মাথাভাঙ্গা মনিটর: হঠাৎ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে নিভে গিয়েছিলো ইডেনের একটি ফ্লাড লাইট টাওয়ারের সব বাতি। তবে বাংলাদেশের ইনিংস অন্ধকারে নিমজ্জিত এর আগেই। আত্মহত্যার মিছিলে সামিল একের পর এক ব্যাটসম্যান। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ গুটিয়ে গেল নিজেদের সর্বনিম্ন রানে; বিশ্বকাপ অভিযান শেষ হলো বাজে হারের হতাশায়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে কোলকাতায় নিউজিল্যান্ডের কাছে ৭৫ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৪৫ রান তুলেছিল নিউজিল্যান্ড। ১৫.৪ ওভারে ৭০ রানেই গুটিয়ে গেল মাশরাফির দল। রেকর্ড গড়া ৫ উইকেটের পরও মুস্তাফিজুর রহমানকে থাকতে হলো বিজিত দলে। টি-টোয়েন্টিতে এটিই বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোর। আগের সবচেয়ে কম রানও ছিলো নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে, ২০১০ সালে হ্যামিল্টনে। বাংলাদেশের জন্য এই ম্যাচে হারানোর ছিলো না কিছু। কিন্তু দল হারিয়ে ফেললো যেন উদ্যমটাই। শরীরী ভাষায় দেখা গেল না দারুণ কিছুর তাড়না। মন্থর ও নিচু বাউন্সের উইকেটে বাংলাদেশের বোলিং ছিলো মিশ্র। মুস্তাফিজের জন্য উইকেট ছিলো আদর্শ। একটু গ্রিপ করেছে বল, ব্যাটে এসেছে থেমে। তরুণ বাঁহাতি পেসার মেলে ধরেছিলেন নিজের জাদুর পসরা। স্লোয়ার, কাটার আর গতি-বৈচিত্রে খাবি খাওয়ালেন কিউই ব্যাটসম্যানদের।
খারাপ করেননি মাশরাফি-আল আমিনও। কিন্তু স্পিনাররা ছিলেন বিবর্ণ। ফিল্ডিংও হলো ভালো-মন্দ মিশিয়ে। তবে ব্যাটিং ব্যর্থতা পরে ছাপিয়ে গেছে সব কিছুকেই। শুরুতেই ধাক্কা হয়ে এসেছিল তামিম ইকবালের রানআউট। দ্বিতীয় উইকেটে সাব্বির রহমান ও মোহাম্মদ মিঠুন চেষ্টা করছিলেন ঘুরে দাঁড়াতে। মিচেল ম্যাকক্লেনাগানকে তেড়েফুড়ে মারতে গিয়ে মিঠুনের বিদায়ে ভাঙলো ২৫ রানের জুটি। তখন কে ভাবতে পেরেছিলো, এটিই হয়ে থাকবে ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটি। এরপর আর দু অঙ্কের জুটিই হয়েছে একটি। মিঠুনের দেখানো পথে একের পর এক ব্যাটসম্যান ফিরেছেন উইকেট বিলিয়ে। ছিলো না টিকে থাকার তাড়না, লড়াই করার প্রয়াস। উইকেট বুঝে ভালো বোলিং করেছেন স্লো মিডিয়াম পেসার গ্রান্ট এলিয়ট ও লেগ স্পিনার ইশ সোধি। তবে বোলিং ফিগার যেমন বোঝাচ্ছে, মোটেও তেমন ভয়ঙ্কর ছিলেন না দুজন। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাই উদার হাতে তুলে দিয়ে এসেছেন নিজেদের প্রাণ। দু অঙ্ক ছুঁতে পারলেন মাত্র দুজন।
অথচ ব্যাটসম্যানরা উজ্জীবিত হতে পারতেন মুস্তাফিজের পারফরম্যান্সে। টি-টোয়েন্টিতে আগে কখনোই ম্যাচে ২ উইকেটের বেশি পাননি। এবার নিলেন ২২ রানে ৫ উইকেট, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেরা বোলিং। যে কোনো বিশ্বকাপেই বাংলাদেশের প্রথম ৫ উইকেট। মার্টিন গাপটিলকে বিশ্রাম নিয়ে অভিষিক্ত হেনরি নিকোলসকে ওপেনিংয়ে নামায় নিউজিল্যান্ড। বাঁহাতি প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান অবশ্য ডানা মেলতে পারেননি। তবে আরেক পাশে কেন উইলিয়ামসন ছিলেন নিজের সৌন্দর্যময় সেরায়। দারুণ টাইমিং, নিখুঁত প্লেসমেন্টে খেলেছেন চোখ জুড়ানো কিছু শট। মাশরাফির করা প্রথম ওভারে দৃষ্টিনন্দন দুটি ড্রাইভে চার যেমন। সাকিবকে ইনসাইড আউটে চার, কিংবা ডাউন দ্য উইকেটে যে ছক্কা মারলেন, বল যেন টেরও পায়নি ব্যাটের আঘাত। আলতো করে সেফ্র ভাসিয়ে দিয়েছেন হাওয়ায়! দু ওপেনারকেই ফিরিয়েছেন মুস্তাফিজ। দারুণ এক স্লোয়ার-কাটারে বিভ্রান্ত হয়েছেন নিকোলস, বল এতটা ভেতরে ঢুকেছে যেন কোনো বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনারের দারুণ টার্নিং বল! দারুণ খেলতে থাকা উইলিয়ামসনও পেরে ওঠেননি মুস্তাফিজের প্রত্যুৎপন্নমতিত্বে। শাফল করে এলোমেলো করে দিতে চেয়েছিলেন বোলারকে। কিন্তু দারুণ এক স্লোয়ারে বোকা বানিয়েছেন কিউই অধিনায়ককে। নাড়িয়ে দিয়েছেন স্টাম্প (৩২ বলে ৪২)। পরের বলেই আউট হতে পারতেন কলিন মানরো। সাকিবের বলে এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে কেন যে সাড়া দিলেন না দক্ষিণ আফ্রিকার আম্পায়ার ইয়োহান ক্লোয়েটে, সেটি একমাত্র তিনিই বলতে পারবেন। টিভি রিপ্লে দেখাল বল লাগল মিডল স্টাম্পের মাঝে! রান ছিলো তখন তার ১২ বলে ৮।