বিসিবি নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিতে যাচ্ছে জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া পরিষদ

 

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ‘নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন’ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদ। আগামীকাল রাতে সংগঠক পরিষদের স্টিয়ারিং কমিটির সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা থেকে প্রশাসনের ওপর প্রভাব সৃষ্টি করে ভূঁইফোড় ব্যক্তিদের কাউন্সিলর করার অভিযোগ এনেছে সংগঠক পরিষদ। গতকাল শুক্রবার ঢাকা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদের সভাপতি ইউসুফ জামিল বাবু। সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান মহাসচিব আশিকুর রহমান মিকু। এ সময় সংগঠক পরিষদের সহসভাপতি কুতুবউদ্দিন আকসির, মর্তুজা রশিদী দারা ও উপমহাসচিব সরদার সেলিম উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিসিবির নির্বাচন নিয়ে ক্রীড়াঙ্গনে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। কাউন্সিলরশিপ নিয়ে দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলায় নানা অনিয়ম, অনৈতিক পন্থা গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের ক্রীড়াঙ্গন সংকটময় মুহূর্ত পার করছে। এজন্য দায়ী বিসিবির বর্তমান অ্যাডহক কমিটি। গঠনতন্ত্রে রয়েছে কমপক্ষে ৪৫ দিন আগে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কাউন্সিলর চেয়ে চিঠি দিতে হবে। কিন্তু বিসিবি মাত্র আটদিনের সময় দিয়ে চিঠি দিয়েছে, কোথাও নিজস্ব বাহিনীর মাধ্যমে হাতেহাতে, কোথাও অ্যাম্বুলেন্সে, কোথাও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে। আট দিনের মধ্যে দু’দিন ছিলো হরতাল, আর দু’দিন ছিলো শুক্র ও শনিবারের সরকারি ছুটি। ফলশ্র তিতে শেষ মুহূর্তে ফরম পাওয়ায় ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যনির্বাহী কমিটির সভা করতে হয়েছে হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, শেরপুর, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ অনেক জেলায়। অথচ ফরম জমা দেয়ার শেষ দিন ছিলো ২৪ সেপ্টেম্বর। কাউন্সিলর ফরমও নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের ১০টি ফরম নিয়ে গিয়েছিলেন আজম নাসির। বরিশাল বিভাগের চারটি ফরম দেয়া হয়েছিলো আলমগীর খান আলোর কাছে। খুলনা বিভাগেরটি নিয়েছিলেন শেখ সোহেল। রংপুরেরটা আনোয়ারুল এবং রাজশাহীরটা গেছে ইমতিয়াজ আহমেদ কিসলুর কাছে।’ মহাসচিব আশিকুর রহমান মিকু বলেন, ‘আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি বিসিবির নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার কথা। এত কম সময়ের মধ্যে নির্বাচন অতীতে বাংলাদেশের কোনো ফেডারেশনে হয়নি। বিসিবির ১৯৯৮, ২০০০ এবং ২০০৪ সালের নির্বাচনেও ২৮ দিন সময় দেয়া হয়েছিলো। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে কাউন্সিলরদের প্রাথমিক তালিকা টানানো হয়েছে বলে আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। ২৯ সেপ্টেম্বর একই দিনে খসড়া ভোটার তালিকার ওপর আপত্তি ও শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। এটা নজিরবিহীন। কেননা কেউ যদি রংপুর জেলার কাউন্সিলরের ওপর আপত্তি জানান, তাহলে রংপুরের ওই ব্যক্তিকে জানাতে হবে যে, তার বিরুদ্ধে আপত্তি হয়েছে। সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি কীভাবে রংপুর থেকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা আসবেন? এরকম গোজামিল ও নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনী তফসিল বাংলাদেশের কোনো ফেডারেশনের ক্ষেত্রে হয়নি। আপত্তি ও শুনানির জন্য কমপক্ষে তিন দিন সময়ের প্রয়োজন ছিলো। সংবাদ সম্মেনে অভিযোগ করা হয় নড়াইল, জামালপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও কক্সবাজার জেলা এবং খুলনা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে যাদের জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যনির্বাহী সভায় মনোনয়ন দেয়া হয়েছিলো তারা কাউন্সিলর হতে পারেননি। তাদের কাউন্সিলরশিপ ছিনতাই হয়ে গেছে। যাদের অনেকেই সংশ্লিষ্ট জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ পরিষদ কিংবা কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য। মেহেরপুরের বিসিবির কাউন্সিলরশিপ ফরম জেলা ক্রীড়া সংস্থায় এখন পর্যন্ত পৌঁছেনি। পছন্দের ব্যক্তি না পাওয়ায় বিসিবির ফরম নিজেদের কাছে রেখে দিয়েছেন অ্যাডহক কমিটির সদস্যরা। সংগঠক পরিষদের সভাপতি ইউসুফ জামিল বাবু বলেন, এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদে আমাদের করণীয় কী হবে, তা স্টিয়ারিং কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেব। দেশের ক্রিকেটকে এ রাহুর গ্রাস থেকে বাঁচানোর জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।