মেহেরপুরে এহসান এস সোসাইটির বিরুদ্ধে প্রায় ৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তার অভিযোগ

 

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুরে এহসান এস রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট লিমিটেড সংস্থা (এহসান এস সোসাইটির) দ্বিগুণ মুনাফা ও লাভ্যাংশ দেয়ার প্রলোভন দিয়ে মেহেরপুরে শতাধিক ব্যক্তির নিকট থেকে সাড়ে ৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকার ভুক্তভোগী গ্রাহকরা প্রতারিত হয়ে মেহেরপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। প্রভাবশালীদের মাধ্যমে সালিস করেছেন। কিন্তু কোনো ফল পাননি। আগামী শুক্রবার আবারও বসবে সালিস বৈঠক।

মেহেরপুর পুলিশ সুপার হামিদুল আলমের কাছে দাখিলকৃত অভিযোগ পত্রে জানা গেছে, সংস্থার ১৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে এলাকার দোকান ব্যবসায়ী, সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবী এবং কৃষকদের কাছ থেকে জামানত টাকার দ্বিগুণ লাভের কথা বলে আনুমানিক সাড়ে ৮ লাখ টাকা জমা নেন। কয়েক মাসের মধ্যে ওই টাকা আত্মসাৎ করে অফিস বন্ধ করে তারা লাপাত্তা হয়েছেন। গ্রাহকরা দীর্ঘদিন পর তাদের খুঁজে বের করে টাকা ফেরত চাইলে সময় চেয়ে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। গ্রাহকদের টাকা ফেরত পাওয়ার আর কোনো সম্ভাবনা না থাকায় তারা পুলিশ সুপারের নিকট অভিযোগ করেছেন। পুলিশ সুপার ভুক্তভোগী গ্রাহকদের সাক্ষাৎকার নিয়ে আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন। অভিযোগকারীরা জানান, ওই সংস্থায় কর্মরত এবং আত্মসাৎকারী ও তার সহযোগীরা হলেন- মাওলানা জহিরুল ইসলাম, রাজু আহমেদ, আবুল কালাম আজাদ, মীর মাহাবুবুর রহমান, জামাল উদ্দিন, মাওলানা আনসার উদ্দিন বেলালী, মাওলানা মহাম্মদ ইয়ারুল ইসলাম, সোলাইমান হোসেন, হিরোক, আব্দুল হান্নান মাস্টার, মওলানা রেজাউল করিম সোহেল, প্রফেসর নজরুল ইসলাম, আপ্তাব মাস্টার, সারাফত আলী ও ইনতাজ আলী। এসব টাকা আত্মসাৎকারীরা নানা প্রলোভন দিয়ে ২০১২ সালে মেহেরপুর কোর্ট রোডে গুড়পট্টিতে অবস্থিত মিন্টু প্লাজার দ্বিতীয় তলায় এহসান এস রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট লিমিটেড সংস্থা নামে অফিস খুলে এলাকার লোকজনদের মনে বিশ্বাস স্থাপন করে অধিক মুনাফা ও লাভ্যাংশের প্রলোভন দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। আর এই টাকা আত্মসাৎকারীরা সকলে ওই সংস্থার গভর্নিং বডির সদস্য। প্রতারিত হওয়া একাধিক ব্যক্তির মধ্যে মেহেরপুর শহরের স্টেডিয়ামপাড়ার বাসিন্দা মোটরসাইকেল মিস্ত্রী ও ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন মুন্না, শিবলু ও ওমরুল বলেন- তাদের সরলতার সুযোগে এহসান এস রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট লিমিটেড সংস্থার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

মোটরসাইকেল মিস্ত্রি জহুরুল বলেন, তার জীবনের গচ্ছিত ৬ লাখ টাকা ও ডিপিএস’র ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৬শ টাকা খোয়া গেছে। দ্বিগুণ মুনাফা ও লাভাংশ পাওয়ার আশায় এই সংস্থায় জমা দিয়েছি। এখন পথে বসেছি। মুন্না বলেন, তাদের প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে অধিক মুনাফার আশায় সংস্থায় এক লাখ টাকা জমা দিয়েছি। এভাবেই শ শ গ্রাহক তাদের সব শেষ হয়ে গেছে বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা সরকারের কাছে এর প্রতিকার চান, প্রতারকদের বিচার চান ও জামানতকৃত টাকা ফেরত চান। অভিযুক্তদের সাথে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে ফোনে কাউকে পাওয়া যায়নি।

এদিকে গতকাল শুক্রবার বিকেলে মেহেরপুর স্টেডিয়াম মাঠে প্রতারণার স্বীকার ভুক্তভোগী গ্রাহকদের নিয়ে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। বিষয়টির সমাধান না হওয়ায় আগামী শুক্রবার পুনরায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় প্রতারণার শিকার গ্রাহকদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন মেহেরপুর সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ গোলাম রসুল, ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ মঞ্জুরুল কবীর রিপন, কোর্ট সমজিদের পেশ ইমাম আলহাজ আনসার উদ্দীন বেলালী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল হান্নান, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বারিকুল ইসলাম লিজন প্রমুখ।