বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের স্মরণোৎসবে মানবতার দীক্ষা নিতে সাধুগুরু ও ভক্তদের ঢল

 

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ায় বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের স্মরণোৎসবে সত্য সু-পথের সন্ধানে মানবতার দীক্ষা নিতে আত্মার টানে দেশ-বিদেশের সাধুগুরু ও ভক্তদের ঢল নেমেছে। লালন একাডেমির আয়োজনে এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় লালন একাডেমি চত্বরে ২৩ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত ৩ দিনব্যাপী লালনমেলা এবং প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে আলোচনাসভা ও লালন সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় সাঁইজির আখড়া বাড়িতে বসেছে সাধুর হাট। আখড়াবাড়ি পরিণত হয়েছে সাধু-গুরু-বাউলদের মিলন মেলা। মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি সত্য সু-পথের সন্ধ্যানে মানবতার দীক্ষা নিতে আত্মার টানে দেশ-বিদেশের সাধুগুরু ও ভক্তরা দলে দলে এসে আসন গেড়েছেন সাঁইজির মাজারে। মূল উৎসব শুরু হওয়ার আগ থেকে আখড়ায় আসা বাউল সাধকরা মাজারের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে গেয়ে চলেছেন সাঁইজির আধ্যাত্মিক মর্মবাণী ও ভেদ তথ্যের গান।

জানা গেছে, ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর নির্মম অত্যাচারে গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবনকে যখন বিষিয়ে তুলেছিলো, ঠিক সেই সময়ই সত্যের পথ ধরে, মানুষ গুরুর দীক্ষা দিতেই সেদিন মানবতার পথ প্রদর্শক হিসাবে বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের আবির্ভাব ঘটে কুষ্টিয়া কুমারখালীর ছেঁউড়িয়াতে।

লালনের জন্মস্থান নিয়ে নানাজনের নানা মত থাকলেও আজো অজানাই রয়ে গেছে তার জন্ম রহস্য। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। আর্থিক অসঙ্গতির কারণে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করতে পারেননি। তবে তিনি ছিলেন স্বশিক্ষায় শিক্ষিত। যৌবনকালে পূণ্য লাভের জন্য তীর্থ ভ্রমণে বেরিয়ে তার যৌবনের রূপান্তর ও সাধন জীবনে প্রবেশের ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।

তীর্থকালে তিনি বসন্ত রোগে আক্রান্ত হলে তার সঙ্গীরা তাকে প্রত্যাখ্যান করে। পরে মলম শাহ’র আশ্রয়ে জীবন ফিরে পাওয়ার পর সাধক সিরাজ সাঁইয়ের সান্নিধ্যে তিনি সাধক ফকিরী লাভ করেন। ভক্ত মলম শাহের দানকৃত ১৬ বিঘা জমিতে ১৮২৩ সালে লালন আখড়া গড়ে ওঠে। প্রথমে সেখানে লালনের বসবাস ও সাধনার জন্য বড় খড়ের ঘর তৈরি করা হয়। সেই ঘরেই তাঁর সাধন-ভজন বসতো। ছেঁউড়িয়ার আঁখড়া স্থাপনের পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শিষ্য-ভক্তদের নিয়ে পরিবৃত থাকতেন। তিনি প্রায় এক হাজার গান রচনা করে গেছেন। ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর ভোরে এই মরমী সাধক বাউল সম্রাট দেহত্যাগ করেন এবং তার সাধন-ভজনের ঘরের মধ্যেই তাকে সমাহিত করা হয়। তার গানের মাঝেই লুকিয়ে আছে সৃষ্টির রহস্য। সৃষ্টিকর্তার সাথে আত্মিক সম্পর্ক তার গানের মূলমন্ত্র। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষকে একই স্রোতধারায় আনার জন্য আমরণ কাজ করেছেন এই মরমী সাধক।