কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন ও দর্শনা রেলবাজার দোকান মালিক সমিতির নির্বাচন ৪ দিন আগে-পিছে

প্রার্থী ও সমর্থকদের পদচারণায় মুখরিত শহর : পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে এলাকা

 

দর্শনা অফিস: কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন ও দর্শনা রেলবাজার দোকান মালিক সমিতির নির্বাচন মাত্র ৪ দিন আগে ও পিছে। এক সপ্তার ব্যবধানে দুটি নির্বাচন যেন চমকপ্রদ অবস্থায় পরিণত হয়েছে। প্রার্থীদের পক্ষে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা, মিটিং, মিছিল ও ভোট প্রার্থনা অবিরাম চলছে। কেরুজ আঙিনা ও রেলবাজার এলাকা পোস্টার এবং ব্যানারে ব্যানারে মুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠছে গোটা দর্শনা। দর্শনা রেলবাজার দোকান মালিক সমিতি ত্রিবার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৬ জানুয়ারি। সমিতির নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদ বেশ জোরেসোরে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। দর্শনা রেলবাজারের বয়স সঠিকভাবে জানা না গেলেও এ বাজার দীর্ঘদিন ছিলো অভিভাবকহীন। গত ১৫ বছর আগে বাজার পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। তারপর টানা ১ যুগ পেরিয়ে গেলেও আর কোনো নির্বাচন ও বা কমিটি গঠন হয়নি। বছর তিনেক আগে বেশ জাক-জমক পরিবেশে নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত কমিটি দায়িত্ব পালন করেছে। সে কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় ফের ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ত্রিবার্ষিক নির্বাচন। দোকান মালিক সমিতির ১৩টি পদের মধ্যে ৫টি পদেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। বাকি ৮ পদে বিপরীতে ২২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মাঠে রয়েছেন। ২২ জন প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে বাজার এলাকা।
[ads1]

কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ক্যাশিয়ার পদে মোখলেসুর রহমান, ৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪নং ওয়ার্ডে জামাল উদ্দিন, ৫নং ওয়ার্ডে মোজাম্মেল হক বাবু, ৬নং ওয়ার্ডে হাফিজুর রহমান ও ৭ হাবীব শিকদার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। এ ৫ জনই পূনরায় পদ পেলেন। এবারের নির্বাচনে ৮টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ভোটযুদ্ধে মাঠে রয়েছেন, সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন (ছাতা) ও রেজাউল হক (বাইসাইকেল), সহসভাপতি পদে বর্তমান সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন রতন (বালতি) ও নুরুল ইসলাম নুরু (আনারস), সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাবির হোসেন মিকা (হাতপাখা), জাহাঙ্গীর আলম চঞ্চল (চেয়ার) ও সেলিম মেহমুদ লিটন (মই), যুগ্মসম্পাদক পদে আব্দুল কাইয়ুম (কলস), আবুল বাসার (চায়ের কেটলি), আরিফুর রহমান বাবু (তালাচাবি), রিফাত খান রবি (প্রজাপতি) শামসুল ইসলাম (মাছ), হারুন অর রশিদ (মোরগ), দফতর সম্পাদক পদে বিল্লাল হোসেন (হারিকেন) ও মিজানুর রহমান (দেয়ালঘড়ি), ১ নং ওয়ার্ড সদস্য পদে আক্তারুল জোয়ার্দ্দার (বৈদ্যুতিক পাখা), ফরজ আলী (মোটরসাইকেল) ও শরীফ উদ্দিন (ডাব), ২নং ওয়ার্ডে আব্দুল আলীম (টেবিল) ও জাহিদুল ইসলাম (ফুটবল) ও ৩ নং ওয়ার্ড আ. করিম (আম) এবং আ. মোমিন (চশমা) প্রতীকে।

গত নির্বাচনের তুলনায় এবারের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা বেড়েছে। এবারের নির্বাচনে ৯শ ৯৩ জন ভোটর গোপন ব্যালোটের মাধ্যমে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই বিশ্ব ইজতেমায় গেছেন। ইজতেমা শেষে প্রার্থীরা ফিরে হয়তো তারা প্রচারণা আরো বাড়িয়ে দিতে পারেন।

এদিকে জেলার বেশ আলোচনার ঝড় তোলে কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দ্বিবার্ষিক নির্বাচন। এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০ জানুয়ারি। ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এশিয়া মহাদেশের ২য় সর্ববৃহত্তম ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান চুয়াডাঙ্গা জেলার অন্যতম অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি ঐতিহ্যবাহী কেরুজ চিনিকলটি। প্রতিষ্ঠার পর ১৯৫৪ সালে প্রথম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচনে আতিয়ার রহমান সভাপতি ও আমজাদ হোসেন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর থেকে নির্বাচনের সঠিক হিসাব কেউ দিতে না পরলেও স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে ফের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সে হিসাব মতে আগামী নির্বাচন হবে ইউনিয়নের ২২তম নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থী, সমর্থন ও ভোটারদের দৌঁড়ঝাঁপ যেন বেড়েছে। পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। দোয়া ও সমর্থন চাওয়ার হিড়িক পড়ে গেছে প্রার্থীদের মধ্যে। প্রায় প্রতিদিনই গ্রহণ করছেন হরেক রকমের কৌশল। একজন ভোটারকে দলে ভেড়াতে যে সমস্ত কারিশমা প্রয়োজন ঠিক তাই করা হচ্ছে প্রয়োগ। মিটিং, মিছিল, সভা-সমাবেশ, মোটরসাইকেল শোডাউনে সরগম অবস্থায় পরিণত হয়েছে কেরুজ আঙিনা। কেরুজ চিনিকলের হিসাব, প্রশাসন ভাণ্ডার, স্বাস্থ্যবিধান, ইমারত, সেনিটেশন, হাসপাতাল, চোলাই মদ কারখানা, ডিস্টিলারি, বিদ্যুত ও কারখানা, প্রকৌশলী, পরিবহন, ইক্ষু উন্নয়ন, ইক্ষু সংগ্রহ বিভাগসহ বাণিজ্যিক খামারগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়ে সর্বমোট ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ২শ। আগামী ১০ জানুয়ারি চূড়ান্ত খোটার তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। এ কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) মোশারফ হোসেন। কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রথম দিকে ৫ জন প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত ৪ জন রয়েছেন ভোটযুদ্ধে। সভাপতি পদে যারা মাঠে রয়েছেন তারা হলেন- তৈয়ব সংগঠনের কর্ণধর তৈয়ব আলী, সূর্যসেনা শ্রমজীবী সংগঠনের সভাপতি, ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি হাফিজুল ইসলাম হাফিজ, মোস্তাফিজুর রহমান সংগঠনের কর্ণধর মোস্তাফিজুর রহমান। এরই মধ্যে ফারুক আহম্মেদ নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে তৈয়ব সংগঠনকে সমর্থন করেছেন। ফারুক আহম্মেদ তৈয়ব সংগঠনের পক্ষ থেকে সহসভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কয়েকবার নির্বাচিত সভাপতি আজিজুল হক অবসর গ্রহণ করায় এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছেন না। তবে তার ছেলে ফিরোজ আহম্মেদ সবুজ সংগঠনের হাল ধরেছেন। ফলে ফিরোজ আহম্মেদ সবুজ সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রথম দিকে ৩ জন প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত আব্দুর রব বাবুকে মাঠে দেখা যাচ্ছে না। সম্প্রতি আ. রব বাবু সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সংগঠনের আত্মপ্রকাশ করলেও শেষপর্যন্ত তিনি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। ফলে বর্তমানে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ভোটযুদ্ধে মাঠে রয়েছেন- বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রিন্স ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান। ইউনিয়নের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ২৫টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মাঠে রয়েছেন প্রায় শতাধিক প্রার্থী। দর্শনা রেলবাজার দোকান মালিক সমিতি ও কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচনের পর হয়তো অনেকটাই শান্ত শহরে পরিণত হবে দর্শনা।