কামরুজ্জামান বেল্টু: গাজীর গান দেয়ার নামে গালগল্পে বাণিজ্যের ফাঁদ পাততে পরী রুমার আছর হয়েছে বলে নাটক শুরু করেছে আলমডাঙ্গা ফরিদপুরের রুবেল (২৩)। গতকাল তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মলত্যাগ করতে না পেরে পেটের যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে বলে জানালেও রুবেলের নাটকীয় আচরণ চিকিৎসকদের হতবাক করে। দানা বাধে নানা প্রশ্ন।
পরিবারের সদস্যদের অবশ্য দাবি- আগে ওই জিন-পরী ভর করতো রুবেলের পিতা আব্দুস সাত্তারের ওপর। এ বছর গাজীর গান না দিয়ে বাঁশগান দেয়ার কারণে পিতার বদলে ছেলের রুবেলের ওপর ভর করেছে। রুবেল এ কারণেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। গাজীর গান দিলেই সব সমস্যার সমাধান হবে। এ বিশ্বাসে তারা ঈদের আগেই বাড়িতে গাজীর গান দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অবশ্য এলাকার সচেতন যুবসমাজ এসবকে ভণ্ডামি বলে আখ্যা দিয়ে বলেছে, ওসব মনগড়া গালগল্প প্রচার করে বাড়িতে গাজীর গান দিয়ে প্রতারণার দোকান দেয়ার পরিকল্পনা করছে।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার ফরিদপুর গ্রামের অনেকেই নানা তরিকাভুক্ত। ফকিরতন্ত্রের অনুসারীর সংখ্যাও অনেক। এই গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে রুবেলকে গতকাল মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পেটে ব্যথার কারণে হাসপাতালে ভর্তির কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়। চোখে মুখে সুস্থতা ফুটে উঠলেও রহস্যজনক আচরণ করতে শুরু করে। চিকিৎসকদের মধ্যে তার আচরণ দেখে প্রশ্ন উঠে। এক পর্যায়ে জানা যায়, তার পরিবারের সদস্যদের মনগড়া নানা গল্প। রুবেলের পিতা আব্দুস সাত্তার ভ্যান চালাতেন। একদিন বাড়ি জানালেন তার ওপর জিনের আছর হয়েছে। গাজীর গান দিতে হবে। সেই থেকে প্রতি বছর বাড়িতে গাজীর গান দেয়া হয়। গান না দিলে বা বিলম্ব করলে ওই জিন ভর করে। তখনই অসুস্থ হয়ে পড়ে বলে প্রচার প্রচারণা চালায়। গত বছর গাজীর গানের বদলে বাঁশগান দেয় বলে তারা জানিয়ে বলেছে, ‘দু মাস আগে রুবেলের দাদি অন্যের বাড়িতে গাজীর গান শুনে বাড়ি ফিরে স্বপ্ন দেখে বাঁশগান জিনের পছন্দ হয়নি। গাজীর গান দেয়ার জন্য স্বপ্নে জিনে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নেয়। এরপরও গাজীর গান না দেয়ার কারণে রুবেল অসুস্থ হয়ে পড়েছে।’
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অসুস্থ রুবেলের সাথে কথা বলতে গেলে ভান ধরে জিনে আছর করেছে। অথচ পাশে বসে থাকা তারই স্ত্রী বলে, বাথরুম বন্ধ হয়ে পেটে যন্ত্রণা শুরু হয়েছে। এ কারণে হাসপাতালে আনা হয়েছে। এ কথা শুনে রুবেলের সাথে কথা বলার চেষ্টা চলে। কয়েক মিনিট চেষ্টা করার পর চোখ চড়কগাছি করে এমন ভাব দেখায় যে,পাশে থাকা সকলেই যেন ভয় পায়। ভয় দূরের কথা ওই আচরণের কারণ কি জানতে চাইলে চোখ বুঝে কথা না বলতে পারার আচরণ করে একটি আঙুল দেখাতে থাকে। পাশে থাকা তার পরিবারের এক সদস্য বলেন, ‘ওইদেখো ছেলে বাঁশ দেখাচ্ছে’। ধমক দিয়ে নাম বলতে বললে, রুবেল তার নাম বলে রুমা। এ নাম বলে বোঝাতে চায়, তার ওপর রুমা নামের পরী ভর করেছে।
জিন-পরী ভর করার নাটক করে গ্রামবাংলার অনেকেই অর্থবাণিজ্যের ফাঁদ পাতে। গ্রামের সরলসোজা মানুষগুলোর ওই প্রতারণার দোকানে গিয়ে প্রতারিত হয়। ফরিদপুরের আব্দুস সাত্তার ও তার ছেলে কি সেরকমই প্রতারণার দোকান দেয়ার জন্যই জিন-পরীর আছর করার নাটক করছেন।
উল্লেখ্য, গাজীর গান আর বাঁশগান সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিবারের সদস্যরা বলেন, বাঁশগান নামে বাঁশের মাথায় গামছা বেধে ৫ গ্রামে ঘুরে গান গাওয়া। আর গাজীর গান? অনুসারীদের নিয়ে গান-বাজনার পাশাপাশি খিঁচুড়িভাত রান্না খাওয়া।