ফেনীতে ইউএনওকে পেটালো আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা

 

স্টাফ রিপোর্টার: ফেনীর পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এএইচএম রাকিব হায়দারকে গতকাল শুক্রবার দুপুরে ফেনীর পরশুরাম উপজেলার চিতলীয়া ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলের সামনে মারধর করেছে সরকার দলীয় নেতা-কর্মীরা। একটি অনুষ্ঠানের খরচ বাবদ নেতা-কর্মীরা টাকা দাবি করলে ইউএনও তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করার জের ধরে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় তিনি জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ইউএনও রাকিব হায়দারকে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে পরে তাকে ফেনী ২৫০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে ইউএনও নতুন কর্মস্থল পরশুরামে যোগদান করেন। এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান গতকাল সকালে বিলোনীয়া স্থলবন্দর পরিদর্শন এবং একটি সমাবেশে অংশ নিতে পরশুরাম যাচ্ছিলেন। এজন্য মন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে ইউএনও রাকিব হায়দার ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ফেনী-পরশুরাম সড়কের ধনিকুণ্ড এলাকায় অপেক্ষা করছিলেন। মন্ত্রী ঘটনাস্থলে আসার আগে স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের উদ্বোধন করেন। সেখানে মন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খায়রুল বাশার মজুমদার তপন ও তার অনুসারীরা অপেক্ষা করছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিব হায়দারের কথা কাটাকাটি হয়। ওই ঘটনার জেরে ধনিকুণ্ড এলাকায় ইউএনও এবং আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা আবার বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতারা ইউএনওকে মারধর করে আহত করেন।

স্থানীয়রা জানান, গতকাল দুপুরে ইউএনওর সাথে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খায়রুল বাশার তপনের সমর্থকদের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এ সময় তপনের কর্মীরা ইউএনওর মাথায় আঘাত করেন। এদিকে হামলার পরপরই পরশুরাম গিয়ে ইউএনওকে ফেনীর ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন জেলা প্রশাসক মো. আমিন উল আহসান ও ফেনীর পুলিশ সুপার রেজাউল হক। পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ওপর হামলার খবর পেয়ে ফেনী জেলা সদর হাসপাতালে সরকারি কর্মকর্তাগণ ছুটে যান। এ সময় নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী, সংসদ সদস্য জাহান আরা বেগম প্রমুখ আহত ইউএনওকে দেখতে হাসপাতালে যান।

আহত উপজেলা নির্বাহী অফিসারের গাড়িচালক মো. আবুল কাশেম বলেন, চিথলিয়ায় হামলার ঘটনাস্থল থেকে আমি কিছু দূর থেকে দেখি ইউএনও স্যারকে কারা যেন মারছে। এ সময় আমি ছুটে যাই। তখন স্যারকে নিয়ে এসে গাড়িতে ওঠালে এখানে এসেও তারা হামলা করে।

জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খায়রুল বাশার তপন বলেন, পরশুরামের উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রাকিব হায়দারের ওপর হামলা হয়েছে এ ধরনের কোনো ঘটনা দেখিনি। আমরা চিথলিয়া ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলের ভিতরে অনুষ্ঠানে ছিলাম। সেখানে ডিসি, এসপি ও ইউএনও সাহেবকে দেখলাম। পরে শুনলাম উনি নাকি হামলার শিকার হয়েছেন। আসলেই কি হামলার স্বীকার হয়েছেন তা জানি না। আপনাদের দেখে হাসপাতালে দেখতে এলাম। তিনি আরো বলেন, যদি হামলা হয়ে থাকে, তবে দেশের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সের ইউএইচ অ্যান্ড এফপিও ডা. মো. হাবিবুল করিম জানান, পরশুরামের উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাকিব হায়দার মাথায় আঘাত নিয়ে হাসপাতালে আসেন। তাকে প্রাথমিক চিকিত্সা দেয়া হয়। মাথার ব্যথা না কমায় উন্নত চিকিত্সার জন্য ফনীর ২৫০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ফেনীর জেলা প্রশাসক মো. আমিন উল আহসান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি বিষয়টি নৌ-পরিবহন মন্ত্রী মো. শাজাহান খান, ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য শিরিন আখতারসহ অন্যদের অবহিত করেছেন। এ ঘটনায় পরশুরাম থানায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা হয়েছে। ইউএনওর গাড়িচালক আবুল কাশেম বাদী হয়ে মামলা করেন। এজাহারে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খায়রুল বাশার তপন, চিথলিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন, পরশুরাম পৌর কাউন্সিলর আব্দুল মান্নানসহ সাতজনের নাম এবং ১০/১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি হিসাবে উল্লেখ করা হয়।

সখীপুরে ইউএনওকে হুমকি, যুবকের ৬ মাসের কারাদণ্ড: টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এসএম রফিকুল ইসলামকে ফোনে ক্ষতিসাধনের হুমকি দেয়ার অপরাধে বিল্লাল হোসেন (৩০) নামের এক যুবককে ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম রফিকুল ইসলাম এ দণ্ডাদেশ দেন। দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত যুবক উপজেলার হতেয়া রাজাবাড়ি গ্রামের ফরহাদ হোসেনের ছেলে।

সখীপুরের ইউএনও এসএম রফিকুল ইসলাম বলেন, কিছুদিন ধরে ওই যুবক আমাকে নাম পরিচয়হীনভাবে অজ্ঞাত স্থান থেকে বিভিন্ন সময়ে মোবাইলফোনে হুমকি দিয়ে আসছিলো। মোবাইলফোনের নাম্বারের সূত্র ধরেই হুমকি দাতা ওই যুবককে খোঁজে বের করে সরকারি কর্মচারীকে ক্ষতি সাধনের অপরাধে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এ সাজা দেয়া হয়। সখীপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আবদুল্লাহ বলেন, বিল্লাল হোসেনকে শুক্রবার সকালে টাঙ্গাইল জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।