ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় কুপিয়ে খুন : পুকুর থেকে লাশ উদ্ধার

 

 

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার বামন্দী বাজারের একটি পুকুর থেকে গতকাল শনিবার শুকুর আলী (৪৫) নামের এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের রহস্য এখনো পুলিশ ও পরিবারের কাছে স্পৃষ্ট নয়। নিহত শুকুর আলী বামন্দী-নিশিপুর গ্রামের দাউদ আলীর ছেলে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভোরে মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে স্থানীয় কয়েকজন মুসল্লী বামন্দী গোহাট সংলগ্ন সরকারি পুকুরপাড় দিয়ে যাওয়ার সময় পুকুরে শুকুরের লাশ দেখতে পান। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালমর্গে প্রেরণ করেন। শুকুর আলীর মাথা পানিতে এবং শরীরের বাকি অংশ পুকুর পাড়ে ছিলো বলে জানায় স্থানীয় লোকজন ও লাশ উদ্ধারকারী পুলিশ কর্মকর্তারা। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার মাথার পেছনে কোপ দিয়ে ফেলে দেয়া হতে পারে বলে ধারণা পুলিশের।

লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে গাংনী থানার পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর তদন্ত) মোক্তার হোসেন জানান, নিহতের মাথার পেছনের দিকে ধারালে অস্ত্রের একটি কোপের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়াও শরীরের কোথাও কোপ কিংবা আঘাতের চিহ্ন নেই। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে লাশ পানিতে ছিলো বলে ধারণা করছে পুলিশ। লাশের কাছ থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইলফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে।

নিহতের স্ত্রী মাফরুজা খাতুন জানান, গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে সে রাতের খাবার খেয়ে বামন্দী বাজারের উদ্দেশে রওনা দেয়। স্ত্রী তাকে বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করেন। কিন্তু জরুরি কাজ আছে বলে সে বাড়ি থেকে বের হয়। দীর্ঘ সময় ধরে বাড়ি না ফেরায় স্ত্রী তার মোবাইলফোনে কল করেন। কয়েকবার কল দিয়েও তা রিসিভ হয়নি। গভীর রাতে তার মোবাইলফোনটি বন্ধ পান স্ত্রী। স্বামী না ফেরায় দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়েই তিনি রাত পার করেন। ভোরে শুকুরের মৃত্যুর খবর পান তিনি। তবে কি কারণে কারা তাকে হত্যা করেছে তা ধারণা করতে পারছেন না স্ত্রী।

শুধু তার স্ত্রী নয় পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছেও হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কোনো ধারণা কিংবা সন্দেহ নেই। এ ব্যাপারে তারা নিশ্চিত করে কিছুই বলতে পারেননি। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রর আলী বাড়ির অমতে বিয়ে করেন। এ কারণে তার ভাই-বোনদের সাথে তেমন সম্পর্ক ছিলো না। স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা বাড়িতে বসবাস করতেন তিনি। বামন্দী ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক ছিলেন তিনি। রাজনৈতিক অঙ্গণে তেমন সক্রিয়তা না থাকলেও এলাকার বিভিন্ন কাজে তিনি আলোচিত ব্যক্তি ছিলেন।

গাংনী থানার পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর তদন্ত) মোক্তার হোসেন বলেন, এক সময় শুকুর আলী মাদকব্যবসার সাথে জড়িত ছিলো বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। তাছাড়া চরমপন্থি সম্পৃক্ততা ছিলো কি-না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ দুটি বিষয় ছাড়াও আরো কয়েকটি বিষয় নিয়ে মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। কয়েকজন সন্দিগ্ধ ব্যক্তির ওপর নজরদারি করা হচ্ছে।

গতরাত পর্যন্ত শুকুর আলী নিহত হওয়ার বিষয়ে কোনো মামলা দায়ের হয়নি। ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল সন্ধ্যার আগে নিশিপুর গ্রাম্য কবরস্থানে জানাজা শেষে তার দাফন সম্পন্ন হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানায় পুলিশ।

নিহত শুক্রর আলী নিশিপুর গ্রামের দাউদ হোসেনের ৫ ছেলে ও ৪ মেয়ের মধ্যে চতুর্থ। শুকুর আলীর ভাই আব্দুল হাদি বামন্দী-নিশিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। তার মৃত্যুতে পরিবারে বিরাজ করছে শোকের ছায়া। পিতা-মাতা যেমনি শোকে মুহ্যমান তেমনি ভাইবোনদের মাঝে শোকের গভীর ক্ষত।

 

Leave a comment