স্টাফ রিপোর্টার: রংপুরের তারাগঞ্জে দুটি বাসের মধ্যে সংঘর্ষে ১৩ জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে কমপক্ষে ৬৫ যাত্রী। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের জগদীশপুর গ্রামের তেরমাইল নামক স্থানে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিত্সকরা জানিয়েছেন। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট পাঠানোর সময় পর্যন্ত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালমর্গ থেকে ৯ জনের লাশ আত্মীয়স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা থেকে ছেড়ে আসা ঠাকুরগাঁওগামী সায়মন এক্সক্লুসিভের যাত্রীবাহী বাসের সাথে দিনাজপুর থেকে ছেড়ে আসা রংপুরগামী তৃপ্তি ট্রাভেলসের যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে বাস দুটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই ৯ জন ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে ৯ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- সায়মন এক্সক্লুসিভের হেলপার আকুল মিয়া (২৬), তৃপ্তি ট্রাভেলসের হেলপার দিনাজপুরের ভূষিবন্দর এলাকার অতুল রায়ের পুত্র চন্দন রায় (২৫), সৈয়দপুর উপজেলার পাশারিপাড়া গ্রামের মৃত ইউনুছ আলীর পুত্র কৃষি শ্রমিক মোহাম্মদ আলী কালা (৪৫), সায়েদ আলীর পুত্র কৃষিশ্রমিক আব্দুল মতিন (৪০), বাবু মিয়া (২৭), লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলার মধ্য গুড্ডিমারী গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক একাব্বর আলী (৬৫), কিশোরগঞ্জ উপজেলার লিটন মিয়া (২২), ডোমার উপজেলার মিজানুর রহমান (৪০), তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের ফারুকীয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষিকা জিন্নাত রেহেনা (৩৫)। হতাহতদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন কৃষি শ্রমিক।
সায়মন এক্সক্লুসিভ পরিবহনের যাত্রী আহত কবিরুল ইসলাম জানান, চালক ঘুমে ঢুলছিলেন। এ কারণে কয়েকবার দুর্ঘটনার উপক্রম হয়েছিলো। তেরমাইল এলাকায় অপর একটি গাড়িকে জায়গা করে দিতে গিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে। তবে আরেকটি সূত্র বলছে, তেরমাইলে পৌঁছা মাত্র সায়মন এক্সক্লুসিভ পরিবহনের সামনের ডান দিকের অর্থাত্ চালকের পায়ের নিচের চাকাটি হঠাত্ ফেটে যায়। তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে তৃপ্তি পরিবহন বাসটির সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
এদিকে দুর্ঘটনার পর পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুরের সাথে রংপুরসহ সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ প্রায় ৩ ঘণ্টা বন্ধ থাকে। শ শ যানবাহন সড়কের দু পাশে আটকা পড়ে। পরে রংপুর ও সৈয়দপুর ফায়ার সার্ভিসের সদস্য, ৱ্যাব-পুলিশ ও স্থানীয় জনতা সড়ক থেকে দুর্ঘটনাকবলিত বাস দুটি সরিয়ে নিলে দুপুর ১টার দিকে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে। ঘটনার পরপরই পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম মোস্তফা ফারুক, রংপুরের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার, পুলিশ সুপার আব্দুর রাজ্জাক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এছাড়া ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি মল্লিক ফখরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার ইসরাইল হাওলাদার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিদুল ইসলাম।
রংপুরের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার জানিয়েছেন, নিহতদের দাফনে প্রত্যেকের পরিবারকে ৯ হাজার টাকা করে এবং আহতদের চিকিত্সার্থে তাদের পরিবারকে ৩ হাজার টাকা করে মোট আড়াই লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। রংপুর পুলিশ সুপার আব্দুর রাজ্জাক জানান, দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থল থেকে ৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, মর্গের লাশগুলো তাদের আত্মীয়স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুল্লাহেল বাকী জানিয়েছেন, এ ঘটনায় একটি নিয়মিত মামলা হবে। মামলার তদন্ত অনুযায়ী দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক আ.স.ম বরকতুল্লাহ জানান, চিকিত্সাধীন ২২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের চিকিত্সার জন্য রক্তের সঙ্কট দেখা দেয়ায় হাসপাতালের পক্ষ থেকে জনগণকে রক্ত প্রদানের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।