স্টাফ রিপোর্টার: ১৭ বছরের জোটসঙ্গী জামায়াতকে নিয়ে সঙ্কটে পড়েছে বিএনপি। না পারছে গাঁটছড়া মুক্ত হতে, না পারছে রাখতে। জামায়াতকে জোটে রাখলে বিএনপির পরিকল্পিত সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ বিরোধী বৃহত্তর প্লাটফরমে আসতে চাইছে না ২০ দলীয় জোট এবং ১৪ দলীয় জোটের বাইরে সক্রিয় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও প্রগতিশীল দলগুলো। তবে বিএনপির বেশিরভাগ সিনিয়র নেতা দেশ ও দলের বৃহত্তর স্বার্থে জামায়াতের সাথে আপাতত দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পরামর্শ দিচ্ছেন। বিএনপির প্রভাবশালী কয়েকজন বুদ্ধিজীবী পরামর্শকেরও চাপে আছেন দলের হাইকমান্ড।
ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও প্রকাশ্যে জামায়াতকে ত্যাগ করতে বলা হয়েছে বিএনপিকে। জঙ্গিবাদবিরোধী ‘জাতীয় ঐক্য’ গড়ার জন্য বিএনপির হয়ে যারা বিভিন্ন দলের সাথে যোগাযোগ করছেন তারাও বলছেন ঐক্যের বাধা জামায়াত। সম্প্র্রতি বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাথে বৈঠকে বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল হক, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ জামায়াতকে জোটে না রাখার জন্য খালেদা জিয়াকে পরামর্শ দেন। আজ বৃহস্পতিবার রাতে কাদের সিদ্দিকী খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাত করে জামায়াতকে ঐক্যে না রাখতে অনুরোধ করবেন বলে জানা গেছে। তার আগে গত ১৩ জুলাই বুধবার রাতে জোটের বৈঠকে জাতীয় ঐক্য গড়ার ক্ষেত্রে জামায়াত মূল বাধা বলে কেউ কেউ জোটনেত্রী খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত দেন। এই পটভূমিতে বিএনপি কি তার নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াতে ইসলামীকে বের করে দিতে পারবে? এমন প্রশ্ন আবর্তিত হচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ গত মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য গড়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা একটি রাজনৈতিক দল (জামায়াত)। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ২০ দলের মধ্যে এ দলটিকে আর রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। দলটি এখন বোঝায় পরিণত হয়েছে। এটি এখন আর সম্পদ না।’ তার এই বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে বিএনপিতে জামায়াত নিয়ে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে গতকাল বিএনপির পক্ষ থেকে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জামায়াতে ইসলামীকে ২০ দলীয় জোটে না রাখার বিষয়ে ড. এমাজউদ্দীন আহমদের দেওয়া বক্তব্য নাকচ করে দেন। জাতীয় ঐক্যের ক্ষেত্রে জামায়াত কোনো বাধা কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, এটি প্রেডিকশন, চিন্তা-ভাবনা করার বিষয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া জাতীয় দায়িত্ববোধ থেকে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। এই ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথাবার্তা বলছি। ফলপ্রসূ হলে আপনাদের (গণমাধ্যম) জানাব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সরকার জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের আইন পাস করলেই পারে। এ নিয়ে আর বিতর্কও থাকবে না। আসলে সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করবে না। কারণ এই ইস্যুতে তারা রাজনীতি করতে চায়। বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গতকাল প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বলেছেন, বর্তমান সরকার তার অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে জঙ্গিবাদ আর জামায়াতে ইসলামীকে মূলধন হিসেবে ব্যবহার করছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আসম হান্নান শাহ বলেন, সরকারই চায় না জামায়াত নিষিদ্ধ হোক। তারা জামায়াতকে নিয়ে রাজনীতি করছে। তিনি মনে করেন ২০ দল থেকে জামায়াতকে বাদ দিলে আওয়ামী লীগ যে তাদের লুফে নেবে না এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একজন সিনিয়র নেতা বলেন, বিএনপির জঙ্গিবাদবিরোধী ঐক্য হলে সেখানে জামায়াত থাকবে না। এই প্লাটফরমে জামায়াতকে রাখা হবে না। তবে জোটে থাকবে জামায়াত। জোট থেকে বাদ দেওয়া হবে না।
এদিকে দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতার সাথে আলাপ করে জানা গেছে, চাপ সত্ত্বেও জামায়াতের সঙ্গ ছাড়বেন না বেগম খালেদা জিয়া। কারণ জামায়াতকে ছাড়লে ২০ দলীয় জোট ভেঙে যাবে। জামায়াতের মদদপুষ্ট কয়েকটি ছোট শরিক দল জোট থেকে বেরিয়ে যাবে। সুতরাং এই ঝুঁকি নেবেন না খালেদা জিয়া।
এদিকে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ গতকাল বুধবার সাংবাদিকদের বলেছেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে জামায়াতকে বাদ য়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এমন কথা তিনি বলেননি। আমি বলেছি, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনে দলমত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন। এখানে জামায়াত কোনো বিষয় নয়। তিনি আরো বলেন, জামায়াত সরে গেলে ভোটের রাজনীতিতে বিএনপির ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। বরং ভোট আরো বাড়তে পারে। এ ছাড়া জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করে ঐক্য করলে বিএনপি আন্তর্জাতিকভাবে অনেক বেশি সহযোগিতা পেতে পারে।