দামুড়হুদায় পরিবার কল্যাণ সহকারী বিপাশাসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট : ঘটনার সাথে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে ৪ সপ্তার রুল জারি

 

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদা সদর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের পরিবার কল্যাণ সহকারী বিপাশাসহ ৮ জনের নামে হাইকোর্টে রিট করেছেন অপর চাকরি প্রত্যাশী দামুড়হুদা ফকিরপাড়ার সাহিদা সুলতানা। গত ১৫ মার্চ সাহিদা সুলতানার পক্ষে হাইকোর্টের আইনজীবি অ্যাড. হেমায়েতুল্লাহ ওই রিট পিটিশন দায়ের করেন। দায়েরকৃত রিটের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক (প্রশাসন), খুলনা বিভাগীয় পরিচালক, চুয়াডাঙ্গা জেলার উপসচিব, সিভিল সার্জন চুয়াডাঙ্গা, উপপরিচালক চুয়াডাঙ্গা, দামুড়হুদা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ও পরিবার কল্যাণ সহকারী বিপাশা খাতুন এই ৮ জনের বিরুদ্ধে ৪ সপ্তার রুল জারি করেছেন হাইকোর্টের বিচারক ওবাইদুল হাসান ও কৃষ্ণা দেবনাথ।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে দামুড়হুদা সদর ইউনিয়নে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের অধিনে ওয়ার্ডভিত্তিক পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে শর্ত ভেঙে স্বামীর ঠিকানার পরিবর্তে পিতার ঠিকানা ব্যবহার করে কুড়ুলগাছির গৃহবধূ বিপাশা খাতুন দামুড়হুদা সদর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডে চাকরি নেন। এ সংক্রান্তে সংশ্লিষ্ট অধিদফতরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন অপর চাকরি প্রত্যাশী দামুড়হুদা ১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফকিরপাড়ার বদর উদ্দিনের মেয়ে সাহিদা সুলতানা। বিষয়টি তৎকালীন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক আমলে নেন এবং জেলার সহকারী কমিশনার বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোকলেছুর রহমানকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করে ওই বছরের ১৭ ডিসেম্বর শুনানির আদেশ দেন। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা বিষয়টি বিভাগীয় তদন্তের সুপারিশ করেন। এরপর বিপাশার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু হয় এবং শুরু হয় বিভাগীয় তদন্ত। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. জামাল হোসাইন দীর্ঘ তদন্ত শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে নিয়োগপত্রের ৬ নং শর্তাবলী পরিপন্থি হওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ১৯৮৫ এর ৩ (বি) ও (ডি) ধারায় বিপাশাকে অসদাচরণ ও দুর্নীতিতে অভিযুক্ত করেন এবং কেন তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে না তা লিখিতভাবে জবাব দেয়ার জন্য ২০১৪ সালের ১০ আগস্ট প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. রেজাউল করিম অভিযুক্ত বিপাশা খাতুনকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ওই বছরের ৩০ নভেম্বর পরিবার পরিকল্পনা পরিচালকের দফতরে সশরীরে হাজির হওয়ার জন্য পত্র প্রেরণ করেন। এরপর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ ফজলুল হক ২০১৫ সালের ৯ জুলাই এক পত্র মারফত বিষয়টি পুনরায় দতন্তের জন্য সাতক্ষীরা জেলার ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক রওশন আরা জামানকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করেন এবং ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে এ সংক্রান্তে চূড়ান্ত মতামত প্রদানের আদেশ দেন। সাতক্ষীরা জেলার ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক রওশন আরা জামান চূড়ান্ত তদন্তের জন্য ২০১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর দামুড়হুদা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসে আসেন এবং সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানসহ উভয়পক্ষের শুনানি শেষে লিখিত বক্তব্য নেন। তিনি তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ ফজলুল হক অভিযুক্ত বিপাশা খাতুনকে বিভাগীয় মামলায় আনীত অভিযোগের দায় থেকে অব্যহতি দেন।

এ বিষয়ে অপর চাকরি প্রত্যাশী দামুড়হুদা ফকিরপাড়ার বদর উদ্দিনের মেয়ে সাহিদা সুলতানা জানান, তদন্তকারী সাতক্ষীরা জেলার ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক রওশন আরা জামান মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে সত্যকে আড়াল করে অভিযুক্ত বিপাশাকে অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি দেয়ার প্রেক্ষিতে তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ মোট ৮ জনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেছেন।