একান্ত আলাপচারিতায় সময় টিভির বার্তা বিভাগীয় প্রধান তুষার আব্দুল্লাহ : ভালো সাংবাদিককে হতে হবে দক্ষ, প্রজ্ঞা ও মেধাসম্পন্ন

 

স্টাফ রিপোর্টার: আজ ১৭ এপ্রিল। বেসরকারি চ্যানেল ‘সময় টেলিভিশন’ এর পঞ্চমবর্ষপূর্তি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আমেজ এবার একটু ভিন্নভাবে নেয়ার জন্যই সময় টিভির বিশেষ টিম আজ অবস্থান করছে মেহেরপুরের মুজিবনগরের ঐতিহাসিক আম্রকাননে। এখান থেকে সরাসরি প্রচার করা হবে প্রথম রাজধানীর অনুষ্ঠানমালা। দুটি বুলেটিন, সম্পাদকীয় ও সংলাপ সম্প্রচার করে আজকের ঐতিহাসিক দিনে সময় টিভির চলার পথকে করবে আরো সমৃদ্ধ। তার আগে গতপরশু থেকে গতকাল পর্যন্ত সময় টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক তুষার আব্দুল্লাহ অবস্থান করেন চুয়াডাঙ্গায়। পরশু চুয়াডাঙ্গায় পদার্পণ করেই ছুটে যান বোশেখি মেলায়। গতকাল তিনি দৈনিক মাথাভাঙ্গার প্রধান কার্যালয় পরিদর্শনসহ সংবাদিকদের সাথে খোলামেলা আলাপচারিতায় মেলে ধরেন তার জ্ঞানে বিশালতা। একান্ত আলাপচারিতায় বলেন অনেক কথা। গুরুত্ব দেন মফস্বলে সাংবাদিকতা প্রসঙ্গকেই।

মেলার মাঠে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পৌর মেয়র ও দৈনিক মাথাভাঙ্গার সম্পাদক ও প্রকাশকসহ অনেকের সাথে দীর্ঘ আড্ডা আর তীব্র গরমে গ্লাস ভরা লাচ্চির পাইটে চুমুক দিয়ে তোলেন তৃপ্তির ঢেকুর। মনের অজান্তেই বলে ওঠেন চমৎকার আয়োজন। যেন গ্রামবাংলারই ছোঁয়া। ব্যস্ততার মাঝেও মফস্বল সাংবাদিকদের অগ্রগতি ও অবনতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে মফস্বল সাংবাদিকরা আগের মতো দৌঁড়ান না। এখন তারা পেনড্রাইভ সাংবাদিকে পরিণত হয়েছেন। একটা সংবাদের পেছনে শ্রম দিলে সংবাদটি অবশ্যই বলিষ্ঠ হবে। ঘটনাস্থলে গিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করলে যেমন যথাযথ তথ্যবহুল হবে তেমনি সংবাদের মানও বাড়বে। সেক্ষেত্রে একজন সাংবাদিকের অবশ্যই ঘটনাস্থলে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা বাঞ্ছনীয়।

সাংবাদিকতাকে একটি চ্যালেঞ্জিং ও মহান পেশা হিসেবেই দেখি এবং দেখতে চাই। তবে যে পেশার স্বার্থই থাকে অন্যের বা জনস্বার্থের সমস্যা ও সম্ভাবনা তুলে ধরা। যে পেশায় চ্যালেঞ্জ নিয়েই প্রতিনিয়ত পথ চলতে হয়, সে পেশাকে মহান না বললে মনে হয় নিজের বিবেচনাবোধই দুর্বল। সাংবাদিকতার পেশাগত দক্ষতা ও মেধার বহির্প্রকাশ ঘটিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য দিকপাল। যাদের অনন্য অবদানের কথা মানুষ আজও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। যারা তাদের কর্মযজ্ঞের দ্বারা নিজে আলোকিত হয়েছেন এবং গণমাধ্যমকেও করেছেন সমৃদ্ধ। আজ সাংবাদিকতা পেশাটি তারুণ্যের পছন্দের তালিকায় শীর্ষ স্থানে জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু যে সাংবাদিকতাই গণমাধ্যমের প্রাণশক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখছে তা হলো মফস্বল সাংবাদিকতা। কিন্তু এই গৌরবোজ্জ্বল মফস্বল সাংবাদিকতার মাঝেই যেন ভুত লুকিয়ে আছে, প্রচলিত কথায় যাকে বলে সরষের মধ্যেই ভুত লুকিয়ে থাকা। আমরা অনেকেই হলুদ সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে কথা বলি। বলি সুস্থধারার সাংবাদিকতার উৎকর্ষের কথা। কিন্তু ভেতরের সমস্যাগুলোর উত্তরণ না ঘটা পর্যন্ত মফস্বল সাংবাদিকদের এই সমস্যার সমাধান হবে না। কিন্তু এ কথা অনেকেই বুঝেও বুঝতে চান না। এমনকি প্রতিষ্ঠান প্রধানরা দেখেও দেখেন না।

প্রত্যেকটা পেশাতেই একটি নির্দিষ্ট পেশাগত ন্যূনতম যোগ্যতা ও সুযোগ সুবিধার মাপকাঠি আছে। কিন্তু মফস্বল সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে নেই কোনো মাপকাঠি, নেই কোনো পেশাগত আর্থিক সুযোগ সুবিধা। আর না থাকার কারণেই মফস্বল সাংবাদিকরা নিজেকে মেলে ধরতে পারেন না। আমার মতে একজন ভালো সাংবাদিককে হতে হবে দক্ষ, প্রজ্ঞা ও মেধা সম্পন্ন। কিন্তু মফস্বল সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই এটির সম্মিলন ঘটে না। এর উপযুক্ত কারণ হচ্ছে, প্রত্যেক পেশাজীবিই নিজ আয় দিয়ে তার অর্থনৈতিক চাহিদার সমন্বয় ঘটাতে চায়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই মফস্বল সাংবাদিকদের এ প্রত্যাশা পূরণ প্রায় অসম্ভব। গুটি কয়েক স্বনামধন্য পত্রিকা বা টেলিভিশন চ্যানেল ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিক মতো সাংবাদিকদের খোঁজখবর বা বেতন দেয় না। কিন্তু পত্রিকা টেলিভিশনের যে খবরগুলো আমাদের চোখে পড়ে, যে সংবাদগুলো একটা গণমাধ্যমের প্রাণ হয়ে দাড়ায়, সে মফস্বল সাংবাদিকদের খবর কেউ রাখে না। তারা কতোটুকু কষ্ট, ঝুঁকি নিয়ে সংবাদগুলো সংগ্রহ করছে, কতোটা সময় ব্যয় করে একটা প্রতিবেদন তৈরি করছে, সে খবরই বা আমরা কজন রাখি? অনেক ক্ষেত্রেই সংবাদের পেছনে ছুটতে গিয়ে সন্তান-পরিবার-পরিজনকেও ঠিকভাবে সময় দিতে পারেন না। কিছুটা যেন অন্তহীন দৌড়!  সর্বোপরি প্রয়োজন মফস্বল পর্যায়ে যোগ্য ও শিক্ষিত সাংবাদিক তৈরির সৃজনশীল উদ্যোগ, পাশাপাশি এ পেশায় কর্মরতদের আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে মফস্বল পর্যায়ে পেশাগত গণমাধ্যম কর্মী সৃষ্টির পথ সহজতর করা।

সময় টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মেহেরপুরের মুজিবনগরে বিকেল ৫টা, ৬টার সংবাদ, রাত ৮টার সময়ের সংলাপ ও রাত ১০টার সম্পাদকীয় সারাসরি সম্প্রচার করা হবে। সাথে আছেন প্রধান বার্তা সম্পাদক তুষার আব্দুল্লাহ, নিউজ প্রেজেন্টার ফাহমিদা মৌটুসী, সৌমিত্র শুভ্র ও শেখ জায়েদসহ ৪০ জনের একটি দল।