লন্ডনের প্রথম মুসলিম মেয়র সাদিক খান

মাথাভাঙ্গা মনিটর: সাদিক খানের বিরুদ্ধে প্রচারে যতটা আক্রমণাত্মক ছিলেন, ভোটের বাক্সে ততোটাই যেন অসহায় হয়ে ধরা দিলেন জ্যাক গোল্ডস্মিথ। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী জ্যাক গোল্ডস্মিথকে ৯ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে প্রথম মুসলিম হিসেবে লন্ডনের মেয়র নির্বাচিত হলেন বিরোধী দল লেবার পার্টির প্রার্থী সাদিক খান। গত বৃহস্পতিবার লন্ডন অ্যাসেম্বলি ও লন্ডনের মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, লন্ডন অ্যাসেম্বলির ১৪টি আসনের আটটিতে বড় ব্যবধানে জয় পেয়ে প্রথম পছন্দের ভোটেই নির্বাচিত হয়েছেন সাদিক। সাদিকের প্রাপ্ত ভোট ৪৪ শতাংশ। আর প্রতিদ্বন্দ্বী জ্যাক পেয়েছেন ৩৫ শতাংশ ভোট। লন্ডনের মেয়র পদে মোট প্রার্থী ছিলেন ১২ জন।

সাদিকের বিজয়কে যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক ইতিহাসের নতুন মোড় হিসেবে দেখা হচ্ছে। কেননা, সাদিক প্রথম মুসলিম এবং প্রথম কোনো অশ্বেতাঙ্গ, যিনি বহুসংস্কৃতির তীর্থখ্যাত এই মহানগরের মেয়র নির্বাচিত হলেন। একজন অভিবাসী বাসচালকের সন্তান হওয়ার কারণেও সাদিকের এমন অর্জন অন্য রকম তাৎপর্য বহন করছে। কনজারভেটিভ দলীয় মেয়র বরিস জনসনের স্থলাভিষিক্ত হবেন সাদিক।

যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল লেবার পার্টির প্রার্থী সাদিক খান পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এবং মুসলিম। তাঁর এই পরিচয়কে হাতিয়ার করে প্রচারণায় নেমেছিলেন জ্যাক গোল্ডস্মিথ। এখন নির্বাচনে হারের জন্য জ্যাকের ওই বিষাক্ত প্রচারণাকেই দায়ী করা হচ্ছে।

একই দিন ইংল্যান্ডের ১২৪টি কাউন্সিলের স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পাশাপাশি স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসে অনুষ্ঠিত হয় প্রাদেশিক সরকার ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন। দলের প্রভাবশালীদের মতের বিরুদ্ধে লেবার পার্টির নেতা নির্বাচিত হওয়া বামপন্থী জেরেমি করবিনের জন্য এটা ছিল প্রথম কোনো নির্বাচনী পরীক্ষা। ধারণা ছিল, স্থানীয় নির্বাচনে লেবার ধরাশায়ী হবে এবং সে অজুহাতে নেতৃত্ব থেকে উৎখাতের শিকার হবেন তিনি। আগের নির্বাচনের চেয়ে ভালো করতে না পারলেও স্থানীয় নির্বাচনে শীর্ষস্থান ধরে রাখায় এ যাত্রায় বেঁচে গেছেন করবিন। বিশেষ করে, দীর্ঘ আট বছর পর সাদিকের হাত ধরে লন্ডনের কর্তৃত্ব ফিরে পাওয়াকে এ নির্বাচনে লেবারের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সমালোচকেরা বলছেন, টানা ছয় বছর ক্ষমতায় রয়েছে কনজারভেটিভ। ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যুক্তরাজ্যের থাকা না-থাকা প্রশ্নে দলটি অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত। ২০২০ সালে দলকে ক্ষমতায় ফেরাতে চাইলে এমন পরিস্থিতির সুযোগে করবিনের আরও ভালো করা উচিত ছিল। জবাবে লেবার বলছে, এটা করবিনের লড়াইয়ের সূচনা মাত্র; শেষ নয়। স্কটল্যান্ডের প্রাদেশিক নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালেও টানা তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় ফিরেছে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি)। ২০১১ সালের চেয়ে ছয়টি আসন কম পেয়েছে। ফলে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার প্রশ্নে পুনরায় গণভোট আয়োজনে এসএনপির যে শক্ত অবস্থান, তা অনেকটা নমনীয় হয়ে পড়বে বলে ধারণা। গত বছর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের মতো এই প্রাদেশিক নির্বাচনেও স্কটল্যান্ডে অনেকটা ধরাশায়ী হয়েছে লেবার পার্টি। ১৩টি আসন হারিয়ে দলটি এবার তৃতীয় অবস্থানে নেমে গেছে। আর স্কটল্যান্ডের রাজনীতিতে প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে কনজারভেটিভ।

ওয়েলস প্রাদেশিক নির্বাচনে সবচেয়ে লক্ষণীয় দিক ছিল অভিবাসনবিরোধী দল ইউকে ইন্ডিপেনডেন্ট পার্টির (ইউকিপ) আবির্ভাব। প্রথমবারের মতো ছয়টি আসন পেয়ে ওয়েলসে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিয়েছে দলটি। ইইউ ছেড়ে আসার পক্ষে জোর প্রচারে থাকা ইউকিপের ভোটের অংশীদারত্ব ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডেও বেড়েছে।