স্টাফ রিপোর্টার: লঘুচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে পড়েছে। উপকূলীয় এলাকাসহ সারাদেশেই ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টি আরো দুই দিন থাকতে পারে। ভারি বৃষ্টিতে ডুবে গেছে রাজধানী ঢাকার অনেক রাস্তা। বরিশালে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীতে গভীর রাত থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়া শুরু হলেও রোববার ভোর থেকেই বৃষ্টি বাড়তে শুরু করে। ভারি বৃষ্টিতে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পাহাড় ধসে পড়ে। দুপুরের দিকে হয় ভারি বৃষ্টি। ভোগান্তিতে পড়ে জনসাধারণ। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ এবং অফিসগামীরা পড়েন চরম দুর্ভোগে। এরপর কমে গেলেও বিকেলে আবারো আবহাওয়া খারাপ হয়ে পড়ে। চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া অঞ্চলেও ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এসব এলাকার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। যার ফলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
আবহাওয়ার সতর্কবার্তায় বলা হয়, সুস্পষ্ট লঘুচাপের বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি হয়েছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ সহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টি হতে পারে।
বদরগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গার কুতুবপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বর্ষণের পানি প্লাবিত ধান, ঝালগাছের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষিত হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টি কারণে অনেকেই হাটবাজার ও মাঠের কাজ করতে পারেনি। রোববার সন্ধ্যায় জোরে সোরে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। তবে আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানিয়েছে, তৎসংলগ্ন একটি লঘুচাপ সৃষ্টির হয়েছে। লঘুচাপের প্রভাবে আকাশে মেঘমালা সৃষ্টির ফলে সারাদেশ হাল্কা ঝড়ো বাতাসের সাথে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এরই অংশ কুতুবপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে।
আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়া খাপাড়ায় একটি পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। গত ১৫দিন যাবত অতিবর্ষণে মানুষ, গরু, ছাগলের মল, মূত্র ও নোংরা জলবদ্ধতার মধ্যে বসবাস করলে ও অসহায় পরিবারটির সাহায্যে কেউ এগিয়ে আসেনি। পানি নিস্কাশনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় জীবনের ঝুকি নিয়ে পরিবারের সদস্যরা জলবদ্ধতার মধ্যে রাতে গরু, ছাগল নিয়ে একত্রে বসবাস করছেন। জনবসতিপূর্ণ এলাকায় বসত ঘরের চর্তুরদিকে পানিবন্দি পরিবারের শিশু সদস্যরা নিরুপায় হয়ে ইতোমধ্যে আত্মীয় বাড়িতে পাড়ি দিয়েছে। জলবদ্ধতার কারণে বাড়িতে রান্না করার স্থান না থাকায় পরিবারটি প্রতিবেশীদের বাড়ি থেকে রান্নাসহ গৃহস্থলির যাবতীয় কাজকর্ম শেষে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরছেন। ইউনিয়ন ও উপজেলার নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত পরিবারটির পানিবন্দির খবর পেয়ে ইউপি সদস্য আরিফুল ইসলাম ও সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য মিনুয়ারা খাতুন সরেজমিনে পরিদর্শন করে পানি নিস্কাশনের আশ্বাস দিয়েছেন। গত ১৫ দিন অতিবাহিত হলেও পানি নিস্কাশনের কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এলাকাবাসি সূত্রে জানা গেছে, আন্দুলবাড়িয়া খাপাড়ার মৃত সোনা শেখের স্ত্রী মাজেদা খাতুন দীর্ঘদিন যাবত ছেলেমেয়ে নিয়ে স্বামীর বসতভিটায় বসবাস করছেন। সম্প্রতি প্রবল বর্ষনে পানি নিস্কাশনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় বিভিন্ন স্থানের পানি জলবদ্ধ হয়ে পরিবারটি বন্দি হয়ে পড়েছে। আন্দুলবাড়িয়া ইউপির ৩ নং ওর্য়াড সদস্য আরিফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
বরিশাল ব্যুরো জানিয়েছে,, বরিশালে বৃষ্টিপাতে ৪৮ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। ২৪ ঘণ্টায় ২৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে বরিশাল আবহাওয়া অফিস। এর আগে ১৯৬৭ সালে ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছিলো ২৫৮ মিলিমিটার। এ কারণে বরিশাল নগরীসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। রোববার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে অভ্যন্তরীণ রুটের সব লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ভারি বৃষ্টির কারণে বরিশাল নগরীর সদর রোড, ফজলুল হক এভিনিউ, বগুরা রোড, কালীবাড়ি রোড, বান্দ রোড, নবগ্রাম রোডসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।
ভোলা প্রতিনিধি জানান, ভারি বৃষ্টিতে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর পানি বেড়ে গিয়ে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় অন্ধকারে পুরো জেলা। খুলনা ব্যুরো জানায়, নিম্নচাপের প্রভাবে রোববার ভোর থেকেই খুলনা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় শুরু হয়েছে ভারি বর্ষণ। আর তাতেই তলিয়ে গেছে খুলনা মহানগরীর দুই-তৃতীয়াংশ। শুধু বর্ষাই নয়, থেমে থেমে বইছে দমকা হাওয়া। ভারি বর্ষণ ও দমকা হাওয়ার কারণে স্থবির হয়ে গেছে খুলনা মহানগরী। পানি বেড়েছে খুলনার সব নদ-নদীর। এদিকে বর্ষার কারণে নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার কয়রা, দিঘলিয়া ও ডুমুরিয়া উপজেলার কয়েকশ’ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, টানা বর্ষণে কুষ্টিয়ায় সড়কসহ নিম্নঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সকাল থেকে লাগাতার এ বৃষ্টির কারণে সব পেশার মানুষকে পড়তে হয়েছে চরম দুর্ভোগে। কুমারখালী আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন জানান, রোববার সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।