মেহেরপুর গাংনীতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্রের টাকা তুলকালাম

?

শিক্ষকদের দু পক্ষের মারামারি : ইংরেজি পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়নি

গাংনী প্রতিনিধি: প্রশ্নপত্রের টাকা উত্তোলন নিয়ে মেহেরপুর গাংনীতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের দু পক্ষের মারামারিতে কয়েকজন আহত হয়েছেন। মারামারিতে উপজেলা পরিষদ এলাকায় ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। গতকাল রোববার বিকেলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সামনেই এ মারামারির ঘটনা ঘটে। আহত কয়েকজনকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। অপরদিকে সময়মতো প্রশ্নপত্র সরবরাহ করতে না পারায় প্রথম সাময়িক পরীক্ষার গতকালের নির্ধারিত ইংরেজি পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়নি। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা। এর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে দায়ী করেছেন শিক্ষকরা।

জানা গেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম সমায়িক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র গ্রহণের জন্য গতকাল বিকেলে এ উপজেলার ১৭৮টি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে জড়ো হন। শিক্ষা অফিস প্রতি সেট প্রশ্নের জন্য তিন টাকা নির্ধারণ করে। এর সাথে বাড়তি একটাকা উত্তোলন করে শিক্ষক সমিতির তহবিলে জমা রাখার প্রস্তাব দেন শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ। এ নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি পারভেজ সাজ্জাদ রাজা ও সহকারী শিক্ষক সমাজের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রকিবের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে তা হাতাহাতির রূপ নেয়। শেষ পর্যন্ত তা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও কিল-ঘুষির পর্যায় পৌঁছে। এতে আহত হন শিক্ষক সমিতির সভাপতি পারভেজ সাজ্জাদ রাজা, সহকারী শিক্ষক সমাজের বকুল হোসেনসহ উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন শিক্ষক। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে স্থানীয় কিছু মানুষ ও কয়েকজন শিক্ষকের আন্তরিক প্রচেষ্টায় তা শান্ত হয়। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়। এ ঘটনায় উভয়পক্ষ মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

গাংনী উপজেলার শিক্ষকদের কয়েকটি সমিতি থাকলেও তারা মূলত দুটি ভাগে বিভক্ত। কখনো রাজনৈতিক বিরোধ আবার কখনো একই রাজনৈতিক দলের গ্রুপিঙের প্রভাব এবং ব্যক্তিগত বিরোধ থেকে শিক্ষকদের মাঝে একাধিক সমিতি সৃষ্টি হয়েছে। গতকালের মারামারির দুটি গ্রুপের মধ্যে অনেক আগে থেকেই বিরোধ চলে আসছিলো। বিবাদমান অবস্থান থেকে দুগ্রপ অনেকটাই মুখোমুখি অবস্থানে ছিলো। মূলত পূর্ব বিরোধের জেরেই গতকালের ওই মারামারির ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন শিক্ষক।

এদিকে শিক্ষকদের মধ্যে এ ধরণের ঘটনায় এলাকায় বইছে তীব্র নিন্দার ঝড়। মানুষ গড়ার কারিগরদের এ হাতাহাতি কিংবা সংঘর্ষ নিয়ে বিরুপ সমালোচনায় পড়েছেন শিক্ষকরা। এদিকে সংঘর্ষের পর স্ব স্ব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজ সোমবারের নির্ধারিত বাংলা প্রশ্ন সংগ্রহ করেছেন। গতকাল রোববার এ উপজেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম সাময়িক পরীক্ষার রুটিন অনুযায়ী ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষা গ্রহণের দিন ধার্য ছিলো। কিন্তু সঠিক সময়ে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করতে ব্যর্থ হন উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার আহসান হাবীব। এ কারণে গতকাল রোববার অনেক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষা দেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে বিদ্যালয়ে যায়। কিন্তু প্রশ্নপত্র না থাকায় পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। পাঠদানও করাতে পারেননি শিক্ষকরা। প্রশ্নপত্রের বিষয়টি নিয়ে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষকরা।

শিক্ষকদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলার প্রেস থেকে গাংনী উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র ছাপানো হয়ে আসছিলো। ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসার আহসান হাবীব এবার মেহেরপুর শহরের এক প্রেসে প্রশ্নপত্র ছাপাতে দিয়েছেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র সরবরাহ হয়নি। এ কারণে শনিবার বিকেলে আহসান হাবীব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের মোবাইলে ফোন করে রোববারের পরীক্ষা পেছাতে আদেশ দেন।

কয়েকজন প্রধান শিক্ষক জানান, বিকেলে বার্তা পেয়ে তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করেন ছাত্রছাত্রীদের কাছে পরীক্ষা পেছানোর খবর দিতে। কিন্তু সবার কাছে খরব পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তাই গতকাল সকালে অনেক ছাত্রছাত্রী পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে বিদ্যালয়ে আসে। পরীক্ষা পিছিয়ে বার্তা দিয়ে তাদেরকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পরীক্ষার প্রস্তুতির কারণে তাদের পাঠদান করানোও সম্ভব হয়নি। প্রশ্নপত্রের বিষয়টি নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। যথা সময়ে পরীক্ষা হবে কি-না তা নিয়ে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকের মাঝে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।

এ উপজেলার ১৭৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ছাত্রছাত্রী প্রায় ৩০ হাজার। প্রথম সাময়িক পরীক্ষার জন্য প্রশ্ন ছাপাতে হবে ১ লাখ ৩০ হাজারের ওপরে। এই বিপুল সংখ্যক প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজ পাওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রেস মালিকরা শিক্ষা অফিসারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে থাকেন। প্রস্তাব দেয়া হয় উপঢৌকন ও নগদ টাকার। এ কারণে সময়মতো প্রশ্নপত্র সরবরাহ করার সক্ষমতা বিবেচনা না করেই আহসান হাবীব মেহেরপুরের ওই প্রেসে প্রশ্ন ছাপাতে দিয়েছেন বলে অভিযোগ শিক্ষকদের। তবে প্রেস থেকে সুবিধা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার আহসান হাবীব জানান, সঙ্গত কারণেই প্রেস থেকে প্রশ্ন সরবরাহ করতে পারেনি। বিষয়টি জেলা শিক্ষা অফিসারকে অবগত করে পরীক্ষার রুটিন পরিবর্তন করা হয়েছে।