ফাইজার চৌধুরী: রাষ্ট্রয়াত্ব সোনালী ব্যাংকের চুয়াডাঙ্গা শাখা। গ্রাহকের কাছে ভোগান্তির অপর নাম। পর্যাপ্ত লোকবল না থাকার পরও এখান থেকে পরিশোধ করা হয় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, পেনশন ও অন্য সরকারি-বেসরকারি কাজের বিল, বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ এ সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি অর্থ। ঈদের আগে অন্য লেনদেন বৃদ্ধি পাওয়ায় সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
প্রতিমাসের প্রথম ১০-১২ দিন গ্রাহকের চাপে খেই হারিয়ে ফেলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে পেনশন তুলতে আসা বয়স্ক, অসুস্থ ব্যক্তিদের ভোগান্তির মাত্রা সীমা ছাড়ায়। ব্যাংক ভবনের ভেতরে বাইরে সৃষ্টি হয় অমানবিক পরিবেশের। আর এসব তদারকিরও কোনো ব্যবস্থা নেই। গ্রাহকদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা এখানে স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। এখানে পেনশন অথবা বিভিন্ন ভাতা তুলতে আসা লোকজনকে সকাল ৭টায় লাইনে দাঁড়াতে হয়, ভাগ্য ভালো থাকলে মধ্যাহ্ন বিরতির পর ক্যাশ কাউন্টারের কাছাকাছি পৌঁছুনোর সুযোগ মেলে। ব্যাংকে পরিচিত কোনো কর্মকর্তা থাকলে তাদের কাজ আগেভাগেই হয়ে যায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেলো। ঈদকে ঘিরে ব্যাংকটিতে কয়েক দিন ধরে স্বাভাবিকের চেয়ে লেনদেন বেড়ে যাওয়ায় পাশপাশি জনবল কম থাকায় অর্থ লেনদেনে ভোগান্তি পোয়াতে হচ্ছে গ্রাহকদের।
চুয়াডাঙ্গা শহরের শহীদ হাসান চত্বরের একপাশে একটি ভবনে সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখাটি অবস্থিত। ঈদকে সামনে রেখে গ্রাহক ও সরকারি সব ধরনের লেনদেন কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। বিভিন্ন কাউন্টারের সামনে দেখা যাচ্ছে গ্রাহকদের দীর্ঘ সারি। ওই শাখায় বেতন, পেনশন ও অন্য সরকারি-বেসরকারি কাজের বিল তুলতে গিয়ে কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে যায়।
ব্যাংকের শাখা সূত্রে জানা গেছে, এখান থেকে বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন, উন্নয়নমূলক কাজের বিল, শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন ও অবসর ভাতা উত্তোলন করা হয়। সোনালী ব্যাংক চুয়াডাঙ্গা শাখায় ৪০ হাজারের বেশি গ্রাহক রয়েছেন। পেনশন নিতে আসার সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। এছাড়া প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার গ্রাহক এখান থেকে সেবা নিয়ে থাকেন। এ শাখায় অন্য ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থাকায় (অন্যান্য রাষ্ট্রয়াত্ব ও বেসরকারি ব্যাংক) প্রতিদিন গ্রাহক লেনদেন ৯ থেকে ১০ কোটি টাকাসহ প্রায় ৫০ কোটি টাকার মতো লেনদেন হয়।
শহরের মুক্তিপাড়ার সাবেক পুলিশ সদস্য আব্দুল হামিদ সোমবার পেনশনের টাকা তোলার জন্য এসেছেন। তিনি জানান, সকাল ৯টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত তার সামনে প্রায় ৩০ জনের মতো সিরিয়ালে আছেন। গত দুইদিন তিনি ব্যাংকে এসে ভিড়ের কারণে ফিরে গেছেন। ব্যাংক থেকে পেনশনের টাকা তুলে ঈদের কেনাকাটা করবেন। আজ টাকা পাবেন কি-না, এ নিয়ে টেনশনে আছেন।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নাসিরউদ্দিন জানালেন, জেলা সদরে সোনালী ব্যাংকের মাত্র একটি শাখা হওয়ায় চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা অন্য কোনো সরকারি ব্যাংক থেকে দেয়ার ব্যবস্থার দাবি জানান। সোনালী ব্যাংক চুয়াডাঙ্গা প্রিন্সিপাল শাখা সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান জানালেন, বিশেষ সময়গুলোতে ব্যাংকের ভ্রাম্যমাণ বুথ স্থাপন করলেই চলমান সমস্যা অনেকাংশেই সমাধান হয়। কয়েকদিন পর ব্যাংকের আরও কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী অবসরে যাচ্ছেন। তখন সমস্যা আরও বাড়বে বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
সোনালী ব্যাংক চুয়াডাঙ্গা শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মাহ্ববুর রহমান জানান, প্রয়োজনের তুলনায় জনবল কম এবং সব ধরনের সরকারি লেনদেন হওয়ায় গ্রাহকের চাপটা অনেক বেশি থাকে। আমরা যথাসাধ্য গ্রাহকদের সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। ব্যাংকের চাকরি থেকে অবসরে যাওয়া শূন্যপদ এখনও খালি রয়েছে বলে জানান এই ব্যাংক কর্মকর্তা।
তিনি আরও বলেন, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে আমরা কথা বলবো তাদের আলাদা আলাদা তারিখে পেনশনের টাকা তোলার জন্য। তাহলে তাদের হয়রানি হতে হবে না এবং ব্যাংকে চাপও কম থাকবে।