ভূমিকম্পে কেঁপে উঠলো চুয়াডাঙ্গাসহ সারাদেশ

বাংলাদেশ-ভারত-মায়ানমার সীমান্তে ভূমিকম্পের উত্পত্তিস্থল মাত্রা ছিলো ৭ দশমিক ২

স্টাফ রিপোর্টার: ভূমিকম্পে কেঁপে উঠলো চুয়াডাঙ্গাসহ সারাদেশ। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত ৭-৫৫ মিনিটে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ কেঁপে ওঠে। চুয়াডাঙ্গা বড়বাজার পুরাতন গলি, সমবায় নিউমার্কেটসহ জেলা শহরের ছোট বড় বিপণি বিতানগুলোতে তখন উপচেপড়া ভিড়। ভূকম্পনে একে অপরের দিকে তাকাতে থাকেন। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে যেন সব দিকে। আতঙ্ক ছাড়াবেই নাবা কেন? ইট সিমেটের ঘর বাড়ি দুলছে। পায়ের নিচের মাটি কেপে উল্টে দিচ্ছে যেন সকলকে।

বাংলাদেশ সময় গতকাল বুধবার রাত ৭-৫৫ মিনিটে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ কেঁপে ওঠে। আতঙ্কে অনেকে হুড়মুড়িয়ে বাড়িঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। আতঙ্কিতদের চিত্কার-চেঁচামেচিতে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ভূমিকম্পের পর পর অনেক মসজিদে আযান এবং বিভিন্ন ভবনে আতঙ্কিত মানুষের আর্তচিত্কার শোনা যায়। বিদ্যুতের খুঁটি এবং ওভারহেড তারগুলো প্রচণ্ডভাবে দুলতে থাকে। কোথাও কোথাও গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির শ্রমিকরা তাদের জরুরি নিগর্মন রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে আসার সময় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে চিত্কার করে। বিভিন্ন সড়কের ওপর ভবন থেকে নেমে আসা লোকজন জড়ো হলে যানবাহন চলাচল থেমে যায়। বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের টেলিফোন নেটওয়ার্ক বিপর্যস্ত হয়। দূরবর্তী এলাকা থেকে আত্মীয়-স্বজনের সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-কম্পন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্য অনুযায়ী রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৯ মাত্রার এই ভূমিকম্পের উত্পত্তিস্থল ছিলো মিয়ানমারে। দেশটির মাওলাইক থেকে ৭৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এর কেন্দ্র ছিলো ভূ-পৃষ্ঠের ১৩৪ কিলোমিটার গভীরে। তবে বার্তা সংস্থা এপি জার্মানির রিসার্স সেন্টার ফর জিওলজিক্যাল সায়েন্সেস-এর বরাত দিয়ে জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে ভূকম্পনের মাত্রা ছিলো ৭ দশমিক ১।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, উত্পত্তিস্থলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিলো ৭ দশমিক ২। ঢাকা থেকে ৪৬০ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশ-ভারত-মায়ানমার সীমান্তে ভূমিকম্পের কেন্দ্র। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে এর গভীরতা ১২০ কিলোমিটার। আবহাওয়া অধিদফতরের ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা মোহাম্মদ হানিফ বলেন, এটা ছিলো শক্তিশালী ভূমিকম্প। নিকট অতীতে আমাদের আশপাশে শুধু নেপালে এর চেয়ে বড় ভূমিকম্প হয়েছিলো। এদিকে ভূমিকম্পের পর ইন্টারনেট সংযোগসহ মোবাইল নেটওয়ার্কে সমস্যার কথা জানা গেছে। চলতি মাসের ৫ তারিখেও দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃদু ভূকম্পন অনুভূত হয়।

চুয়াডাঙ্গায় বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ৫৮ মিনিটে ভূ-কম্পন অনুভূত হয়। প্রায় ৩০ সেকেন্ড স্থায়ী এ ভূমিকম্পে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কে ঘর-বাড়ি ছেড়ে ফাঁকা স্থানে মানুষজনকে ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। এ সময় ঘর-বাড়ির জানালা-দরজা জোরেশোরে নড়তে থাকে বলে চুয়াডাঙ্গার অনেকেই জানিয়েছেন।

বদরগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সারাদেশের মতো চুয়াডাঙ্গা সদরের কুতুবপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ভূমিকম্পন অনুভূত হয়েছে। গত ১৩ এপ্রিল রাত ৭টা ৫৮ মিনিট সময় তীব্র ভূমিকম্পনের ঘটনা ঘটে। গত বুধবার রাতে ২০ সেকেন্ড ভূমিকম্পন অনুভূত স্থায়ী ছিলো বলে জানা যায়। এ ভূমিকম্পে চুয়াডাঙ্গা সদরের কুতুবপুর ইউনিয়নের বদরগঞ্জ এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ ভূমিকম্পের অনুভূত চলাচলের সময়  বদরগঞ্জ এলাকাবাসীর মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রাণ ভয়ে অনেক মানুষ ঘরবাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে খোলা মাঠে অবস্থান নেয়।

জামজামি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আলমডাঙ্গার জামজামি ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় মৃদু ভূ-কম্পন অনুভূত হয়েছে। এ ভূ-কম্পন সন্ধ্যা ৭টা ৫৮ মিনিটে শুরু হয়ে মিনিটব্যাপী স্থায়ী হয়। আকস্মিক ঘর-গৃহস্থালী ও গাছ-পালা কেঁপে উলট-পালট পরিস্থিতির উদ্ভব হলে মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা দেয়। আতঙ্কিত নারী-পুরুষ শিশু ও বৃদ্ধরা ঘরছেড়ে দ্রুত বাইরে ফাঁকা স্থানে এসে দাঁড়ায়। এলাকায় কোনো হতাহত বা তেমন ক্ষয়ক্ষতির

খবর মেলেনি।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, গতকাল বুধবার রাত ৭টা ৫৫ মিনিটের দিকে তীব্র ঝাকুনি দিয়ে এ উপজেলায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। মাত্র ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ড স্থায়ী ভূমিকম্পের ঝাকুনিতে মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বাড়ি-ঘর হতে মানুষজন রাস্তায় নেমে আসে। তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। আবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আবু বকর জানালেন, অনেক ভূমিকম্প দেখেছি। তবে এমন কম্পন অতীতে দেখা যায়নি।

আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়ায় ভুমিকম্প অনুভুত হয়েছে। গতকাল বুধবার রাত ৭টা ৫৫ মিনিটে দু দফা কয়েক সেকেন্ডের ভূমিকম্পন দেখা দেয়। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদে অবস্থান নেয়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যাইনি।