ক্লিনিক ব্যবসায়ী নজরুল হত্যা মামলাটি তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা তিয়রবিলা ও হাকিমপুর গ্রামে সন্ত্রাসী কর্তৃক বাড়িঘর গোডাউন দোকানপাট ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ মালামাল ভস্মীভূত করে নিঃস্ব ও আশ্রয়হীন করায় আর্থিকভাবে সাহায্যের আবেদন করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ১০ পরিবার। গতকাল বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছে। আবেদনের অনুলিপি প্রদান করা হয়েছে পুলিশ সুপার ও আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে। আবেদনে তিন কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।

গত ৬ জুন ক্ষতিগ্রস্ত ১০ গ্রামবাসীরা হলেন- আলমডাঙ্গার তিয়রবিলা গ্রামের আব্দুল মান্নান চৌধুরী এক কোটি টাকা, আজিজুর রহমান চৌধুরীর ১ কোটি ২০ লাখ টাকা, আলি হোসেন চৌধুরীর ১০ লাখ টাকা, আব্দুল্লাহ চৌধুরীর ৫০ লাখ টাকা, কনেস আলীর ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, ছারে খাতুনের ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, মজিবর রহমানের ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা, হাকিমপুরের আনোয়ার হোসেনের ২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা, মতিয়ার হোসেনের ৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা এবং তোফাজ্জেল হোসেন মণ্ডলের ১০ লাখ ২০ হাজার টাকার বাড়িঘর, আসবাবপত্র, খাদ্যদ্রব্য, জমির কাগজপত্র, মোটরসাইকেল, পাটের গোডাউন, ধানের গোলা, জামাকাপড়, ঘাট তোষক ও পাউয়ারট্রিলারসহ মূল্যবান দ্রবাদি বিনষ্ট হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের কাছে সাহায্যের আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৬ জুন বেলা ৩টা ৫০ মিনিটের  দিকে খাসকররা ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান রুন্নুর নেতৃত্বে ২০-২৫ জন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি ও দোকানপাটে অতর্কিত হামলা চালিয়ে নগদ টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট ও ভাঙচুর করে এবং পেট্রোল ঢেলে ঘরবাড়ি মোটরসাইকেল গোডাউন জ্বালাইয়া দেয়। এতে বাড়ির সমস্ত মালামাল খাদ্যদ্রব্য বস্ত্র ও জমির কাগজপত্র খোয়া ও বিনষ্ট হয়। আসছে পবিত্র ঈদুল ফিতরে ১০ পরিবারের মধ্যে কোনো আনন্দ নেই। বইছে বিষাদের বন্যা।

ঘরবাড়ি আগুন দেয়ার ঘটনায় আলমডাঙ্গা আদালত ও থানাসহ মোট ৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ৭টি মামলার মধ্যে আলমডাঙ্গা থানার এসআই মাসনুন আলম ৪টি মামলা এবং এসআই মোস্তাফিজুর রহমান ৩টি মামলা তদন্ত করছেন। এ মামলায় আলী হোসেন নামে একজন আসামিকে আটক করেছে পুলিশ। আগুন লাগানোর ঘটনার প্রধান আসামি খাসকররা ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমানকে ধরতে পুলিশ গত ১০ জুন ভোররাতে তার বাড়িতে অভিযান চালালেও চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান কৌশলে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান এবং বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন।

এদিকে গত ৬ জুন ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু থেকে নিজগ্রাম আলমডাঙ্গার তিয়রবিলার লোকমানের বাড়িতে বৌভাতের দাওয়াত খেতে আসার পথে তিয়রবিলা গ্রামের তালুকদারড়ি মাঠের মধ্যে আইয়ুব আলীর পাটখেতে একদল অস্ত্রধারী নজরুল ইসলাম নামে এক ক্লিনিক ব্যবসায়ীকে গলাকেটে ও গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় পরদিন আলমডাঙ্গা থানায় চারজনের নাম উল্লেখ করে নজরুলের চাচা আবু তালেব একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছেন আলমডাঙ্গা থানার ওসি তদন্ত মেহেদী হাসান। এ মামলায় কোনো আটক নেই। মামলাটি তদন্তে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু গিয়ে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন তদারকি করেছেন। গত ২৯ জুন তিনি এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের মা আনোয়ারা বেগম, নজরুলের স্ত্রী চম্পা বেগম ও ভাই আকতার হোসেনের সাথে দেখা করে মামলার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছেন। নজরুল ইসলামের তিয়রবিলা বাড়িতে তার মা আনোয়ারা বেগম থাকলেও বর্তমানে তার ছেলে আকতারের সাথে হরিণাকুণ্ডুতে বসবাস করছেন। ঈদও সেখানে করবেন বলে জানিয়েছেন।

অপরদিকে নজরুল হত্যা মামলায় তার স্ত্রী চম্পা বেগম গত ৯ জুন বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা আমলি আদালতে খাসকররা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান তাফছির আহমেদ মল্লিক লালসহ ২২ জনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে এবং এজাহার হিসেবে গণ্য করে থানায় পাঠানো হয়। পরে থানার প্রতিবেদন পেয়ে একই সময়ে একই ঘটনায় পূর্বেই নজরুলের চাচা আবু তালেবর অভিযোগের প্রেক্ষিতে আলমডাঙ্গা থানায় মামলা রুজু হয় এবং তদন্ত চলছে। সে কারণে আদালত থেকে বর্তমানে চম্পা বেগমের দায়ের করা সিআর ২৮০/১৬ নং মামলাটির অনুসন্ধান কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।

 

Leave a comment