সনাতন পদ্ধতিতে পাটজাগের হিড়িক

রিবনার মেশিনের সুফল পাটচাষিদের মাঝে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি

 

তাছির আহমেদ: দামুড়হুদা উপজেলায় পাটচাষিদের মাঝে সনাতন পদ্ধতিতে পাটজাগ দেয়ার হিড়িক কমেনি। অল্প খরচ ও স্বল্প উপায়ে খাল-বিল, ডোবা-নালায় সনাতন পদ্ধতিতে পাটজাগ দিতে এখনও স্বাছন্দবোধ করছে এলাকার পাটচাষিরা। রিবনার মেশিন দিয়ে আধুনিক উপায়ে পাটজাগের সাড়া জাগাতে কৃষি বিভাগের মাঠপর্যায়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ ও নিয়মিত তদারকির পরেও পাট পঁচানো রিবনার মেশিনের সুফল পাটচাষিদের মাঝে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি। ফলে মুখ থুবড়ে পড়ছে কৃষি বিভাগের এ খাতের পরিকল্পনাটি।

উপজেলা কৃষি অফিসসূত্রে জানা গেছে, চলতি পাটচাষ মরসুমে উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় সাত হাজার দুশ হেক্টর জমিতে পাটচাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেই সাথে ৯০ হাজার বেল পাট উৎপাদনের আশা করছে কৃষি অফিস। বীজ ব্যবসায়ী আজিজুল হক জানান, এবার পাট মরসুম শুরুর আগেই ভারতীয় রকমারি পদের ও নামের পাটবীজ মজুদ ছিলো। তবে গতবারের চেয়ে এবার বীজের দাম অনেক কম ছিলো। বিভিন্ন নামের এক কেজি পাটবীজের দাম একশ টাকা দরে বিক্রি করেছি। চৈত্র মাসে বৃষ্টি হলে পাটচাষিদের মাঝে বীজের চাহিদা বেশি থাকে। এবার চৈত্রে বৃষ্টি না হওয়ায় অনেকে পাট বুনতে দেরি করেছে।

উপজেলার নতুন বাস্তপুর গ্রামের পাটচাষি শরিফুল আলম বলেন, দোয়ার মাঠে চৈত্র মাসের পনের দিন হলে দু বিঘা জমিতে সেচ দিয়ে আগাম পাট বুনানি করেছি। পাটের চারায় সেচ দেয়ার ফলে পাটের চারা ও গাছান ভালো হয়েছিলো। পাটের আগাছা পরিষ্কার করতে পয়লা বোশেখে মাঠে নেমে কাজ শুরু করি। গতবার সেচ দিয়ে আগাম পাট বুনানি করে আগাম পাট বাজার জাত করে ভালো দাম পেয়েছি। এবার আমার দেখাদেখি আমিনুল, আরিফুলসহ অনেকেই আমার মতো সেচ দিয়ে আগাম পাট বুনানি করেছে। বাজারদরও আশানুরূপ। পাটের ফলন ভালো হয়েছে। সবার মতো আমিও সনাতন পদ্ধিতিতে পাটজাগ দিয়েছি।

একই গ্রামের পাটচাষি আশরাফুল আলম বলেন, খাল-বিল, ডোবা-নালা, রাস্তার ধারের খাদে যে যেখানেই সুযোগ পাচ্ছে সে সেখানেই সনাতন পদ্ধতিতে পাটজাগ দিচ্ছে। রিবন মেশিনের মাধ্যমে সহজেই কাঁচা পাটের আঁশ ছাড়িয়ে পাটের জমিতেই গর্ত করে তাতে পানি দিয়ে জাগ দিতে হয়। কিন্তু পাটের জমিতে এভাবে পাটজাগ দিয়ে রাতদিন পাহারা না দিলে পাট চুরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কাঁচা পাটের আঁশ ছাড়ানো, গর্ত কাটা, গর্তে পলিথিন দিয়ে পানি দেয়া, রাত জেগে পাহারা দেয়া সব মিলিয়ে খরচের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় সনাতন পদ্ধতিতে পাট জাগ দিতে বেশি আগ্রহী হচ্ছে চাষিরা। অপরদিকে জলাবদ্ধ পানিতে স্বল্প পরিসরে পাট পঁচানোর ফলে পানি পচে দুর্গন্ধ হয়ে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, বাড়ছে মশা মাছির উপদ্রব।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *