গ্রাহকদের সঞ্চয়ের কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা

 

মনজুর আলম: পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের চটকাদারি কথায় গ্রাহকদের সঞ্চয় করিয়ে বিপাকে পড়েছেন ঝিনাইদহের মাঠকর্মী ও গ্রাহকরা। দফায় দফায় কোম্পানির অফিসের স্থান পরিবর্তন অবশেষে গ্রাহকদের কোটি টাকা সঞ্চয় নিয়ে ঝিনাইদহ থেকে উধাও হয়ে গেছে। ফলে সঞ্চয়কারীদের সঞ্চয়ের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও মাঠকর্মীরা শ শ গ্রাহকদের জমানো টাকা ফেরত দিতে পাচ্ছেন না। মাঝে মধ্যে দু-একজন সঞ্চয়কারীর কোম্পানি চেক দিলেও অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকায় গ্রাহকরা ব্যাংক চেকের বিপরীতে টাকা দিচ্ছে না। ফলে গ্রাহকরা সঞ্চয়ের টাকা ফেরত পেতে মাঠকর্মীদের সাথে চরম বিরোধিতার সৃষ্টি হচ্ছে। গ্রামে সালিস বৈঠকের মতো ঘটনাও ঘটছে। কোনো কোনো মাঠকর্মী মাঠের জমি বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার অনেক মাঠকর্মী এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগে জানা গেছে, ২০০৫ সালে ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুরের কুষ্টিয়া বাসস্ট্যান্ডে একটি দোতলা বাড়িভাড়া নিয়ে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের অফিস খোলা হয়। বছর দেড়েক পর স্থান পরিবর্তন করে শহরের প্রাণকেন্দ্র পায়রা চত্বরের মহিরা মার্কেটের ভেতরে একটি রুম ভাড়া নিয়ে অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এখানে কিছুদিন অফিস ব্যবহার করার পর হামদহ স্ট্যান্ডে তেল পাম্পের সামনের দোতলার একটি রুম ভাড়া নিয়ে অফিস করা হয়। নানা সমস্যা দেখিয়ে কোম্পানির উপজেলা ম্যানেজার ফকরুল ইসলামের ভাড়ার বাসায় অফিসের সকল কাজকর্ম করা হতো। এরপর ২০১৫ সালে মে মাসে ভাড়ার বাসা থেকেও কোম্পানির সকল কার্যক্রম বন্ধ করে উধাও হয়ে যায়। এ সময় কোম্পানির সকল মাঠকর্মী ও সঞ্চয়ের গ্রাহকরা দিশেহারা হয়ে পড়েন। ম্যানেজারের মোবাইলফোনটিও বন্ধ পান সকলে। সংশ্লিষ্ট সকলে অনেক চেষ্টা করে জানতে পারেন তিনি ঢাকায় অবস্থান করছে।

এ বিষয়ে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ঝিনাইদহ সদর থানার মাঠকর্মী আশিকুর রহমান টিংকর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ২০০৫ সালে কোম্পানির মাঠকর্মী হিসেবে যোগদান করি। কোম্পানি কাজের দক্ষতা দেখে ফিল্ড ম্যানেজার হিসাবে যোগদান করান। এ এলাকার ৯০ জন গ্রাহকের মাসিক সঞ্চয় আমি উত্তোলন করতাম। ২০১৫ সালে এপ্রিল মাসে গ্রাহকদের টাকা সঞ্চয়ের মেয়াদ শেষ হয়েছে। গ্রাহকরা আমার মাধ্যমে সাড়ে ১০ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে কোম্পানির নিকট সঞ্চয় করেছেন। আমি কোম্পানির নিয়মানুযায়ী গ্রাহকদের বই, টাকা জমাদানকারী রশিদ কোম্পানির নিকট প্রদান করেছি। প্রথম দিকে কয়েকজন গ্রাহকের টাকা উত্তোলনের জন্য কোম্পানি ব্যাংকের চেক প্রদান করেছেন। কিন্তু এখন চেক প্রদান করতে নানাভাবে বিলম্ব হচ্ছে। এতে গ্রাহকরা আমার ওপর চরমভাবে রাগান্বিত হচ্ছেন। তারা নানাভাবে আমাকে চাপ সৃষ্টি করছে। গ্রামে সালিস বৈঠকের মতো ঘটনাও ঘটছে। মাঠের চাষযোগ্য জমি দখলের মতো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আর ঝিনাইদহ থেকে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও ম্যানেজার ঝিনাইদহ থেকে চলে যাওয়ার কারণে চরম বিপাকে পড়েছি। অনেক মাঠকর্মী সঞ্চয়কারীদের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

এ বিষয়ে সদর উপজেলার বেজিমারা গ্রামের সঞ্চয়কারী হাসিনা বেগম জানান, ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমি পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড এ মাসিক সঞ্চয় করি। আমার সঞ্চয় করা শেষ হয়েছে এবং কোম্পানি গত ৫ মে আমাকে সাউথইস্ট ব্যাংকের একটি চেক প্রদান করেছে। যার নং সবচ-৬৯৬১৬১৯। জনতা ব্যাংক গান্না শাখায় আমার হিসাব নং ৩৪০৭২৯৫৭ কোম্পানির নিয়মানুযায়ী টাকা উত্তোলন করতে গেলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোনো টাকা দেয়নি। এখন চেকটি কোম্পানি আবার ফেরত চাচ্ছে। সঞ্চয় করে আমরা এখন চরম বিপাকে পড়েছি। টাকার জন্য কোম্পানির মাঠকর্মীদের সাথে দিনদিন সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে। এর একটা সমাধান হওয়া দরকার।

এ বিষয়ে ঢাকায় অবস্থানরত পপুলার ইন্সুরেন্স লিসিটেড এর ঝিনাইদহ সদর থানার ম্যানেজার ফকরুল ইসলামের সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি বলেন, অফিসিয়ালভাবে একটু সমস্যা হয়েছে। যা অতিদ্রুতই সমাধান হয়ে যাবে।

 

Leave a comment