গ্রাহকের আঙ্গুলের ছাপ প্রতারণা করে দৃস্কৃতিকারীদের কাছে সিম বিক্রি : গাংনী ও ফতেপুরের দুই সিম বিক্রেতা গ্রেফতার

 

গাংনী প্রতিনিধি: গ্রাহকের আঙ্গুলের ছাপ ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে অবৈধভাবে নিবন্ধন করা সিম বিক্রির অভিযোগে দুই সিম বিক্রেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে এসেছে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন প্রতারণার চাঞ্চল্যকর তথ্য। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধনের দুটি ডিভাইস ও বিভিন্ন গ্রাহকের নামে রেজিস্ট্রেশন করা ১১টি সিমকার্ড। আটককৃতদের নামে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

এরা হচ্ছে- গাংনী শহরের কাথুলী মোড়ের এমআর নেট কানেকশনের সত্বাধিকারী ও চৌগাছার হারেজ আলীর ছেলে আক্তারুজ্জামান রানা (২৬) এবং সদর উপজেলার ফতেপুর গ্রামের মা টেলিকমের সত্ত্বাধিকারী ও একই গ্রামের মোছা কলিমের ছেলে মামুন হোসেন (২৪)।  আঙ্গুলের ছাপ মিলছে না, সিম নিবন্ধনকারীদের অনেকেই এমন কথা বলে একই ব্যক্তির আঙ্গুলের কয়েকবার ছাপ নিয়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন করেছেন। গ্রাহক একটি সিম রেজিস্ট্রেশনের জন্য তার আঙ্গুলের ছাপ একবারই দিয়েছেন। অথচ তার অজান্তেই বারবার নেয়া আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে অসাধু কিছু ব্যবসায়ী একাধিক সিম নিবন্ধন করেছেন। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন করে গ্রাহক নিশ্চিন্ত মনে বাড়ি গেলেও তারই নামে অবৈধভাবে করা সেই নিবন্ধিত সিম চলে যাচ্ছে দুস্কৃতিকারীদের হাতে। অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করা এসব সিম উচ্চমূল্যে কিনে নিয়ে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও দুস্কৃতিকারীরা অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করছে। এ কারণে তাদের ধরতে বেগ পেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। পুলিশের অনুসন্ধানে প্রতারণার মাধ্যমে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম রেজিস্ট্রেশন ও বিক্রির ওই চক্রের কথাই উঠে এসেছে।

গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, গাংনী শহরের সিম বিক্রেতা রানা উচ্চমূলে ওইসব সিম বিক্রি করছে বলে জানতে পান তিনি। প্রাথমিক তদন্তে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে অভিযানের সিদ্ধান্ত হয়। সেনুযায়ী সোমবার সন্ধ্যায় নিজ দোকান থেকে রানাকে গ্রেফতার করেন এসআই শংকর কুমার ঘোষ। এ সময় দোকান থেকে বিভিন্ন নামে রেজিস্ট্রেশনকৃত প্রি অ্যাকটিভ ১১টি সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ৯টি রবি ও ২টি বাংলালিংক সিম রয়েছে। বিভিন্ন নামে রেজিস্ট্রেশন থাকার কারণেই ওই সিমগুলো অ্যাকটিভ রয়েছে।

এদিকে রানাকে গ্রেফতারের পর তাকে বাঁচাতে ওই চক্রের অনেকেই ক্ষমতা খাটানোর চেষ্টা করলেও তা কাজে আসেনি। রাতে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রানা তার অপকর্মের সবকিছুই স্বীকার করে। তার জবানবন্দি ধরে রাতেই ফতেপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় মামুনকে। তার কাছ থেকে দুটি বায়োমেট্রিক ডিভাইস জব্দ করে পুলিশ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রানার মতোই মামুনও জালিয়াতি এবং প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করে।

ওসি আরও বলেন, মামুনের দোকানে আসা নতুন সিম ক্রয় কিংবা বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রেজিস্টেশনকারী ব্যক্তিদের আঙ্গুলের ছাপ কৌশলে কয়েকবার নেয়া হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র কপিও (এনআইডি) বাড়তি তৈরি করা হয়। বিভিন্ন ব্যক্তির আঙ্গুলের ছাপ ও এনআইডি দিয়ে সিম রেজিস্টেশন করে তা নিজের কাছে সংরক্ষণ করতেন মামুন। পরে তার সহযোগী রানার মাধ্যমে বিক্রি করা হতো। তবে শুধুমাত্র এই দুই ব্যবসায়ী জড়িত না এর সাথে মোবাইলফোন কোম্পানির কেউ জড়িত রয়েছে কি-না তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

১১টি প্রি অ্যাকটিভ সিম উদ্ধারের পর পুলিশের ধারণা আরও অনেক সিম তারা বিক্রি করেছে। অবশ্য ওইসব ব্যক্তিদের একটি তালিকাও পুলিশের কাছে দিয়েছে রানা ও মামুন। উচ্চমূল্যে বিক্রি করা ওইসব সিম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার হচ্ছে বলে মনে করছে পুলিশ। তাই গ্রেফতার দুজনের স্বীকারোক্তির তালিকানুযায়ী অপরাধীদের গ্রেফতারে পুলিশ মাঠে নেমেছে। তাদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। অপরদিকে আরো কেউ এমন অপকর্মের সাথে জড়িত কি-না তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

এদিকে গতকালই গাংনী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। ২০০১ সালের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধিত ২০১০ এর ৭৩ ও ৭৪ ধারা এবং তৎতসহ পেনাল কোডের ৪২০ ধারা যুক্ত করা হয়েছে। গতকালই তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানান ওসি। এর আগে চট্রগ্রামে এমনই এক চক্রের কয়েকজনকে সিমসহ গ্রেফতার করেছিলো পুলিশ। তখন থেকেই বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন করা সিম নিয়ে অতঙ্কে রয়েছেন অনেক গ্রাহক। গাংনীর এই ঘটনার মধ্যদিয়ে ওই চক্র সম্পর্কে আরো পরিস্কার হলো। তাই সিম নিবন্ধন ও নতুন সিম কেনার সময় আঙ্গুলের ছাপ দিতে গ্রাহকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিলেন পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা।

Leave a comment