অর্ধশতাধিক শিক্ষা কর্মকর্তা চিহ্নিত

স্টাফ রিপোর্টার: শ্রম, অর্থ ও সময় বাঁচানোর পাশাপাশি দুর্নীতি কমানোর লক্ষ্যে বিকেন্দ্রীকরণ করে অনলাইনে বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির কার্যক্রমের উদ্যোগ নিয়েছিলো সরকার। কিন্তু কিছু কর্মকর্তার জন্য এ বিকেন্দ্রীকরণে হয়েছে উল্টো ফল। মাঠ প্রশাসনে এ এমপিওভুক্তি নিয়ে বাণিজ্য হয়েছে। শিক্ষকদের হয়রানি করে, ঘুষ নিয়ে বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন কয়েকজন আঞ্চলিক উপপরিচালকসহ বেশ কিছু শিক্ষা কর্মকর্তা। এমন অর্ধশতাধিক অসাধু কর্মকর্তার তালিকা দিয়ে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। আর ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে অবহিত করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালককে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, অভিযুক্তদের মধ্যে শিক্ষা অধিদফতরের ৫ জন আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক, ২০ জনের বেশি জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং ৫০ এর অধিক উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রয়েছেন। এছাড়া মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন স্তরের শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম তালিকায় রয়েছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শিক্ষা অধিদফতরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অনিয়ম, বেপরোয়া ঘুষ-দুর্নীতি এখন ওপেন সিক্রেট। উপ-পরিচালক, কর্মকর্তা ছাড়াও এসব অনিয়মে জড়িত থাকেন অফিস সহকারীসহ অন্যান্য কর্মচারীও। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ অনিয়মের বিষয়টি জেনে গত বছরের জুলাইয়ে এসব দুর্নীতিবাজদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছিলেন অধিদফতরের তত্কালীন মহাপরিচালককে। মন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিক্ষক এমপিওভুক্তিতে অনিয়ম ও জালিয়াতি ধরতে মাঠ পর্যায়ে ২০ টিম গঠন করা হয়েছিলো। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের ৪০ জন কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত এ টিম দেশের ৬৪টি জেলা সরেজমিন পরিদর্শন করার সিদ্ধান্ত নেয়। ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে সার্বিক চিত্র প্রতিবেদন আকারে ১৫ দিনের মধ্যে জমা দেয়ার নির্দেশনা ছিলো। কিন্তু মন্ত্রীর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় শিক্ষা অধিদফতরের একটি সিন্ডিকেট। ফলে কমিটি হলেও কমিটি কাজ করেনি। অভিযোগ ছিলো, ওই সিদ্ধান্ত যাতে বাস্তবায়ন হতে না পারে এ কারণে আঞ্চলিক উপপরিচালকরা জোটবেঁধে মাউশির সিন্ডিকেটকে ঘুষ দিয়েছে। চার থেকে পাঁচ স্তরে অনিয়ম হয় শিক্ষক এমপিওভুক্তিতে।  প্রথমে স্কুল থেকে এপিওভুক্তির জন্য প্রধান শিক্ষককে ম্যানেজ করতে হয় ঘুষ দিয়ে। এরপর উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সেখান থেকে জেলা শিক্ষা অফিসারকে ঘুষ দিতে হয়। উপপরিচালক পর্যন্ত এ অনৈতিক সুবিধা দিতে হয়।  দিলেই অনলাইন ফাইলে সঠিক মন্তব্য করা হয়, নয়তো নানা কারণ দেখিয়ে তা বাতিল করা হয়। জানা গেছে, নতুন এমপিওর ক্ষেত্রে প্রতি স্তরে ঘুষ দিতে হয় ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এতে প্রতি শিক্ষকের এমপিওতে মোট ঘুষ দিতে হয় ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক আদেশে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এমপিওভুক্তির কাজ শিক্ষার মাঠ প্রশাসনের ৯টি আঞ্চলিক কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের হাতে ছেড়ে দেয়। এর পর থেকেই মূলত দুর্নীতির হিড়িক পড়ে যায় আঞ্চলিক অফিসগুলোয়। এমপিওভুক্তির প্রায় প্রতিটি কাজে নানা ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ আসতে থাকে মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।