৮ জন কামড়ের শিকার : গ্রামজুড়ে আতঙ্ক এন্টিস্নেক ভেনম সংকট
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে সাপের কামড়ে মা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে এন্টিস্নেক ভেনম না থাকায় এ মৃত্যুর কারণ বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ভিমরুল্লা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গ্রামে আরও ৮ নারী-পুরুষ সাপের কামড়ের শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে গ্রামজুড়ে সাপ আতংক ছড়িয়ে পড়েছে।
জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ভেমরুল্লা পুরাতন পাড়ার নজরুল ইসলামের ছেলে সজিব (২১) সোমবার রাতে নিজ ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত ৩টার দিকে বিষধর সাপে তার পিঠে কামড় দেয়। রাতে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় এ রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় এন্টিস্নেক ভেনম নেই। পরিবারের সদস্যরা পাঁচকমলাপুর এক কবিরাজের কাছে নেন। সেখানে ঝাঁড়ফুঁক করে কাজ না হওয়ায় আবার তাকে সদর হাসপাতালে ফিরিয়ে নেয়া হয়। এরপর অনেক কষ্টে হাসপাতাল এলাকার একটি ওষুধের দোকানে মেলে এন্টিস্নেক ভেনম ইনজেকশনের খোঁজ। কিন্তু দাম অনেক বেশি। প্রতি অ্যাম্পুলের দাম ১ হাজার টাকা। সজিবের জন্য কেনা হয় ১০ অ্যাম্পুল। কিন্তু ততোক্ষণে সজিব প্রায় মৃত। তারপরও তার দেহে এন্টিস্নেক ভেনম ইনজেকশন পুশ করা হয়। তাতেও সজিবকে বাঁচানো যায়নি। চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করার পর তাকে নেয়া বাড়িতে। বাড়িতে গিয়ে কিছুক্ষণ পর সজিবের দেহ নড়তে ভেবে অনেকেই বলেন সজিব বেঁচে আছে। খবর দেয়া হয় পদ্মবিলা ইউনিয়নের খেজুরা গ্রামের কবিরাজ চতুর আলীকে। তড়িঘড়ি করে এসে তিনি জানান, ওকে মনসা দেবী কামড়িয়েছে। তাকে বাঁচানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, যে সাপে কামড়িয়েছে, তার কোনো ছায়া নেই। এটি জিন সাপ। এ সময় অনেকে বলেন, সাপটি যদি জিন হয়, তাহলে এলাকাবাসী ধরলো কি করে আর মেরে ফেললো কি করে। কবিরাজ চতুর আলী বলেন, আমার কাছে খুলনা বাগেরহাট থেকে আনা মধুলতা, মনিরাজ, নাগরাজ যে সাপই কামড়াক না কেন। আমার কাছে ওষুধ খেলে সব বিষ পানি হয়ে যাবে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে সজিব মারা যান।
গত ১২ সেপ্টেম্বর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় সজিবের মা চম্পা ওরফে পান্তি খাতুনের পায়ে সাপে কামড়ায়। এরপর নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। চুয়াডাঙ্গায় এন্টিস্নেক ভেনম না থাকায় তাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানেও এন্টিস্নেক ভেনম না পাওয়ায় তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে ঈদের দিন সকালে তিনি মারা যান। গত সাত দিনে গ্রামের আটজনকে সাপের কামড়ের শিকার হয়েছেন। আক্রান্তরা হলেন- মুক্তি খাতুন, আজিজুল হক, রত্না খাতুন, শাহানাজ, রহিম আলী, রবজেল, কলম মিয়া ও মরিয়ম খাতুন। গ্রামের হাসান আলী, শহিদুল মোল্লা ও রশিদা বেগম জানান, স্বাস্থ্য বিভাগের অবহেলার কারণে মা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে। তারা এন্টিস্নেক ভেনম সময়মতো রোগীর শরীরে দিতে পারলে মা ও ছেলের এ পরিণতি হতো না।
এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা. ছিদ্দিকুর রহমান জানান, এন্টিস্নেক ভেনম সরকারিভাবে সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তাই সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে আমরা লিখিতভাবে জানিয়েছি। তিনি বলেন, গত ২০ আগস্ট থেকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে এন্টিস্নেক ভেনম ইনজেকশন শেষ হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, শুধু চুয়াডাঙ্গাতেই নয়, দেশের কোথাও বর্তমানে সরকারিভাবে সরবরাহ নেই। তবে আশা করি, কয়েকদিনের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হবে।