যুক্তরাজ্যের কড়া সতর্কতা : বিদেশিরা সরাসরি টার্গেট
স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশে আবারো বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সরকার ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ব্রিটিশ সরকারের সতর্ক বার্তায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশিরা বিশেষ করে পশ্চিমা দেশের নাগরিকরা এই সন্ত্রাসী হামলার সরাসরি টার্গেট। ব্রিটিশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-ফরেন এন্ড কমনওয়েলথ অফিস (এফসিও) থেকে মঙ্গলবার রাতে বাংলাদেশে অবস্থানরত ব্রিটিশ নাগরিকদের উদ্দেশে জারি করা সতর্ক বার্তায় এই শঙ্কার কথা জানানো হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়ের মায়াদু গতকাল বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন, গুলশানের মতো ঘটনা আবার ঘটতে পারে। তিনি বাংলাদেশের পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে ‘খুবই মারাত্মক’ ও ‘ভয়ঙ্কর’ শব্দ দুইটি ব্যবহার করেন।
ব্রিটিশ এফসিও জানায়, বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ৭৫ হাজার ব্রিটিশ নাগরিক (বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতসহ) ভ্রমণ করে। তাদের বাংলাদেশে অবস্থান, ভ্রমণ, চলাফেরার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মাত্রার সাবধানতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমারা সমবেত হয় এমন জায়গায় উপস্থিতি সীমিত করতে হবে। এফসিওর আশঙ্কা- পশ্চিমাদের আগমন বা সমবেত হওয়ার স্থানগুলোতে নির্বিচারে বড় হামলা হতে পারে। এসব স্থানে দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় এমন উপস্থিতির ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। একইসাথে নিরাপত্তা বিষয়ে যথাযথ পূর্ব সতর্কতা মেনে চলতে বলা হয়েছে। ব্রিটিশ সরকারের ওয়েবসাইটে দেয়া ওই সতর্কতা পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে।
এফসিওর বার্তায় বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস ও আল কায়েদা ইন দ্য ইন্ডিয়ান সাব কন্টিনেন্ট (একিউআইএস)। আগের হামলাগুলোর পর উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে বাংলাদেশের নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো। একইসাথে সতর্ক বার্তায় ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। এফসিওর দাবি- আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় বেশ কিছু ঘাটতি রয়েছে। এখানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ব্রিটিশ সরকার কাজ করে চলেছে।
ইইউ দূতের সাক্ষাত্কার: বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাত্কারে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়ের মায়াদু বলেছেন, গুলশান হামলার পরে বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে তাদের উদ্বেগ এখনো কাটেনি। তিনি বলেন, গুলশান হামলার মতো ঘটনা বাংলাদেশে আরো ঘটতে পারে। নিরাপত্তা নিয়ে এই উদ্বেগের কারণে ঢাকায় তাদের মিশনে যেসব বিদেশি কর্মকর্তারা কাজ করেন তাদের পরিবারের সদস্যদের ইউরোপে ফেরত পাঠিয়ে দেবার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তর থেকে এরই মধ্যে একজন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ঢাকায় এসেছেন। আগামী সপ্তাহের মধ্যে তিনি নিরাপত্তা নিয়ে মূল্যায়ন কার্যক্রম শেষ করবেন। মি: মায়াদু বলেন, আমাদের কিছু সহকর্মী এরই মধ্যে তাদের পরিবারের সদস্যদের নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। বাকিরা এখনো অপেক্ষা করছে কি সিদ্ধান্ত আসে সেটি দেখার জন্য। আমি জানি, অনেক বিদেশি মিশন তাদের কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিতে বলেছে। আমরা কয়েকদিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। আগস্টের মাঝামাঝি ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল স্কুলগুলো খুলতে যাচ্ছে। সুতরাং এখন আমাদের সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমনকি ইউরোপেও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে তারা কি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন? এই প্রশ্নে মি: মায়াদু বলেন, অবশ্যই আমরা বেশি প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছি না। জুলাই মাসের এক তারিখে ১৭ জন বিদেশিকে চোখের সামনে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। এরপরে কেউ যদি বলে নিরাপত্তা নিয়ে আমরা অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছি, তাহলে সেটি নিহত এবং তাদের পরিবারকে অপমান করার মতো। রাষ্ট্রদূতের বর্ণনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি ‘খুবই মারাত্মক’। তিনি বলেন, “আমার ধারণা এখানে সব স্টেক হোল্ডারদের একই ধারণা। পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর। একই ধরনের ঘটনা ভিন্নভাবে আবারো ঘটতে পারে। সুতরাং এটা অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানো নয়।
রাষ্ট্রদূত মায়াদু মনে করেন বিদেশিদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের ইস্যুটি জুলাই মাসের ১ তারিখে তৈরি হয়নি। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে গুলশানে ইটালীয় নাগরিক চেজারে তাভেল্লার হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে প্রথম উদ্বেগ তৈরি হয়। এরপর রংপুরে জাপানি উন্নয়ন কর্মী কোনিও হোশিকেও একইভাবে হত্যা করা হয়। তিনি বলেন, তখন যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিলো, সেটি যথেষ্ট মনে হয়েছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সম্ভাব্য বিপদের দিকে কোনো মনোযোগ দেওয়া হয়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, সরকারের কাছে তাদের উদ্বেগগুলো তুলে ধরা হয়েছে। তারা কী ধরনের নিরাপত্তা চান সেটিও সরকারের কাছে বর্ণনা করা হয়েছে। মি: মায়াদুর কথায় এখন ঢাকার তথাকথিত কূটনৈতিক এলাকা অনেক সুরক্ষিত এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
তাহলে কেন তারা সন্তুষ্ট হতে পারছেন না? এ প্রশ্নে মি: মায়াদু বলেন, অতিদ্রুত অনেক পদক্ষেপ নেয়া হলেও নিরাপত্তা নিয়ে তাদের পুরোপুরি আস্থা ফিরে আসছে না। তিনি বলেন, আমরা শুধু কূটনৈতিক পাড়ার কথা বলছি না। আমরা পুরো বাংলাদেশের নিরাপত্তার কথা বলছি। আমরা প্রতিটি বাংলাদেশির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ গত দেড় বছরে সন্ত্রাসী হামলায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় অন্তত পঞ্চাশ জন নিহত হয়েছে। তিনি মন্তব্য করেন সরকারকে পরিস্থিতি অনুধাবন করতে হবে এবং ঘটনার ভয়াবহতা স্বীকার করতে হবে। এটাকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে।