ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে কথিত জিন সাপের কামড়ে ১ জনের মৃত্যু ৪ দিনে অসুস্থ ৭০

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে কথিত জিন সাপের কামড়ে ১ জনের মৃত্যু ৪ দিনে অসুস্থ ৭০

জাহিদুর রহমান তারিক: ঝিনাইদহের হরিণদিয়া গ্রামে অজ্ঞাত রোগে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে একই গ্রামের অন্তত ৭০ জন। গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

এ ঘটনায় কোটচাঁদপুর উপজেলা হাসপতালের মেডিকেল অফিসার ডা. রাকিবুল হাসানের নেতৃত্বে ইতোমধ্যে একটি মেডিকেল টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন। তবে গ্রামবাসী বলছে কথিত জিন সাপের কামড়ে ১ জনের মৃত্যু ও ৪ দিনে ৭০ জনের অধিক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আক্রান্তরা ওঝার দারস্থ হচ্ছে। হরিণদিয়া গ্রামসহ আশপাশ এলাকার মানুষের মধ্যে এ নিয়ে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। হরিণদিয়া গ্রামের মেম্বার আশাদুল ইসলাম জানান, গত শনিবার থেকে গ্রামে জিন সাপের আতঙ্ক শুরু হয়। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ৭০ জনেরও অধিক ব্যক্তি অসুস্থ্য হয়ে রাজাপুর গ্রামের ওঝা আব্দুর রাজ্জাকের কাছে ঝাড় ফুক করে সুস্থ হয়েছেন। ওঝা আব্দুর রাজ্জাকও বলেছেন সাপের কামড়ের গ্রামবাসী আক্রান্ত হচ্ছেন।

খবর পেয়ে মঙ্গলবার সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা। মঙ্গলবার হরিণদিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায় বাজারপাড়ার শরিফুল ইসলামের বাড়িতে তার স্ত্রী রিনা বেগমকে ঝাঁড় ফুক দিচ্ছেন ওঝা আব্দুর রাজ্জাক ও তার সহযোগী মোন্তাজুল ইসলাম। এ সময় খবর আসে পাশের আরও কয়েকটি বাড়ি থেকে ৪/৫ জন আক্রান্ত। গ্রামবাসী জানায় কিসে কামড় দিচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে না। সাপও দেখা যাচ্ছে না। এভাবেই এলাকাজুড়ে  ব্যাপক আতঙ্কে আছে সাধারণ মানুষ। হরিণদিয়া গ্রামের আব্দুল মান্নান জানান, তার স্ত্রী রাহাতুন নেছা (৪০) শুক্রবার রাতে একা ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাত রাত ২টার দিকে ঘরের বারান্দায় ঘুমন্ত স্বামী মান্নানকে ডেকে বলেন তার হাতে সাপে কামড় দিয়েছে। তবে তিনি সাপ দেখেননি। হাতে জ্বালা পোড়া করছে ও বুকে যন্ত্রনা অনুভব করছেন। এ সময় পরিবারের সদস্যরা ঘর তল্লাসী করেও সাপের আলামত না পাওয়ায় গ্রাম্য ডাক্তার রোমজান আলীকে ডাকেন। রমজান আলী এসে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পরও রোগী অবস্থা ধীরে ধীরে সঙ্কটাপন্ন হতে থাকে।

শনিবার সকাল ৯টার দিকে রাহাতুন নেছাকে কোটচাঁদপুর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওয়াদুদুর রহমান রোগীর অবস্থা সঙ্কাটাপন্ন হওয়ায় অন্যত্র রেফার করেন। ওই দিনই যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান রাহাতুন নেছা। গ্রামবাসী জানান, এই রোগে আক্রান্ত হলে শরীরে সুচ ফোটানোর মতো লাল দাগ ও সেখানে ফুলে যাচ্ছে। এরপর ওঝা ডেকে ঝাড় ফুক করলে তারা সুস্থ্য হচ্ছে। ওঝা আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, এটা অদৃশ্য জিন সাপের কাজ। হরিণদিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান, তার দুই ছেলে মেয়ে চাঁদনি (১৫) ও মাহিম (২) জিন সাপে কামড়েছিলো। তাদের শরীরে সুচ ফোটানোর মতো ছোট্ট একটি লাল দাগ দেখতে পান।

পরে ওঝা দিয়ে ঝাড়ফুক চাঁদনি ও মাহিম সুস্থ হন। একই গ্রামের মিলন হোসেনের ছেলে জিম, মাহাতাব উদ্দীনের ছেলে আলী হোসেন, রতন হোসেনের ছেলে রাতুল, মিরাজুল ইসলামের স্ত্রী রত্না, আকবর আলীর ছেলে রবিউল, ফজলুর রহমানের মেয়ে রিমা, আতিয়ার রহমানের ছেলে ডনার, মধু মণ্ডলের কন্যা জোৎনা সহ এ পর্যন্ত ৭০ জনের অধিক ব্যক্তি অসুস্থ্য হয়ে ওঝার স্মরণাপন্ন হয়েছেন বলে গ্রামবাসী জানান।

এ বিষয়ে কোটচাঁদপুর হাসপাতালের মেডিকেল টিমের প্রধান ডা. রাকিবুল হাসান জানান, এতে ভয়ের কিছু নেই। আতঙ্কে এমনটি হচ্ছে। এটি হচ্ছে ম্যাস হিস্টিরিয়া রোগ।

Leave a comment