স্টাফ রিপোর্টার: গৃহবধূ খুশি খাতুন হত্যার প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। এ সময় গাঢাকা দেয়া খুশির শাশুড়ি শেফালী খাতুনকে দৌলাতদিয়াড়ের কাজলের বাড়ি থেকে আটক করে বিক্ষুব্ধরা। আটকের পর জনসম্মুখে নিলে শেফালীর ওপর চড়াও হন তারা। খবর পেয়ে উত্তেজিত জনতার কাছে থেকে শেফালী খাতুনকে আটক করে থানা হেফাজতে নেয় পুলিশ। গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে খুশি হত্যার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করেন একাট্টা হয় এলাকার শ শ নারী-পুরুষ। নির্যাতনের পর খুশিকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে খুশির পরিবার ও বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। পরে শনিবার বিকেলে খুশি হত্যার বিচার দাবিতে আবারও বিক্ষোভ করে স্থানীয়রা। এ সময় খুশির শ্বশুরবাড়িতে হামলা করে তারা। হামলায় ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এদিকে খুশির শরীরের বিভিন্ন স্থানে কামড়ানোর দাগ ছিলো বলে দাবি করে তার পরিবার। খুশি হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন তারা।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা দৌলাতদিয়াড়ের বঙ্গজপাড়ার গৃহবধূ খুশি খাতুনকে (১৫) হত্যার প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় জনতা। তারা অভিযোগ করেন স্বামী, শ্বশুর, মামাশ্বশুর, শাশুড়িসহ পরিবারের লোকজন খুশিকে নির্যাতনের পর হত্যা করেছে। হত্যা করে রশি দিয়ে খুশির গলায় ফাঁস লাগিয়ে দেয় তারা। ঘটনার দিন থেকে স্বামী রাকিবুল ইসলাম পলাতক রয়েছে। গত শুক্রবার থেকে শ্বশুর জসিম উদ্দীন, মামাশ্বশুর জাহাঙ্গীর আলম, শাশুড়ি শেফালী খাতুনসহ পরিবারের লোকজন গাঢাকা দিয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে এলাকার শ শ নারী-পুরুষ একাট্টা হয়ে খুশি হত্যার বিচার দাবি করেন। এ সময় শেফালী খাতুন গাঢাকা দিয়ে দৌলাতদিয়াড়ের কাজলের বাড়িতে আছে বলে খবর পান তারা। কাজলের বাড়ি থেকে শেফালী খাতুনকে আটক করে বিক্ষুব্ধরা। তাকে জনসম্মুখে নেয়া হলে শেফালীর ওপর চড়াও হয় উত্তেজিত প্রতিবাদী জনতা। খবর পেয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে দৌলাতদিয়াড়ে পৌঁছায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ। এসআই আব্দুল বারেক সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীকে শান্ত করেন। পরে জনতার মাঝ থেকে শেফালী খাতুনকে আটক করে থানা হেফাজতে নেয় পুলিশ। এদিকে শনিবার বিকেলে আবারও একাট্টা হয় প্রতিবাদী জনতা। এ সময় খুশি খাতুনের শ্বশুরবাড়িতে হামলা চালায় তারা। হামলায় বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর করে উত্তেজিত জনতা। হত্যার ঘটনায় পুলিশের অগ্রগতি নিয়েও বিভিন্ন মন্তব্য করেন বিক্ষুব্ধরা। পরিবারসহ শ শ মানুষের অভিযোগের পরও পুলিশ কাউকে আটক করছে না। এছাড়া খুশি হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলার আসামি জাহাঙ্গীর আলম পুলিশের সামনে থাকলেও তাকে আটক করেনি। শ্বশুরবাড়ির লোকজন একে একে সবাই গাঢাকা দিয়েছে। এখানেই পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ বলে জানিয়েছে খুশির পরিবারসহ প্রতিবাদী জনতা।
নিহত খুশি খাতুনের বোন রোজিনা খাতুন জানান, খুশির মৃতদেহের গোসল করানোর সময় আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে কামড়ানোর দাগ রয়েছে। খুশিকে নির্যাতনের পর হত্যা করেছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
খুশির মা জানান, যৌতুকের জন্য মাঝে মাঝেই খুশিকে নির্যাতন করতো স্বামী রাকিবুল। ৩০ হাজার টাকা যৌতুক দেয়ার পর দৌলাতদিয়াড়ের বাড়িসহ জমিটি দাবি করে রাকিবুলের পরিবার। তাতে রাজি না হওয়ায় প্রায়ই খুশিকে নির্যাতন করতো তারা। খুশি হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন তিনি।
গতকাল শনিবার দুপুরে ওসি তোজাম্মেল হক জানান, শেফালী খাতুনকে বিক্ষুব্ধ জনতার মাঝে থেকে আটক করে নিরাপত্তার জন্য থানায় রাখা হয়েছে। হত্যা মামলা না হওয়ায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হলে হত্যা ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
তবে শেফালী খাতুন আটকের পর গতকাল রাতে থানায় যান আলুকদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আক্তাউর রহমান মুকুলসহ কয়েকজন। রাতে শেফালী খাতুন আটকের বিষয়ে মোবাইলফোনে শেষ খবর জানতে চাইলে সদর থানার ওসি তোজাম্মেল হক অস্বাভাবিক আচরণ করেন। থানায় গিয়ে তথ্য না পাওয়ায় পরবর্তীতে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে চাননি। মোবাইলফোনে কথা বলার সময় বেধে দেন তিনি। তিনি বলেন, আমার সাথে কথা বলতে হলে রাত ১০টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে দৌলাতদিয়াড়ের কিশোরী বধূ খুশির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।