দ্বিমতের অবকাশ নেই যে, এখন দেশের সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধর্মের ছদ্মবেশে আগত জঙ্গি সন্ত্রাসবাদের অশুভ দানবকে পরাভূত করতে হবে। জাতীয় জীবনে এ মুহূর্তে এর চেয়ে বড় কোনো অগ্রাধিকার নেই। সন্ত্রাসবাদী এই দানব কেন পবিত্র ইসলাম ধর্মের নাম ব্যবহার করছে, ইসলাম কায়েমের কথা বলে কেন মুসলিম-অমুসলিম, নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে নিরীহ মানুষ হত্যা করছে, ঈদের জামাতে বোমা হামলা করতে যাচ্ছে এবং কারা করছে? সত্যানুসন্ধান নিশ্চয়ই করতে হবে। তবে এই মুহূর্তে বিশ্লেষণ-আলোচনার চেয়ে বড় কাজ হচ্ছে সন্ত্রাসবাদী দানবকে রুখে দেয়া, পরাস্ত করা, নির্মূল করা। ধর্মীয় আবেগকে অশুভ উদ্দেশে ব্যবহার করে যুদ্ধ ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা করার নজির মানবেতিহাসে নেই তা তো নয়। তারই একটি বর্বরতম রূপ আমরা দেখছি বর্তমান বৈশ্বিক প্রকৃতির জঙ্গি তৎপরতায়। অবশ্যই ধর্ম নয়, সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামার মতোই এর পেছনের উদ্দেশ্যটিও রাজনৈতিক। তবে সব সম্প্রদায়, সব ধর্মবিশ্বাস, সব জাতীয়তার লোক এবার আক্রান্ত। একটি যুদ্ধাবস্থার চেয়েও এতে ব্যক্তিমানুষের জীবনের নিরাপত্তা বেশি বিপন্ন। যে কোনো স্থানে, যে কোনো অবস্থায় থাকা নিরপরাধ শান্তিপ্রিয় যে কোনো মানুষ হামলার শিকার হতে পারে। তাই সকল হাত একত্রিত করে, সকল সম্পদ, সকল উপায় ব্যবহার করে এই উপদ্রবকে রুখতে হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকার যে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেগুলোর প্রতি সকল নাগরিকের সমর্থন ও সহযোগিতা রয়েছে। ১ জুলাই গুলশান হামলার পরই সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক জঙ্গি দমনে সব বাহিনীর একটি সমন্বিত বিশেষ ইউনিট গঠন, রোববার আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বিশেষ বৈঠকের পরে ঘোষিত গুলশান-বনানী আবাসিক এলাকা থেকে অননুমোদিত প্রতিষ্ঠানের স্থাপনা অপসারণ, সারাদেশের নিখোঁজ মানুষের তালিকা ও তত্ত্ব-তালাশ, মসজিদে জুমার নামাজের বয়ানে উগ্রতা প্রচার করা হয় কি-না তা নজরদারি, ঘৃণা প্রচারের অভিযোগে ভারতীয় নাগরিক ইসলাম বিষয়ক বক্তা জাকির নায়েকের পিস টিভি বন্ধ প্রভৃতি সিদ্ধান্ত উল্লেখযোগ্য। আবাসিক এলাকাগুলো নিয়ন্ত্রণবিধি প্রয়োগের শৈথিল্যে চরিত্র হারিয়েছে অনেক আগেই। এখন আমরা তার মূল্য দিচ্ছি। খুব কঠিন হলেও গুলশান-বনানীর সিদ্ধান্তটি কার্যকর হলে ভালো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গি দমনে যতোখানি কঠোর হওয়া প্রয়োজন, সরকার ততোখানি কঠোর হবে বলে যে ঘোষণা দিয়েছেন তাকে আমরা স্বাগত জানাই। এই আপদকালে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই ঢাকা সফরে এসে সন্ত্রাসবাদ দমনে কারিগরি ও বিশেষজ্ঞ সহায়তার যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রয়োজনানুসারে বিদেশের সহায়তা আমরা নেবো। সন্ত্রাস নির্মূল করতে কোনো অস্ত্রই নগণ্য নয়, সব অস্ত্রই প্রয়োগ করতে হবে।