হট্টগোলের মধ্যদিয়ে শেষ হলো একাডেমিক কাউন্সিলের সভা :ভিসির পলায়ন

 

ইবি প্রতিনিধি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) একাডেমিক কাউন্সিলের (এসি) সভায় ভিসির একক সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে চরম হট্টগোলের সৃষ্টি হয়েছে। সভায় উপস্থিত অধিকাংশ সদস্যের মতামতকে উপেক্ষা করে ভিসি একটি প্রস্তাব পাসের ঘোষণা দেয়ায় এ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। হট্টগোলের এক পর্যায়ে সভা কক্ষের পেছনের দরজা দিয়ে ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকার ও প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. শাহিনুর রহমান পালিয়ে যান বলে জানা গেছে। এদিকে ভিসির আচরণকে নৈতিকতা ও আইন বিরোধী আখ্যায়িত করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষকরা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলন থেকে শিক্ষকরা ভিসি ও প্রো-ভিসির পদত্যাগ দাবি করেন। একই সাথে তারা পদত্যাগ না করা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কোনো প্রকার সহযোগিতা না করার ঘোষণা দিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রোববার সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৫তম একাডেমিক কাউন্সিলের সভা প্রশাসন ভবনের কনফারেন্স রুমে ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকারের সভাপতিত্বে শুরু হয়। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রফেসর, সকল ডিন ও সভাপতি অংশগ্রহণ করেন। সভার শুরু থেকে এসির কর্মসূচির ২নং প্রস্তাব (অর্গানোগ্রাম বিষয়ক) বিষয়ে আলোচনা পর্যালোচনা চলতে থাকে। সভার ২নং প্রস্তাবটি ছিলো ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে জনবল বিষয়ে অর্গানোগ্রাম তৈরি’ বিষয়ক। মধ্যাহ্নভোজের বিরতি শেষে পুনরায় বৈঠক শুরু হলে হঠাৎ করেই ভিসি সদস্যদের মতামত না নিয়ে প্রস্তাবটি পাস হলো বলে ঘোষণা দেন। অপ্রত্যাশিত এ ঘোষণায় হতচকিত এসির অধিকাংশ সদস্য প্রতিবাদ জানান। এসময় ভিসির অনুগত অল্পকিছু সংখ্যক সদস্য প্রস্তাব পাসের পক্ষ নিয়ে হইচই শুরু করেন। এতে সদস্যদের মাঝে চরম বিশৃঙ্খলা শুরু হলে ভিসি বৈঠক শেষ কিংবা মুলতবি ঘোষণা না দিয়েই অধিবেশন কক্ষের পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যান। এ ঘটনার প্রতিবাদে এসির অধিকাংশ সদস্য সভা কক্ষে অবস্থান নিয়ে এক ঘন্টা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন।

এবিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. তোজাম্মেল হোসেন বলেন-‘একাডেমিক কাউন্সিলের দু তৃতীয়াংশেরও বেশি সদস্য অপূর্ণাঙ্গ অর্গানোগ্রাম পাসের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীতের সকল প্রথা ও আইন ভঙ্গ করে হঠাৎ করেই প্রস্তাবটি পাস হয়ে গেছে বলে ঘোষণা দেয়। আমরা এর প্রতিবাদ করলে তিনি সভা শেষ কিংবা মূলতবি না করেই পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যান।

এদিকে একাডেমিক কাউন্সিলের নীতিমালা ভঙ্গ ও ভিসির স্বৈরাচারী আচরণের প্রতিবাদ জানিয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলন থেকে তারা নজিরবিহীন কর্মকাণ্ডের জন্য ভিসি ও প্রো-ভিসির পদত্যাগ দাবি করেন। একই সাথে সোমবার শিক্ষক সংগঠন জিয়া পরিষদ ও গ্রীন ফোরামের বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। বৈঠক থেকে ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকার ও প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. শাহিনুর রহমানের পদত্যাগের দাবিতে কর্মবিরতি ও প্রশাসনের কোনো কাজে সহযোগিতা না করার ঘোষণা আসবে বলে জানা গেছে।

এবিষয়ে ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকারের বক্তব্য জানার জন্য তার মোবাইলে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সমর্থক শিক্ষকরা একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় তারা প্রশাসনের যে কোনো প্রস্তাবে ভেটো দেন। একটি যৌক্তিক বিষয়ের তারা বিরোধিতা করায় বৈঠকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।

Leave a comment