রেকর্ডে উদ্ভাসিত মুস্তাফিজ

মাথাভাঙ্গা মনিটর: ফ্লাড লাইটগুলোর সব বাতি তখনও জ্বলে ওঠেনি, তারপরও আলোয় ঝলমল করলো ইডেন গার্ডেন্স। বোলিঙের বৈচিত্রের জাদুতে যে আলো ছড়ালেন মুস্তাফিজুর রহমান। মুগ্ধতা ছড়ানোর পালায় এবার বিশ্বকাপ মাতালেন বাংলাদেশের তরুণ পেস সেনসেশন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে উপহার দিলেন প্রথম ৫ উইকেট। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসেই এটি সবচেয়ে কম বয়সে ৫ উইকেট!

গতকাল শনিবার ইডেনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২২ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজ, এখনও পর্যন্ত এবারের বিশ্বকাপে যা সেরা বোলিং। আগের দিনই পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৭ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার জেমস ফকনার। চোটের জন্য এশিয়া কাপের ফাইনালসহ শেষ দু ম্যাচে খেলা হয়নি মুস্তাফিজের। সাইড স্ট্রেইনের জন্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডেও খেলা হয়নি তার। সুপার টেনের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষেও দর্শক হয়ে ছিলেন তিনি।  মুস্তাফিজের জন্য অধীর অপেক্ষায় ছিলো বাংলাদেশ। তবে তাকে নিয়ে কোনো ঝুঁকি নেননি মাশরাফি বিন মুর্তজা-চন্দিকা হাথুরুসিংহেরা। ছন্দে ফিরতে মোটেও সময় নেননি মুস্তাফিজ। অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের বিপক্ষে দুটি করে উইকেট নেন এই তরুণ। তৃতীয় ম্যাচে এসে দেখা গেছে তার সেরাটা। ধ্রুপদি লেগ স্পিনারের মতো এ দিন নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের নাচিয়েছেন তিনি।

চতুর্থ ওভারে প্রথম মুস্তাফিজকে আক্রমণে আনেন মাশরাফি। শুরু থেকেই অস্বস্তিতে রাখা হেনরি নিকোলসকে শেষ বলে বোল্ড করে দলকে ‘ব্রেক থ্রু’ এনে দেন তিনি। নবম ওভারটি করতে যাচ্ছিলেন সাব্বির রহমান। শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত পাল্টে মুস্তাফিজকে আক্রমণে আনেন মাশরাফি। সেই ওভারেরও শেষ বলে কেন উইলিয়ামসনের মূল্যবান উইকেট এনে দেন মুস্তাফিজ।

টানা ২ বলে নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ককে পরাস্ত করেন মুস্তাফিজ। কোনোমতে বেঁচে যাওয়া উইলিয়ামসন শেষ বলে বাঁচেননি। স্লোয়ার অফ কাটারে উড়ে যায় তার অফ স্টাম্প। নিউজিল্যান্ডের শেষের ঝড় থামাতে ১৮ ও ২০তম ওভার দুটি মুস্তাফিজকে দিয়ে করান মাশরাফি। এই দুই ওভারে বোলিং আক্রমণের সেরা অস্ত্র তাকে এনে দেন ৩ উইকেট। ঝড় তোলার আগে গ্র্যান্ট এলিয়টকে নিজের তৃতীয় ওভারে থামান মুস্তাফিজ। শেষ ওভারে পরপর ২ বলে মিচেল স্যান্টনার ও নাথান ম্যাককালামকে ফেরান তিনি। ৪ ওভারের ২২ রান দিয়ে ৫ উইকেট!

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে ৫ উইকেট শিকারি তিনিই; এই কীর্তি গড়লেন ২০ বছর ২০২ দিন বয়স। সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মুস্তাফিজের চেয়ে কম বয়সে ৫ উইকেট আছে আর কেবল একজনেরই। গত মাসেই নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ২৭ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন স্কটল্যান্ডের বাঁহাতি স্পিনার মার্ক ওয়াট। সেদিন বয়স ছিলো তার ১৯ বছর ১৯১ দিন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের আগের সেরা বোলিং ছিলো সাকিবের। চলতি আসরেই প্রথম রাউন্ডে ধর্মশালায় ওমানের বিপক্ষে ১৫ রানে চার উইকেট নিয়ে সেরা বোলিঙের রেকর্ড গড়েছিলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব।

বাংলাদেশের প্রথম পেসার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে ৫ উইকেট নিলেন মুস্তাফিজ। পেসারদের মধ্যে সেরা বোলিং রেকর্ড ছিলো মাশরাফির অধিকারে। ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। হাতছানি ছিলো আরও একটি কীর্তির। শেষ ওভারে টানা ২ বলে পেয়েছিলেন উইকেট। শেষ বলে উইকেট পেলে হতে পারত হ্যাটট্রিক। তবে স্লোয়ারটি আগেই বুঝে বল গ্যালারিতে পাঠিয়ে দিলেন মিচেল ম্যাককক্লেনাগন। তাতে অবশ্য কমছে না মুস্তাফিজের ঔজ্জ্বল্য। বাংলাদেশ তো বটেই, বিশ্ব ক্রিকেটেই তিনি হয়ত এখন উজ্জ্বলতম নবীন তারা।