সে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়

 

 

মাজেদুল হক মানিক/মহাসিন আলী: ঈদুল ফিতরের ছুটিতে বিনোদনের জন্য মেহেরপুরের ঐতিহাসিক মুজিবনগরে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামছে। পর্যটকদের ভিড়ে তিল ধারণের ঠাঁই থাকছেনা বিশাল আম্রকাননে। ঈদোত্তর বিনোদনের জন্য জেলাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোরদের উপচে পড়া ভিড়। সংযোগ সড়কগুলোতে মানুষ ও পরিবহনের ভিড়ে দীর্ঘ যানজটেরও সৃষ্টি হচ্ছে। তবে যানবাহনে ব্যাপক চাঁদাবাজি নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে দর্শনার্থীদের মাঝে।

স্বাধীনতার সুতিকাগার মেহেরপুরের মুজিবনগর। বিনোদন পিয়াসীদের আকর্ষণের অন্যতম স্থান। ঈদুল ফিতরের ছুটিতে একদিনের জন্য হলেও বিনোদনের প্রত্যাশায় বাস-ট্রাক, মোটরসাইকেল, নসিমন, করিমন, আলগামন, আলমসাধুযোগে মুজিবনগরে ভিড় জমাচ্ছে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ ও শিশুরা। স্থানীয় দর্শনার্থী ছাড়াও মাইক, ব্যান্ড ও ভেপু বাজিয়ে চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, যশোর, মাগুরা, ফরিদপুর, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমছে মুজিবনগরে। তাই ভ্রমণপিপাসু মানুষের ভিড়ে মুখরিত মুজিবনগর কমপ্লেক্স। দর্শনার্থীরা মুগ্ধ হলেও তাদের রয়েছে বিভিন্ন অভিযোগ।

বিভিন্ন উৎসবে লাখ লাখ দর্শনার্থীর আগমন ঘটলেও বসার ব্যবস্থা, পানি ও টয়লেট সুবিধা না থাকায় দর্শনার্থীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। কুষ্টিয়ার শহরের নবদম্পত্তি আনোয়ার হোসেন ও শায়লা পারভীন জানান, এতো বড় এলাকায় হেঁটে হেঁটে তারা ক্লান্ত। কিন্তু বসার স্থান নেই। আম বাগানের সৌন্দর্য মণ্ডিত স্থানে বসার স্থান থাকলেও ক্লান্তি দূর হতো।

মুজিবনগরে বিশাল আম্রকানন ও পার্শ্ববর্তী এলাকাজুড়ে গড়ে উঠা কমপ্লেক্সে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টরভিত্তিক বাংলাদেশের মানচিত্র, স্মৃতিসৌধ, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন মূরাল, সরকারি শিশু পরিবার, ছয়স্তর বিশিষ্ট গোলাপ বাগান, শাপলা চত্বরসহ বিভিন্ন স্থাপনা ঘুরে ঘুরে দেখছে দর্শনার্থীরা। সীমান্তে গিয়ে ভারতের কাঁটাতারের বেড়া দেখছেন তারা। শিশু কিশোররা দর্শন করছে বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা মনোরম পার্ক ও চিড়িয়াখানা। ঈদোত্তর বিনোদনে মুজিবনগরের নৈসর্গিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ এখানে আগত পর্যটকরা।

মাগুরা থেকে আগত যুবক সোহেল জানান, ঈদের দিন সন্ধ্যায় বন্ধুদের নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৪জন বন্ধু পরদিন সকাল ৭টায় আলগামনে চড়ে মুজিবনগরের উদ্দেশে রওনা দিই। বেলা সাড়ে ১১টায় মুজিবনগর পৌঁছি। একটি দিনের জন্য এখানে এসে ভিন্ন ধরনের আমেজ পাচ্ছি আমরা।

কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলা শহরের ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম জানালেন, বিনোদনের জন্য সপরিবারে এখানে ঘুরেতে এসেছি। সন্তানদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সেক্টরভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে পারছি। তাই খুব ভালো লাগছে।

ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগরে নানার বাড়ি ঈদ করতে এসেছেন শাহীন। সকালে তিনি মুজিবনগরে বেড়াতে এসেছেন। তিনি বললেন, শুনেছি ঐতিহাসিক মুজিবনগরের কথা। আজ চোখে দেখলাম। ভারত সীমান্ত ঘেষা মুজিবনগরে বিনোদনের জন্য এতো লোক সমাগম হয়?

মুজিবনগর কমপেক্সে আনসার প্রধান মুনসুর আলীর (পিসি) নেতৃত্বে পাহারায় আছেন ৫৮ জন আনসার সদস্য। ঈদ পরবর্তী অতিরিক্ত লোক সমাগমে যেকোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য এখানে নজরদারি রেখেছে মুজিবনগর থানা পুলিশ। আনসার হেড মুনসুর আলী (পিসি) জানালেন, এপর্যন্ত কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এখানে ঘটেনি।