মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরসহ সারাদেশেই ভয়াল ২৫ মার্চ গণহত্যার প্রতিবাদে শহীদ স্মৃতিসৌধে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা ইউনিট, অরিন্দমসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে। দর্শনা, মেহেরপুর ও গাংনীতেও অভিন্ন কর্মসূচি পালনের খবর পাওয়া গেছে। ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়েছে ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার আন্দোলন’ এর নেতৃবৃন্দ। এ দাবি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ জনতার প্রাণের দাবি হয়ে ওঠে গতকাল।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে চুয়াডাঙ্গা শহীদ হাসান চত্বরে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়। এ সময় শহরে ৩ মিনিট বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ রেখে ভয়াল কালরাতের প্রতীকী উদযাপন করা হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় থেকে জাতীয় সংসদের হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের নেতৃত্বে একটি মিছিলসহ নেতৃবৃন্দ শহীদ হাসান চত্বরে পৌঁছান। সেখানে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের উদ্বোধন করেন হুইপ ছেলুন জোয়ার্দ্দার এমপি। এ সময় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
দর্শনা অফিস জানিয়েছে, দর্শনায় কাল রাত পালন করা হয়েছে। আলোক মিছিল ও সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভার মধ্যদিয়ে ভয়াল কালরাত পালন করেছে আ.লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও কেরুজ চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী সংগঠন। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কেরুজ চিনিকলের সাইরেন বাজিয়ে দর্শনা রেলবাজারের ফুলতলা চত্বর থেকে আলোক পদযাত্রা বের করে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পথযাত্রা শেষে কেরুজ স্মৃতিস্তম্ভে মোমবাতি প্রজ্জলন করা হয়। অনুষ্ঠিত হয় সংক্ষিপ্ত আলোচনাসভা। সভায় বক্তারা বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ এক ভয়াল কালরাতে এ দেশের মানুষের ন্যায্য দাবিকে উপেক্ষা করে পাকিস্তানি হায়েনা ও তাদের দোসররা নির্মমভাবে হত্যা করেছিলো এ দেশের বুদ্ধিজীবীসহ স্বাধীনতাকামী সাধারণ মানুষকে। রচনা করেছিলো এক কালো অধ্যায়ের। এর প্রতিবাদে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমানের আহ্বানে জেগে উঠেছিলো এ দেশের মুক্তিকামী জনতা। আর লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আজকের স্বাধীনতা। আমরা স্মরণ করি তাদের, যাদের আত্মত্যাগ আমাদের করেছে মুক্ত ও স্বাধীন। আলোচনা করেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মনজু, দর্শনা পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান, ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা সৈয়দ মজনুর রহমান, উপজেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা রুস্তম আলী, আ.লীগ নেতা গোলাম ফারুক আরিফ, আলী মুনসুর বাবু, কেরুজ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তৈয়ব আলী, সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান, অনির্বাণ থিয়েটারের সভাপতি ফজলুল হক, সাবেক সভাপতি মহাসীন আলী, রবিউল হক বাবু, বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলম, নজরুল ইসলাম, আ. গণি, সুধির কুমার শান্তারা, রেজাউল করিম সবুর, দর্শনা পৌর প্যানেল মেয়র রবিউল হক সুমন, মুকুল মিয়াজি, আজাদ, শহিদুল ইসলাম পুটু, আরতি হালসনা প্রমুখ। আলোক ৱ্যালিতে আরো অংশ নেয় অনির্বাণ থিয়েটার ও সাম্প্রতিক সাংস্কৃতিক সংগঠন।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুর সম্মিলিত জোটের আয়োজনে ৭১’র ২৫ মার্চ ভয়াল কালরাত্রি স্মরণে মেহেরপুরে আলোক যাত্রা ও এক মিনিট নীরবতা পালন শেষে শহীদদের স্মরণে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে মেহেরপুর প্রেসক্লাবের সামনে থেকে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক অ্যাড. ইব্রাহীম শাহীনের নেতৃত্বে আলোক যাত্রাটি মেহেরপুর শহীদ ড. সামসুজ্জোহা পার্কস্থ শহীদ বেদিতে পৌঁছে প্রজ্জ্বলন করা হয়। আলোক প্রজ্জ্বলন শেষে সেখানে ভয়াল কালরাতে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে মৃত্তিকা গ্রুপ থিয়েটারের সভাপতি মানিক হোসেনের উপস্থাপনায় আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বশির আহম্মেদ, সহকারী অধ্যাপক হাসানুজ্জামান মালেক, সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল আমীন ধুমকেতু, জেলা জজ আদালতের পিপি অ্যাড.পল্লব ভট্টাচার্য, অ্যাড. ইব্রাহীম শাহীন, নাসিরুদ্দিন মিরু, জেলা শিল্পকলা একডেমির সহসভাপতি প্রভাষক নূরুল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান মফিজ, সাংস্কৃতিক কর্মী শ্বাশত নিপ্পন, মাহাবুবুল হক মন্টু, ডা. নজরুল ইসলাম, সদর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি জুনায়েদ ইমতিয়াজ প্রমুখ।
গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ভয়াল ২৫ মার্চ স্মরণে মেহেরপুর গাংনীতে আলোক মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় গাংনী পৌর ক্লাবের উদ্যোগে শহরে এ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ক্লাব প্রাঙ্গণ থেকে একটি ৱ্যালি শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা পরিষদ শহীদ মিনার চত্বরে শেষ হয়। মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের প্রত্যেকের হাতে ছিলো জ্বলন্ত মোমবাতি। ৱ্যালি শেষে শহীদ মিনারের পাদদেশে জ্বলন্ত মোমবাতি স্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ-উজ-জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট সংগঠক সিরাজুল ইসলাম ও গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকরাম হোসেন। উপস্থিত ছিলেন পৌর ক্লাব সভাপতি মিনারুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সজল হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক তরিকুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক লাভলু হোসেন, সদস্য টুটুল, রিমন, লিংকন, লিমন ও নয়ন।