হাইকোর্ট নির্দেশিত কমিটির রিপোর্ট শিগগিরই পেশ

স্টাফ রিপোর্টার: অবৈধভাবে গড়ে ওঠা সাভারের আটতলা বিশিষ্ট রানাপ্লাজা ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার জন্য হাইকোর্ট নির্দেশিত কমিটির রিপোর্ট সম্পূর্ণ হয়েছে। খুব শিগগিরই তা হাইকোর্টে পেশ করা হবে বলে জানিয়েছেন কমিটির প্রধান অধ্যাপক এম এম আকাশ। এই রিপোর্ট অনুযায়ী মৃত ও দুইঅঙ্গ হারানো শ্রমিকের পরিবার পাবে ১৫ লাখ টাকা, এক অঙ্গ হারানো শ্রমিক পাবে সাড়ে ৭ লাখ টাকা এবং কম আঘাতপ্রাপ্ত ও মানসিক ক্ষতিগ্রস্তরা দেড় লাখ টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা পাবে। ক্ষতির পরিমাণ বিচার করে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার একটি ধাপ রাখা হয়েছে। উদ্ধার কাজে নিহতদের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিম্নতম ১৫ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণের বিধান রাখা হয়েছে। সাথে তাদের সকলের প্রয়োজনীয় চিকিত্সা সহযোগিতাও থাকবে।

এদিকে রাজনৈতিক কারণে সহযোগিতার কার্যক্রম ধীর গতি পাচ্ছে বলে শ্রমিকদের দাবি। সহযোগিতা কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রতার যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক। শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ও মানবাধিকার কর্মীরা সরকার ও বিজেএমইএ’র উদাসীনতাকে দায়ী করছেন সহযোগিতার ধীরগতির জন্য। শ্রম মন্ত্রণালয় বলছে, সাহায্য অব্যাহত আছে। নতুন আরও সাহায্যের তালিকা তৈরি হচ্ছে।

এ বিষয়ে অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, শ্রম মন্ত্রণালয়, বিজিএমইএ এবং আইএলও থেকে একজন করে সদস্য নিয়ে যে সাব-কমিটি গঠিত হয়েছিল তার পর্যবেক্ষণে প্রতিবেদন তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। দুই একদিনের মধ্যে রিপোর্ট হাইকোর্টে পেশ করা হবে। তখন সাহায্যের বিষয়টি আইন হয়ে যাবে। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা সাভারের আটতলা বিশিষ্ট রানা প্লাজা গত ২৪ এপ্রিল ধসে পড়ে। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় এগারশ ২৯ জন মানুষ প্রাণ হারান।

এ বিষয়ে রেডিমেড গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি লাবলী ইয়াসমিন বলেন, তাজরিন গার্মেন্টস দুর্ঘটনায় ১১২ জন নিহত হওয়ার পর আমরা মালিকপক্ষ ও সরকারের সাথে শ্রমিকদের জীবন বীমা দেড় লাখ টাকা করার দাবি নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা করি। যখন রানা প্লাজা দুর্ঘটনা ঘটে তখন সরকার, বিজিএমইএ ও বিদেশি ক্রেতারাও আমাদের পূর্ণ সহযোগিতা করবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু বিষয়টি খুবই দুঃখজনক যে, হাতেগোনা গুটিকয়েক শ্রমিক ছাড়া তেমন করে কেউ আর্থিক সাহায্য ও চিকিত্সা পায়নি।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের জেনারেল সেক্রেটারি রুহুল আমিন বলেন, রানাপ্লাজা ধসের পর নিহত ব্যক্তিদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের সহায়তায় দেশি ও বিদেশি ক্রেতাদের সহযোগিতায় বড় অঙ্কের টাকার তহবিল গঠন হয়। প্রধানমন্ত্রী ও সরকারসহ বিজিএমইএ সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্তরা সাহায্য পায়নি।

কর্মজীবী নারীর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক শিরিন আক্তার বলেন, আমার পক্ষ থেকে শারীরিক চিকিত্সার পাশাপাশি মানসিক চিকিত্সার আবেদন ছিল। নির্বাচন ও রাজৈনতিক কারণে বিষয়টি কিছুটা পেছনে পড়ে যায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই শ্রমিকদের উদাসীনতা দেখানোর কোন অজুহাত দেয়া চলবে না। এখন শ্রমিক সহযোগিতার বিষয় আবার মনিটরিং করা হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। বিজিএমইএ’র সাবেক পেসিডেন্ট আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, বিজিএমইএ প্রতিশ্রুতির বেশি সহযোগিতা করছে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব মিকাইল সিপার বলেন, রানাপ্লাজায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ-তহবিল থেকে এ যাবত্ ৮৮৩ জনকে বিভিন্ন রকম সহযোগিতা করা হয়েছে। আরও ১৩৮ জনের নামের তালিকা করা হয়েছে। অতিশীঘ্রই তাদের সহযোগিতা দেয়া হবে। আমার জানা মতে, এযাবত্ ২১ কোটি ও ৯ কোটি টাকার সহযোগিতা করা হয়েছে। হাইকোর্ট নির্দেশিত কমিটির নির্দেশ পেলে সংশ্লিষ্টদের সেই অনুযায়ী সহযোগিতা কার্যক্রম চলবে বলেও সচিব জানান। তবে শ্রমিক নেতা রুহুল আমিন বলেন, ১৯৯০ সাল থেকে ৫২৬টি দুর্ঘটনায় এযাবত্ প্রায় তিন হাজারের অধিক শ্রমিক আহত ও প্রায় দুই হাজার শ্রমিক নিহত হয়। অনেক শ্রমিকই দুঃসহ জীবন নিয়ে বাঁচার শেষ ইচ্ছাটুকু হারিয়ে ফেলতে বসেছেন, যার মূল কারণ সহযোগিতার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নানারকমের উদাসীনতা।