স্টাফ রিপোর্টার: তৎপর নিশা দেশাই বিসওয়াল। ২ দিনের ঢাকা সফরে ব্যস্ত সময় কাটান মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক মার্কিন এই সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ঢাকা অ্যাটাকের পটভূমিতে তার এই সফর নানা দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হচ্ছে। সফরের প্রথম দিন রোববার তিনি বৈঠক করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের সাথে। এ সময় সন্ত্রাসবাদ দমনে বিশেষজ্ঞ পাঠিয়ে সহযোগিতার কথা বলেছেন নিশা দেশাই। এরইমধ্যে ঢাকা অ্যাটাকের তদন্তে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই যুক্ত হয়েছে বলে পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। ঢাকা সফরে এখন পর্যন্ত চারজন গুরুত্বপূর্ণ দেশের রাষ্ট্রদূতের সাথে বৈঠক করেছেন তিনি। রোববার তিনি ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সাথে বৈঠক করেন। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বস্নুম বার্নিকাটের বাসায় এ বৈঠক হয়। সোমবার নিশা দেশাই বৈঠক করেছেন যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডার হাইকমিশনারের সাথে। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে তার নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকীর সাথে বৈঠক করেন তিনি। ওই বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। সেখান থেকে সচিবালয়ে গিয়ে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাথে বৈঠক করেন। পরে বেলা ৫টায় গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে এক ঘণ্টা কথা বলেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের পর ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়। স্বারষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে নিশা দেশাইর বৈঠকে আলোচিত বিষয়টি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। সেখানে নিশা দেশাই বলেছেন, ‘চরমপন্থা একটি বৈশ্বিক হুমকি। আমি এখানে এসেছি সন্ত্রাসবাদ এবং চরমপন্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা ও সমর্থন করার প্রস্তাব নিয়ে।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র, সহিষ্ণুতা ও সবাই মিলেমিশে চলার সম্মিলিত মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের যে দীর্ঘ ও গভীর অংশীদারত্ব রয়েছে, এই প্রস্তাব সেই ধারাবাহিকতার অংশ। বাংলাদেশের সাথে এই গভীর সম্পর্ক বজায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্র অঙ্গীকারবদ্ধ। এরই একটি অংশ হলো সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা। নিশা দেশাই বলেন, বাংলাদেশের প্রতি আমাদের সমর্থন, সহযোগিতা এবং প্রতিশ্রুতি সব সময়ের মতোই অটুট থাকবে। বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বের বন্ধন বজায় রাখতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলাদেশের চাহিদামতো সাহায্য করবে যুক্তরাষ্ট্র বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী সম্ভাব্য সব ধরনের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, তিনি আমাদের দৃঢ় প্রত্যয় দিয়ে গিয়েছেন যে, বাংলাদেশের এই সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় তার দেশ আমাদের পাশে থাকবে। পসিবল সব ধরনের হেল্প তারা আমাদের করবেন, টু ফাইট অ্যাগেইনস্ট টেরোরিজম ইউনাইটেডলি। কী ধরনের সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন তা আমরা অ্যাসেস করবো। তারপর তাদের জানাব। যেভাবে আমরা চাইব, সেভাবে তারা সহযোগিতা করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সব ধরনের সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশ সফররত মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল। সোমবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এক বৈঠকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এই প্রস্তাব দেন। গণভবনে সোমবার বিকাল ৫টায় এই বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকটি একঘণ্টা স্থায়ী ছিল বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন নিশা দেশাই। এ সময় জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়ার প্রস্তাব দেন তিনি।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি নিজেই সন্ত্রাসের শিকার। বাংলাদেশে রাজনীতি করতে গিয়ে কয়েক দফা সন্ত্রাসের শিকার হয়েছি। আমার ওপর কয়েকবার হামলা করা হয়েছে। সরকার সন্ত্রাসবাদ নিয়ে সচেতন রয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।’
মানবাধিকার কমিশনগুলোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলো কেউ নিখোঁজ হলেই তার দোষ সরকারের ওপর দেয়। তারা ভালোভাবে বিষয়গুলো খতিয়ে না দেখেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর দোষ চাপিয়ে দেয়। তারিক আহমেদের সাথে বৈঠক ঢাকা সফররত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, সোমবার দুপুরে নিশা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান। বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট ও যুক্তরাজ্যের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মার্ক ক্লেটন। এর আগে নিশা দেশাই প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভীর সঙ্গে বৈঠক করেন।
তিন হাইকমিশনারের সাথে বৈঠক যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করছেন ঢাকা সফররত মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াভিত্তিক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গুলশানের বাসভবনে এই বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে গুলশানের রেস্তোরাঁয় ১ জুলাইয়ের সন্ত্রাসী হামলা-পরবর্তী নিরাপত্তা পরিস্থিতি উঠে আসে।
এর আগে রোববার নিশা দেশাই প্রথমে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বৈঠক করেন। এরপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন তিনি। সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশকে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে সহযোগিতার প্রস্তাব দেন নিশা দেশাই। ওই আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, সন্ত্রাসবাদ দমনে বিশেষজ্ঞ সহযোগিতার যে প্রস্তাব নিশা দেশাই দিয়েছেন, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ সহযোগিতা তারা কীভাবে দেবেন আর বাংলাদেশ তা কীভাবে নেবে, সে সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচনা হয়েছে।
এদিকে নিশা দেশাই রোববার সন্ধ্যায় বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সাথে বৈঠক করেন। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় ওই বৈঠক হয়।
হলি আর্টিজানে নিশা দেশাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁ পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল। সোমবার সকালে গুলশানের ৭৯ নাম্বার সড়কের রেস্তোরাঁ পরিদর্শন করেন তিনি।
বেলা ১১টার দিকে হলি আর্টিজানে যান নিশা দেশাই। এ সময় তার সাথে ছিলেন বাংলাদেশের নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। রেস্তোরাঁ পরিদর্শন শেষে তিনি জঙ্গি হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। উল্লেখ্য, ১ জুলাই গুলশানের আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলায় ১৭ জন বিদেশি, দুই বাংলাদেশি ও একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক নিহত হন।