ফেসবুকে বিয়ে বন্ধ হলো শম্পার

 

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের ফেসবুক পেজ ও স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের পেশাগত দায়িত্বের দায়বদ্ধতা থেকে ফেসবুকের একটি পোস্ট বদলে দিলো শিশু শম্পার জীবন। শম্পা খাতুন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া গ্রামের আলাউদ্দিন আহ্মেদের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে।

গতকাল শুক্রবার তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। অবশেষে গতকাল শুক্রবার সকালে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন ও কয়া ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলাম স্বপনের হস্তক্ষেপে বন্ধ হয়েছে শম্পার বাল্যবিয়ে। বাল্যবিয়ে নামক এক সামাজিক ব্যধি থেকে মুক্তি পেলো শম্পা। এদিকে শম্পার বিয়ে বন্ধ হওয়ায় তার সহপাঠী ও শিক্ষকরা খুশি হয়েছেন। সেই সাথে শিশু শম্পা আবারও বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পেলো। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী দীপু মালিক কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেন। ওই পোস্টটিতে তিনি লিখেন, কুমারখালীতে শম্পা নামে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর আজ (বৃহস্পতিবার) গায়ে হলুদ। আগামীকাল (শুক্রবার) বিয়ে অনুষ্ঠিত হবে। সে কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বানিয়াপাড়া এলাকার আলাউদ্দিনের মেয়ে। শম্পা সুলতানপুর মাহাতাবিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে।

সূত্রে জানা যায়, একই ওয়ার্ডের ফজু মাঝির ছেলে নাজমুলের সাথে গতকাল শুক্রবার বিয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। যে বয়সে বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, সেই বয়সে শম্পার বাল্যবিয়ে হচ্ছে এমন কথা ভাবতেই পারছেন না শম্পা ও তার সহপাঠীরা। এসব নিয়ে তাদের পরিবারকে অনেক বোঝানো হলেও তারা বিয়ের ব্যাপারে কঠিন অবস্থায় রয়েছেন বলে জানা গেছে। আশা করি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গুরুত্ব সহকারে দেখবেন।

ফেসবুকের পোস্টটি কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেনের নজরে আসে। তাৎক্ষণিক তিনি কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহেলা আক্তারকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। শুক্রবার সকাল থেকে গণমাধ্যমকর্মীরা পেশাগত দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে শম্পার বিয়ের ব্যাপারে খোঁজ নেন।

এ নিয়ে কুমারখালী থানার ওসি জিয়াউল ইসলামকে ফোন দেয়া হলে তিনি এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে তাকে কিছু জানানো হয়নি বলে জানান। তবে তিনি তাৎক্ষণিক তথ্য নিয়ে বিয়ে বাড়িতে পুলিশ পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

এদিকে বিষয়টি আগের দিন গণমাধ্যমকর্মীরা কয়া ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলাম স্বপনকে অবগত করলে তিনি বলেন, কোনো অবস্থাতেই আমার এলাকায় বাল্যবিয়ে হতে দেয়া হবে না। এরই ভিত্তিতে গতকাল শুক্রবার সকালে তিনি ছেলেমেয়ে উভয় পরিবারের অভিভাবকদেরকে বুঝিয়ে নিজ উদ্যোগে এ বাল্যবিয়ে বন্ধ করেন।

ইউপি চেয়ারম্যান আরও জানান, শুক্রবার সকালে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয়পক্ষকে নিষেধ করায় তারা এই বিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন থেকে আমাকে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। তিনি আরো জানান, ভবিষ্যতে আমার ইউনিয়নে কোনোমতেই বাল্যবিয়ে হতে দেয়া হবে না। এ ব্যাপারে কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহেলা আক্তারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তা সম্ভব হয়নি।