নির্দেশদাতার পরিচয় গোপন করছে পুলিশ!
স্টাফ রিপোর্টার: আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার দুজন গতকাল রোববার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম (ষষ্ঠ আদালত) মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। এরা হচ্ছে মো. মোতালেব ওরফে ওয়াসিম (২৭) ও আনোয়ার হোসেন (২৮)।
আদালতসূত্র জানায়, ভাড়াটে খুনি হিসেবে টাকার বিনিময়ে তারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে জবানবন্দিতে জানিয়েছে। তাত্ক্ষণিকভাবে জবানবন্দির বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি। গতকাল বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা ২০ পর্যন্ত এই জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। শেষে রাত ৯টা ৩৫ এ পুলিশ প্রহরায় তাদের চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
এর আগে গতকাল বিকেল ৩টায় চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার সিএমপি কার্যালয়ের সামনে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েছেন, ওয়াসিম একজন পেশাদার খুনি। আদালতে নেয়ার আগে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ওয়াসিম জানিয়েছে সে-ই মিতুকে গুলি করেছে। আর তার ‘ব্যাকআপ ফোর্স’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে আনোয়ার। তবে খুনের মূল নির্দেশদাতা কে-সে বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে কিছু বলেননি পুলিশ কমিশনার। তার দাবি, এটা এখনো বলার সময় আসেনি। এ ঘটনায় জড়িত অন্যরা ধরা পড়লে এবং অস্ত্র উদ্ধারের পর এটা বলা যাবে।
পুলিশ কমিশনারের এই ব্রিফিংয়ের পর সাধারণ মানুষের মধ্যে সন্দেহ দানা বেঁধেছে যে, পুলিশ কিছু গোপন করতে চাইছে কি-না। কারণ খুনিরা খুন করার কথা স্বীকার করল, অথচ খুনের মূল নির্দেশদাতার কথা জানায়নি, তা হতে পারে না। অনেকেই বলছেন, অবশ্যই খুনিরা নির্দেশদাতার নাম বলেছে। পুলিশ সেটা গোপন করে কাউকে বাঁচাতে চাইছে। কারণ নির্দেশদাতা কোন অপরাধী বা উগ্রবাদি গোষ্ঠী হলে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে উচ্চস্বরে বলে দিতো। নিশ্চয় এমন কারো নাম এসেছে যেটা বলতে পুলিশও বিব্রত। অথবা পুলিশ নিজেদের স্বার্থে তাকে বাঁচাতে চাইছে। এই ঘটনার সঙ্গে খোদ পুলিশের কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে পুলিশের মনোবলে চিড় ধরতে পারে। অথবা তিনি এতটাই প্রভাবশালী যে, তাকে বাঁচিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে সবাই মিলে।
এদিকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, মূসা নামে এক ব্যক্তি এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে ওয়াসিম ও আনোয়ারকে ভাড়া করেছিলেন। হত্যা সংঘটনের সময় ঘটনাস্থলের কাছাকাছি এলাকাতেই মূসা অবস্থান করছিলেন। হত্যাকাণ্ড শেষে ওয়াসিম ও আনোয়ারের হাতে তিন-চার হাজার টাকা করে দিয়ে মূসা বলেছিলেন, ‘তোরা এখন পালা। লেন-দেন পরে হবে।’ সিএমপি কমিশনার ব্রিফিংয়ে জানান, শনিবার চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থেকে ওয়াসিমকে এবং নগরীর বাকলিয়া এলাকা থেকে আনোয়ারকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ কমিশনার বলেন, এই হত্যাকাণ্ডে ৭ থেকে ৮ জনের একটি সংঘবদ্ধ চক্র অংশ নিয়েছিলো।
মিতুর স্বামী বাবুল আক্তারকে গত শনিবার ঢাকায় জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ কমিশনার বলেন, বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদই করা হয়নি। তদন্তের স্বার্থে তার সাথে মামলা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাবুল আক্তারকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে সিএমপি কমিশনার বলেন, বাবুল আক্তার জড়িত এমন সন্দেহ হলেতো তাকে আটকই করা হতো। নজরদারি কেন। বাবুল আক্তারের নিরাপত্তার জন্য সঙ্গে পুলিশ দেয়া হয়েছে।
সিএমপি’র জনসংযোগ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ওয়াসিমের বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের গলাচিপা গ্রামে। সে একজন পেশাদার খুনী। তার বিরুদ্ধে নগরী ও জেলার বিভিন্ন থানায় খুন, ডাকাতি, অস্ত্র, পাহাড় কাটাসহ ৮-১০টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে রাঙ্গুনিয়ায় রাশেদ হত্যা মামলায় দেড় বছর এবং ডাকাতি মামলায় ৬ বছর সে কারাগারে ছিলো। অন্যদিকে, আনোয়ারের বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার রাঙামাটিয়া গ্রামে। সে পেশায় একজন সিএনজি অটোরিকশা চালক। সে মিতু হত্যার সময় সে ঘটনাস্থলে ছিলো।
মিতুকে কেন খুন করা হয়েছে?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ কমিশনার বলেন, দুজন আসামিকে কেবল পেয়েছি। বাকিদেরকে ধরতে পারলে এবং তদন্ত সম্পন্ন হলে বাকিটুকু বলতে পারবো। আমি আসলে অনুমানের ওপর কিছু বলতে চাই না। এই দুজন হত্যাকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে। এটি তারা স্বীকার করেছে। এর মধ্যে ওয়াসিম মোটরসাইকেলে ছিল। সেই গুলি করেছে। এর আগে আবু নসর গুন্নু ও মো. শাহজামান রবিন নামে দুজনের গ্রেফতার হওয়া প্রসঙ্গে পুলিশ কমিশনার বলেন, এই মামলায় গ্রেফতার দুজনই (ওয়াসিম ও আনোয়ার)। আরো যাদেরকে আনা হয়েছিলো তাদেরকে গ্রেফতার বলার সুযোগ নেই। শুধু তথ্য নেয়ার জন্য অনেকের সাথে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি বা খবর নিয়েছি। এখন পর্যন্ত এই মামলায় আগের দুজনের (গুন্নু ও রবিনের) কোনো সমপৃক্ততা পাওয়া যায়নি। মামলা নিষ্পত্তির পর তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।