ঝিনাইদহে তেঁতুলবাড়িয়ায় পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি পুলিশেরও পাল্টা গুলি
পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোশাকের লোকজন তুলে নিয়ে যায় বলে পরিবারের দাবি
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ সদর উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়ায় পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে দু জন নিহত হয়েছেন। নিহত দুজন হলেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বদনপুর গ্রামের শহীদ আল মাহমুদ (২৪) ও কুষ্টিয়ার আনিসুর রহমান (২৫)। তাদের মধ্যে শহীদ ঝিনাইদহ সিদ্দিকী আলিয়া মাদ্রাসা ও আনিসুর ঝিনাইদহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র।
পুলিশ জানিয়েছে, বন্দুকযুদ্ধের সময় পুলিশের এসআই প্রবীর কুমার, কনস্টেবল রাব্বি ও তরিকুল আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি ১ শ্যূটার গান, ২ রাউন্ড গুলি, ৬ টি হাসুয়া ও ৫ টি বোমা উদ্ধার করেছে। গতকাল শুক্রবার ভোর সাড়ে ৩টার দিকে এ বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা ঘটে। নিহত শহীদ আল মাহমুদ সদর উপজেলার বদনপুর গ্রামের রজব আলীর ছেলে। তাকে গত ১৩ জুন নিজ বাড়ি সদরের বদনপুর থেকে পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোশাকের লোকজন তুলে নিয়ে যায় বলে গত ১৮ জুন পরিবারের পক্ষ থেকে এক সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করা হয়েছিলো।
অন্যদিকে ঝিনাইদহ পলিটেকনিকের সাবেক ছাত্র আনিসুর রহমানের বাড়ি কুষ্টিয়ায় বলে জানা গেছে। তাকেও গত ১৬ জুন রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির ৯ নাম্বার রোডের ১১ নাম্বার বাসার ৬ তলা থেকে সাদা পোশাকের লোকজন তুলে নিয়ে যায় বলে সংগঠন ও পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।
ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান হাফিজুর রহমান বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা নিশ্চিত করে বলেন, পুলিশের টহল গাড়ী লক্ষ করে একদল সন্ত্রাসী গুলি চালালে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। খবর পেয়ে আমি এবং সার্কেল এসপি স্যার অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। যখন গোলাগুলি বন্ধ হয় তখন আমরা ২ জনের লাশ উদ্ধার করি। এ সময় আমাদের তিনজন পুলিশ সদস্যও আহত হন বলে ওসি জানান।
তবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বদনপুর গ্রামের রজব আলী লাশ দুইটি তার ছেলে শহীদ আল মাহমুদ ও অন্যজন শিবির নেতা আনিচুরের বলে সনাক্ত করেন।
পুলিশ বলছে, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) প্রবীর কুমারসহ তিনজন আহত হয়েছেন। অন্য দুজন হলেন কনস্টেবল রাব্বী হাসান, তরিকুল ইসলাম। ঘটনাস্থল থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি, ধারালো অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধারের দাবি করেছে পুলিশ। আহত পুলিশ সদস্যরা ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।
ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে তেতুলবাড়ীয়া এলাকায় একদল দুর্বৃত্ত নাশকতা সৃষ্টির জন্য অবস্থান করছে। খবর পেয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার টহল পুলিশ তেতুলবাড়ীয়া রাস্তা দিয়ে টহল দিচ্ছিলো। পুলিশ টহলের সময় তেতুলবাড়ীয় গ্রামের উত্তর মাঠের দিকে দুর্বৃত্তরা পুলিশের গাড়ী লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। উভয় পক্ষের প্রায় ২০ মিনিট গুলি বিনিময় হয়। এর একপর্যায়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুইটি লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
উল্লেখ্য গত ১৮ জুন নিখোঁজ সন্তানের উদ্ধারের দাবীতে সাংবাদিক সম্মেলন করে নিহত শহীদ আল মাহমুদের বৃদ্ধ পিতা রজব আলী। তিনি সে দিন সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করেন, গত ১৩ জুন রাত ১২টার দিকে সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিরা পুলিশ পরিচয় দিয়ে তার ছেলে শহীদ আল মাহমুদকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বদনপুর গ্রাম থেকে তুলে নিয়ে যায়। সেই থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয় ঘটনার সময় ১০/১২ জন লোক একটি কালো মাইক্রোবাস ও ৩টি মোটর সাইকেল এসে তার ছোট ছেলে শহীদ আল মাহমুদকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এমতাবস্থায় তিনি এবং তার পরিবার ছেলের জীবন নিয়ে শংঙ্কিত। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শহীদ আল মাহমুদের বড় বোন মদিনা খাতুন এবং মামা ফিরোজ আহমেদ। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে শিবির কর্মী শহীদ আল মাহমুদকে আটক করা হয়নি বলে জানানো হয়।
এদিকে ঝিনাইদহ শহরের পাবলিক হেলথ জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন সোহেল রানা ২৭ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। গত ৩ জুন শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর একটি কালে রংয়ের হাইয়েজ গাড়িতে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে কে বা করা তাকে তুলে নিয়ে যায়। সেই থেকে তার কোন সন্ধান নেই। সোহেল রানা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কামারকুন্ডু গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে। সোহেল রানার ভাই মাসুদুর রহমান জানান, ঘটনার দিন সোহেল রানার সাথে কিছু অজ্ঞাত ব্যক্তি কথা বলতে দেখা গেছে। এ ঘটনার পর থেকেই সোহেল রানাকে আর খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের ধারণা আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাকে তুলে নিয়ে যেতে পারে। তবে পুলিশ সোহেল রানাকে আটক করে নি বলে জানিয়েছে। এর আগে, গত ১৩ এপ্রিল সকাল ৮ টার দিকে যশোর সদরের হৈবতপুর ইউনিয়নের জোড়াদহ গ্রামের একটি পুকুর থেকে ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ পৌরসভা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আবুজর গিফারি ও অপর নেতা শামীম হোসেনের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। গত ১৮ মার্চ শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে ঝিনাইদহ জামতলা মোড় থেকে দু’টি মোটরসাইকেলযোগে ৪ ব্যক্তি পুলিশ পরিচয়ে যশোর এমএম কলেজের ছাত্র আবুজর গিফারি এবং ২৫ মার্চ ঝিনাইদহ কে সি কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র শামীম হোসেনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে সে সময় অভিযোগ করেছিল তাদের পরিবার ও ছাত্রশিবির।