বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে পুনর্গঠন শুরু : চুয়াডাঙ্গায় অনিশ্চয়তা

 

 

স্টাফ রিপোর্টার: দীর্ঘ এক বছর পর আবারো তৃণমূল পুনর্গঠন শুরু করেছে বিএনপি। কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণার পর দলটির মনোযোগ এখন জেলা-মহানগরের সাংগঠনিক পুনর্গঠনে। মাঠপর্যায়ের সাংগঠনিক চিত্র নিয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি বিভাগের সাংগঠনিক রিপোর্ট জমা পড়েছে। বাকি বিভাগগুলোকেও খুব শিগগিরই জমা দিতে তাগাদা দেয়া হয়েছে। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তৃণমূল পুনর্গঠনে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হবে। হজে যাওয়ার আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য দলের মহাসচিবকে নির্দেশনা দিয়েছেন। দলীয় সূত্র জানায়, এ অবধি যে চিত্র এসেছে তাতে মাঠ বিএনপির অবস্থা এলোমেলো।

এরই মধ্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, দলের যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে দুই দফা বৈঠক করেছেন। তৃণমূল পুনর্গঠনে মির্জা ফখরুলের তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রে প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান।

জানা গেছে, বিএনপির ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে গত এক বছরে বিভিন্ন সময়ে ঢাকাসহ ১০ জেলায় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সর্বশেষ দেয়া হয়েছে ঢাকা জেলা কমিটি। কাউন্সিলের মাধ্যমে বাকি ৬৫টি জেলায় কমিটি হওয়ার কথা। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বয়াক কমিটি গঠন করা হলেও নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন সম্পন্ন করা তো দূরের কথা চরম সমন্বয়হীনতা সর্বস্তরে। বহুভাগে বিভক্ত হওয়ার কারণে মাঠ পর্যায়ের সমর্থকদের মধ্যেও ক্ষোভ বিরক্তি বেড়েই চলেছে। বিএনপির পাশাপাশি অঙ্গ-সংগঠনগুলোও ঢেলে সাজানোর কথা। অথচ যুবদলেরও তাথৈ অবস্থা। অথচ আগামী বছরের মাঝামাঝিতে সর্বশক্তি দিয়ে আন্দোলনের মাঠে নামবে বিএনপি। সূত্র জানায়, ঈদের আগেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পর্যায়ের বৈঠকে তৃণমূল পুনর্গঠনের কৌশল নির্ধারণ করা হয়। একইভাবে একাধিক পদ ছাড়তে জেলা নেতাদের কাছে কেন্দ্র থেকে কঠোর বার্তা পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। স্বেচ্ছায় একাধিক পদ না ছাড়লে কেন্দ্র থেকেই চিঠির মাধ্যমে এক পদ নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। এরই মধ্যে ৫৬ জন নেতার একাধিক পদে থাকার বিষয়টি চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের কেউ কেউ জেলা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও থানা সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক থেকে শুরু করে ভাইস চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টা পর্যায়ের নেতারা।

ইতোমধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মো. শাহজাহান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, আমান উল্লাহ আমান, অ্যাডভোকেট আহমদ  আযম খান, শিরিন সুলতানা, আসফিয়া পাপিয়া, ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ ১২ জন নেতা একাধিক পদ ছেড়ে দিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকার বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করে জেলা কমিটির সভাপতি থাকার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। তবে কেন্দ্রীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাই জেলার পদ ছাড়তে চান না। তাদের মতে, জেলার পদ ছেড়ে দিলে নেতৃত্ব হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। ভবিষ্যতে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনও ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। দলের গুলশান অফিসের একটি সূত্র জানায়, বেগম জিয়ার সাথে যেসব নেতা পদ নিয়ে কথা বলতে গেছেন, তাদের সবাইকে জেলার পদ ছেড়ে দেয়ার কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

বিএনপি সূত্র জানায়, সমপ্রতি দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জেলা ও মহানগরে সাংগঠনিক কমিটির আকার নির্ধারণ করা হয়। প্রতিটি ওয়ার্ডে ন্যূনতম ১০০ জন করে সদস্য করার নির্দেশনা দেয়া হয়। সিদ্ধান্ত হয়, ওয়ার্ড বা ইউনিয়ন কমিটি হবে ৫১ সদস্যের। থানা বা উপজেলা পর্যায়ের কমিটি হবে ৭১ সদস্যের। জেলা বা মহানগর কমিটি হবে ১৫১ সদস্যের। এর মধ্যে ৭৪টি হবে কর্মকর্তা পর্যায়ের পদ, বাকি ৭৬টি সদস্য পদ। অবশ্য জেলা-মহানগর ১৭১ সদস্যের কমিটি করার ব্যাপারেও স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। স্থায়ী কমিটির নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তৃণমূলে কমিটি গঠন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সব কমিটিই কাউন্সিলের মাধ্যমে করতেও বলা হয়। এদিকে একজন সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, বিএনপির সাবেক এমপি-মন্ত্রী, উপজেলা-পৌরসভার নির্বাচিত প্রতিনিধিরাও পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকবেন। জেলার সাংগঠনিক ত্রুটি-বিচ্যুতি নির্ধারণের পাশাপাশি পরিস্থিতি উত্তরণে করণীয় নিয়ে তারা সুপারিশ করবেন কেন্দ্রে। একইভাবে বিএনপির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর রিপোর্ট দিতেও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ময়মনসিংহ বিভাগের বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, আমার বিভাগের সাংগঠনিক রিপোর্ট কেন্দ্রে জমা দিয়েছি। কিশোরগঞ্জ ও শেরপুরের অবস্থা ভালো আছে। তাছাড়া ময়মনসিংহ বিভাগ হওয়ায় দক্ষিণ-উত্তরের বাইরেও এবার মহানগরের আলাদা কমিটি করতে হবে।

বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন জানান, কেন্দ্রের নির্দেশনা পাওয়ার পর আমি আমার বিভাগের সাংগঠনিক রিপোর্ট জমা দিয়েছি। আমার বিভাগের আট জেলার মধ্যে ঝালকাঠি, পিরোজপুর ছাড়া বাকিগুলোতে দ্রুত কমিটি করার বিকল্প নেই। এই দুই জেলায় যেকোনো সময় সম্মেলন করা সম্ভব। বিলকিস বলেন, শুধু মূল দল নয়, বেশিরভাগ জায়গায় অঙ্গ সংগঠনের কমিটির অবস্থাও নাজুক। সেসব বিষয়ও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সাংগঠনিক চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিভাগের গুম, খুন, আহত, নিহত ও গ্রেফতার হওয়া নেতাদের তালিকা দ্রুত কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতোমধ্যে সৌদি আরবে হজ উপলক্ষে একত্র হয়েছেন। সেখানেই তারা দলের পরবর্তী করণীয় নির্ধারণসহ কর্মসূচি চূড়ান্ত করবেন। খালেদা জিয়া হজ পালন শেষে ২১ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরছেন। ফিরে পুরোদমে দল গঠনে মনোযোগ দিবেন। তিনি জনসংযোগেও বের হতে পারেন।

Leave a comment