টানা দাবদাহে দামুড়হুদা ও আলমডাঙ্গায় আরও দুজনের মৃত্যু

 

এল নিনোর প্রভাব বাংলাদেশেও : গরমে পুড়ছে চার মহাদেশ

ভারতে মারা গেছে ১৬০ জন : থাইল্যান্ডে তাপমাত্রা ৬৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ

স্টাফ রিপোর্টার: তাপপ্রবাহের পরিধি দিন দিন বেড়েই চলেছে। টানা ২৪ দিন লাগাতার ভাবে দাবদাহের চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়াসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলও উত্তরবঙ্গ তেতে উঠেছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, ৪ উপমহাদেশই তীব্র খরায় পুড়ছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। এল-নিনোর প্রভাবেই এমনটি হয়েছে বলে আবহাওয়াবিদদের অভিমত। গতকাল হিটস্ট্রোকে আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আব্দুস সোবহান ও দামুড়হুদার ভগিরথপুরে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। চলতি দাবদাহে হিটস্ট্রোকে চুয়াডাঙ্গা জেলা এ পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রাজশাহীতে ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় ছিলো সর্বোচ্চ ৪০ দশমিক ২ ও সর্বনিম্ন ২৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যশোরে গতকাল ৩৯ দশমিক ৪ ও সর্বনিম্ন ২৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা শুরু হয়েছে। প্রাণিকূল ওষ্ঠাগত। চুয়াডাঙ্গায় গতকাল শুক্রবার বেলা বাড়ার সাথে সাথে প্রধান প্রধান সড়কে জনসংখ্যা হ্রাস পায়। তুলনামুলকভাবে জানবহ্ও চলেছে কম। হাসপাতালে বেড়েছে রোগী।

     আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আব্দুস সোবহান (৫৫)। কয়েক দিন পূর্বে তার শরীরে পক্স হলে তিনি বেশ দুর্বল হয়ে পড়েন। গতকাল ২৯ এপ্রিল বিকেলের ভ্যাপসা গরমে তিনি নিজ বাড়িতে স্ট্রোক করে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন।

জানা গেছে, উপজেলার হাটবোয়ালিয়া গ্রামের মৃত ইয়াজ উদ্দীন মণ্ডলের ছেলে আব্দুস সোবহান (৫৫) অল্প বয়স থেকেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল -বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি কয়েক দফা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে উপজেলা বিএনপির একাংশের তিনি ছিলেন সহসভাপতি। গত মঙ্গলবার তার শরীরে পক্স দেখা দেয়। প্রচণ্ড গরমে পক্স হওয়ায় তিনি বেশ দুর্বল হয়ে পড়েন। গতকাল ২৯ এপ্রিল সারা দিন প্রচণ্ড দাবদাহে ক্রমেই কাহিল হয়ে পড়েন। বিকেল ৫টার দিকে ভ্যাপসা গরমে তিনি স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। ক্লিনিকে নেয়ার পূর্বেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় মরহুমের লাশ নামাজে জানাজা শেষে হাটবোয়ালিয়া-হাটুভাঙ্গা কবরস্থানে দাফন করা হবে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ১ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে পরিবারের পক্ষ থেকে সকলের নিকট দোয়া চাওয়া হয়েছে। এদিকে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশ  জাতীয়তাবাদী পেশাজীবী দলের আহ্বায়ক ডিউক হুদা।

দামুড়হুদার ভগিরথপুরে হিটষ্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এক কৃষক এবং প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছে দুই কৃষক। শুক্রবার দুপুরে দামুড়হুদার উপজেলার ভগিরথপুর গ্রামের পুরাতন পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। হিটষ্ট্রোকে নিহত কৃষক আজিজ মালিথা উপজেলার ভগিরথপুর পুরাতন পাড়ার মৃত জলিল মালিথার ছেলে। আহতরা হল একই গ্রামের নাজমুল হোসেন ও খেদের ও মতিয়ার রহমান। ভগিরথপুর গ্রামের কৃষক ইসলাম আলী জানান, দুপুরে গ্রামের গালার দপে ধান কাটার কাজ করছিলেন আজিজ। এ সময় অসুস্থ হয়ে পরেন তিনি। তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে গোপালপুর নামক স্থানে তার মৃত্যু হয়। তিনি আরও জানান, বিকালে আজিজের দাফন কাজে অংশ নেয়ার সময় নাজমুল, দুপুরে দিকে নিজ বাড়িতে খেদের আলী ও মতিয়ার নামে একই গ্রামের দুইজন অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হলে সুস্থ হয়ে যায়।

প্রকৃতির খাম-খেয়ালি আচরণে ওষ্ঠাগত প্রাণী জীবন। কোথাও টানা বৃষ্টি তো কোথাও পানির জন্য চরম হাহাকার। কোথাও শীত, আবার কোথাও তীব্র গরম। কড়া তাপে পুড়ছে আফ্রিকা, এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশ। ইতিমধ্যে ভারতে তীব্র তাপদাহে মারা গেছে ১৬০ জনের বেশি লোক। গরমের রেকর্ড ভেঙেছে থাইল্যান্ডে। গত ৬৫ বছরের মধ্যে দীর্ঘ তাপদাহ চলছে দেশটিতে। তীব্র পানি সঙ্কটে রয়েছে ইথিওপিয়া। বাংলাদেশেও বয়ে যাচ্ছে তাপদাহ। ভারতের এক খবরে বলা হয়েছে, এসব হচ্ছে শক্তিশালী এল নিনোর প্রভাবে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এ মরসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজধসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। রাজশাহী ও কুষ্টিয়া অঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ঢাকা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, দিনাজপুর, সৈয়দপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী ও ভোলা অঞ্চলসহ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহ  থাকতে পারে।

‌চুয়াডাঙ্গার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় দুটি আগেই মর্নিং করা হয়েছে। এরই মাঝে তীব্র গরমে শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘব করতে উচ্চ বিদ্যালয়গুলোর পরিচালনা কমিটিগুলোকে মর্নিং স্কুল চালু করার অনুমতি দিয়েছে সরকার। একই সাথে স্কুলগুলোকে পাঁচ দফা নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক স্তরের শ্রেণি কার্যক্রম চালানোয় এই নির্দেশনা জারি করে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠা পরিচালনা করমিটি দাবদাহের কথা বিবেচনায় নিয়ে স্কুলের সময়সূচি পুনর্বিন্যাস করতে পারবে। যেসব স্কুলে দুই শিফটে ক্লাস হয়, সেখানে প্রাত্যহিক সমাবেশ স্থগিত করে নির্ধারিত সময়ের আগেই স্কুল চালু করারও অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সেই সাথে ছাত্রদের জন্য নিরাপদ পানীয় জলের ব্যবস্থা করারও নির্দেশ দিয়েছে মাউশি।

অস্ট্রেলিয়ার একদল বিজ্ঞানী সতর্কবার্তা দিয়েছেন, চলতি বছর এই এল নিনো আরও শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া দেখাবে। জাতিসংঘ বলেছে, এল নিনোর প্রভাবে জলবায়ুর মারাত্মক পরিস্থিতির শিকার বিশ্বের প্রায় ছয় কোটি লোকের সহযোগিতা প্রয়োজন।

এল নিনো কী: এল নিনো হচ্ছে বায়ুমণ্ডলীয় এবং গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের সমুদ্রগুলোর মাঝে একটি পর্যায়বৃত্ত পরিবর্তন। এর প্রভাবে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ার লক্ষণ দেখা দেয় এবং আবহাওয়ার নিয়মিত ধরণগুলোতে পরিবর্তন দেখা দেয়। এল নিনো হচ্ছে পর্যায়বৃত্তের উষ্ণ পর্যায়, আর লা নিনা হচ্ছে শীতল পর্যায়। পর্যায়বৃত্ত এই পরিবর্তনের কোন নির্দিষ্ট সময় নেই, তবে প্রতি ৩ থেকে ৮ বছরের মাঝে দেখা যায়।  এল নিনো বন্যা, খরা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে সম্পর্কযুক্ত। ২০১৫ সালে শুরু হওয়া এল নিনো ২০১৬ সালেও থাকবে বলে জানান আবহাওয়াবিদরা।

গরমে পুড়ছে চার মহাদেশ: গ্রীষ্মকাল আসতে না আসতেই গরমে প্রাণ উষ্ঠাগত। এই পরিস্থিতি কেবল বাংলাদেশে নয়, প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত-মিয়ানমারের পরিস্থিতি আরো খারাপ। গ্লোবাল ইন্টেগ্রেটেড ড্রট মনিটরিং অ্যান্ড প্রেডিকশন সিস্টেম (জিডম্যাপস) এর ম্যাপে দেখা যায় এশিয়ার মধ্যে মিয়ানমার, থাইল্যাল্ড, লাওস, কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনামে গরম-খরা-অনাবৃষ্টিতে জীবন-কৃষি সবই বিপন্ন। প্রতিদিনই হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে মানুষ। এশিয়ার বাইরে আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশে বৃষ্টিপাতের দেখা নেই। দক্ষিণ আমেরিকার আর্দ্র ব্রাজিল ৩৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরার কবলে রয়েছে। অনাবৃষ্টির কারণে ৪৯ ট্রিলিয়ন লিটার পানি হারিয়েছে। নাসার তথ্য বলছে, হন্ডুরাস ও গুয়াতেমালায় ৩০ লাখের বেশি মানুষ কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। ইকুয়েডর ও এল সালভাদরে অনাবৃষ্টির কারণে ৬০ লাখ লোক অপুষ্টির শিকার হচ্ছে।

আফ্রিকাতে অনাবৃষ্টি-খরার কারণে ফসল না হওয়ায় চার কোটি মানুষ খাদ্য সঙ্কটের মুখে পড়েছে। মালাবি, মোজাম্বিক, লেসেথো এবং জাম্বিয়াতে খরা ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। ইথিওপিয়া, ইরিত্রিয়া, জেবুতি এবং সোমালিয়ায় অনাবৃষ্টিতে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। অস্ট্রেলিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিউ সাউথ ওয়েলস, সাথে অস্ট্রেলিয়া, তাসমানিয়াতে বৃষ্টির দেখা মিলছে না। কুইন্সল্যান্ড ও নিউ সাউথ ওয়েলসে অনাবৃষ্টি চলছেই।

আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী এল নিনোর কবলে পৃথিবী। যে কারণে চলতি বছরটি যে হতে যাচ্ছে সবচেয়ে উষ্ণতম বছর, এমন আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল। ফলে ২০১৬ সালে ব্যাপক খরা এবং খাদ্যসঙ্কটের মুখোমুখি হতে চলেছে বিশ্ব। এ কারণে ২০১৬ সালে ক্ষুধা ও রোগবালাইয়ের প্রবণতা বাড়বে।

ভারতে মারা গেছে ১৬৫ জন: ভারতে তীব্র তাপদাহে মারা গেছে ১৬০ জনের বেশি লোক। বেশির ভাগই মারা গেছে দক্ষিণের রাজ্য অন্ধ্র প্রদেশ ও তেলেঙ্গানায়। তাপামাত্র বৃদ্ধির কারণে খরা বাড়ছে। একইসাথে দেশব্যাপী পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। দেশটির সুপ্রিমকোর্টে দেয়া সরকারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত কারণে হুমকির মুখে রয়েছে দেশটির প্রায় ৩৩ কোটি লোক। বিহারে অদ্ভূত নির্দেশনা জারি করা হয়েছে গরমের কারণে। সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে রাজ্যে রান্না করলে দুই বছরের কারাদণ্ড হবে। ভারতে সাধারণত মে ও জুন মাসে বেশি গরম পড়ে। কিন্তু এপ্রিলেই তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় এ কারণে মৃত্যু হার বাড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত বছর ভারতে তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত কারণে ২৪২২ জনের মৃত্যু হয়। ভারতের তাপদাহের কারনে ১৯৯২ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত ২২ হাজার ৫৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

থাইল্যান্ডে ৬৫ বছরের মধ্যে রেকর্ড তাপামাত্রা: গরমের রেকর্ড ভেঙেছে থাইল্যান্ডে। গত ৬৫ বছরের মধ্যে দীর্ঘ তাপদাহ চলছে থাইল্যান্ডে। দেশের অনেক জায়গাতেই তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছে। কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৪৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। থাইল্যান্ডে পানির অভাবে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। পূর্ব এশিয়ার সব কটি দেশের পরিস্থিতিও একই রকম।

এল নিনোর প্রভাব বাংলাদেশেও: আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এপ্রিল মাস দেশে সবচেয়ে উঞ্চতম মাস। এই সময়ে সূর্যের অবস্থান থাকে মাথার ওপরে। এছাড়া দিনের চেয়ে রাতের ব্যাপ্তিকালও কম। ফলে রাতের ব্যাপ্তিকাল কম হওয়ায় উপরের বায়ুমণ্ডল ঠাণ্ডা হওয়ার সুযোগ কম পাচ্ছে। যাতে গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে। তবে তারা বলছেন, বাংলাদেশ এবং ভারতের বিশাল এলাকাজুড়ে এল নিনোর প্রভাবে এই সময়ের স্বাভাবিক বৃষ্টি হচ্ছে না। এই সময়ে বঙ্গোপসাগর থেকে দখিনা বাতাস দেশের ভূখন্ডে প্রবেশ করে বজ বৃষ্টি সৃষ্টি করে। এবার হঠাত্ করে পশ্চিমা বায়ু এই সময়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ওই দখিনা বায়ুকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, মৌলভীবাজারসহ কয়েকটি জেলার দিকে ঠেলে দিয়েছে। ফলে ওই এলাকায় টানা বৃষ্টি হচ্ছে আর সারা দেশ শুষ্ক খটখটে আবহাওয়া বিরাজ করছে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রাজশাহী বিভাগে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ঢাকা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাঈজদীকোর্ট, খুলনা, যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলসহ রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ তাপ প্রবাহ পরিস্থিতি আরো ২/৩ দিন অব্যাহত থাকতে পারে।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছে, কুষ্টিয়ায় প্রচণ্ড খড়া ও তাপদাহের কারনে মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। সেই সাথে ঘন ঘন লোড শেডিঙের ফলে জেলার সর্বত্র নানা বয়সী মানুষরা চরম দুর্ভোগের মধ্য দিনপাত করছে। এদিকে হাসপাতালে ও চিকিৎসকের নিকট অসুস্থ্য মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দীর্ঘদিন বৃষ্টিপাত না হওয়া এবং প্রচণ্ড তাপদাহে শিশু ও বৃদ্ধ মানুষের নাকাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সকালে সূর্য ওঠার পর থেকেই তাপ বাড়তে থাকে। সন্ধ্যা পর্যন্ত একাধারে এই তাপদাহ প্রবাহমান থাকে। এই সময় গাছের ছায়ার তলে পথচারীদের স্থান হয়। রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল কমে আসে। প্রচণ্ড গরমের কারণে রাস্তার পাশের শরবতের দোকান ও টিউবওয়েলগুলোতে মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। প্রচণ্ড তাপদাহের পাশাপাশি বাতাসের আদ্রতা কমে যাওয়ায় কষ্ট ও দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। এদিকে হাসপাতাল গুলোতে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিকেলের পর সুর্যের তাপ কমে গেলেও প্রচন্ড গরমে নাকাল অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।

এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর ডা. ইফতেখার মাহমুদ বলেন, প্রচণ্ড খড়া ও তাপদাহ পরিবেশ থেকে বাঁচতে সকলকে স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে। এই সময়ে শরীর থেকে লবণ ও খনিজ পানীয় অধিক পরিমাণ নির্গত হয়। এতে মাথা ব্যথা, বমিবমি ভাব অথবা বমি, মাংশপেশী সংকোচন, অচেতন হওয়া, প্রস্রাবের রং পরিবর্তনসহ নানা রকমের সমস্যা দেখা দেয়। প্রচণ্ড গরমে খাবারের স্বাভাবিক মান কমে যেয়ে খাবারে জীবাণু সংক্রামণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেক্ষেত্রে ডায়রিয়া ও পেটের পীড়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই সকলকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রচন্ড গরমের মুহুর্তে শরীরের পুরো ঘাম শুকিয়ে গোসল করতে হবে। অথবা শরীরের ঘাম মুছে ফেলতে হবে। ঘাম থাকা অবস্থায় গোসল করা যাবে না। ঘন ঘন বিশুদ্ধ শরবত, খাবার পানি, এবং ওর স্যালাইন খেলে শরীরের নির্গত খনিজ ও লবনের চাহিদা পূরণ সম্ভব। এই গরমে শিশু এবং বয়োবৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি কষ্ট এবং ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

সরোজগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গত কয়েক দিন যাবত ভ্যাপসা গরমের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদরের সরোজগঞ্জ এলাকায় পাল্লা দিয়ে শুরু হয়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। ফলে বিদ্যুত গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছে। দেশজুড়ে ভ্যাপসা গরম বিরাজ করেছে। সরোজগঞ্জ এলাকায় ভ্যাপসা এ গরম ও তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে শিশু ও বৃদ্ধরা সর্দ্দিজ্বর ডায়রিয়াসহ গরম ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাপমাত্রার ভেতর পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। লোডশেডিঙের ফলে ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া হচ্ছে বিঘ্নিত। কলকারখানার উৎপাদন হচ্ছে হ্রাস। প্রচণ্ড এ ভ্যাপসা গরমের মধ্যে বিদ্যুতের লোডশেডিং বৃদ্ধি পাওয়ায় এলাকাবাসী চরম ক্ষুব্ধ।