হারুন রাজু/হানিফ মণ্ডল: প্রতিবছরের মতো এ বছরো একুশের মেলার আয়োজন করেছে অনির্বাণ থিয়েটার। একুশ আমার জয়, আধার করিনা ভয় শীর্ষক অনির্বাণ থিয়েটারের একুশে মেলার গতকাল শনিবার ছিলো ৭ম দিন। দর্শনা কলেজমাঠে অনুষ্ঠিত একুশে মেলার নিয়মিত আলোচনা পর্বের মধ্যে গতকালের পর্ব ছিলো ভিন্নতা। সন্ধ্যায় আলোচনাসভা ও দু গুণীজনের সংবর্ধনার আয়োজন করে অনির্বাণ থিয়েটার। অনির্বাণ থিয়েটারের সভাপতি ফজলুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনাসভায় আলোচনাকালে প্রধান অতিথি চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস বলেন, ইতিহাসের যুগ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে মহান একুশের চেতনায় উদ্বুব্ধ হয়ে মানবতাবিরোধীদের রুখে দাঁড়াতে হবে। একুশের ইতিহাস রক্ত আর সন্তানহারা দুঃখিনী মায়ের অশ্রুদিয়ে লেখা ইতিহাস। ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলনে যাদের রক্তে লাল হয়েছিলো বাংলা মাটি, আমরা তাদের ভুলবোনা কোনোদিন। রাজপথের সেই রক্তের দাগ হয়তো মুছে গেছে, কিন্তু যতোদিন থাকবে এ পৃথিবী বিদ্যমান, ততোদিন বাঙালি জাতির অন্তর থেকে মুছবে না সে শোকের ক্ষত। যে ভাষার জন্য এতো ত্যাগ, সেই মায়ের ভাষা আজ বিকৃত হচ্ছে নানাভাবে। তাই আসুন একুশের মহিমায় মহিমান্নিত হয়ে বাংলা ভাষার মহত্মকে অক্ষুণ্ণ রাখি। ভাষার প্রতি সকলে হই দরদি, নিংড়ে দিয়ে সবটুক ভালোবাসা, মায়ের মুখের হাসি রাখি অটুট। ভাষা আন্দোলন বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ, করেছে সাহসী তাই আসুন একুশের চেতনা বুকে ধারণ করে দেশ গড়ার কাজে ব্রতী হই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যকালে চুয়াডাঙ্গা জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদ বলেন, ১৯৫২ সালে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে যারা অর্জন করেছিলো আজকের এ মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আমরা তাদের ভুলিনি ও ভুলবো না কখনো। ভাষার জন্য লড়াই করে যারা রক্ত দিয়েছে, তারা আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। তাদের আত্মত্যাগ যুগ যুগ স্মরণ করবে বাঙালি জাতি। তাই আসুন একুশের চেতনায় জাগ্রত হয়ে রুখে দিই সাম্প্রদায়িকতা। অনির্বাণ থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেনের প্রাণবন্ত উপাস্থাপনায় সংবর্ধনুষ্ঠানে সংবর্ধিতসহ অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা ও সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদানসহ অভিনন্দিত করা হয়েছে থিয়েটারের পক্ষ থেকে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বক্তব্য রাখেন- অধ্যাপক জিয়াউল হক, চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আঞ্জুমানা আরা, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদুর রহমান, সাবেক উপাধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন। আলোচনা পর্বের আগে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ গুণীজন সংবর্ধনা দেয়া হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম মালিক ও মহাসীন আলীকে। অনুষ্ঠানের শুরুতে মহাসীন আলী ও নুরুল ইসলাম মালিকের জীবন আলিখ্য পাঠ করেন পপি ও লাকি। দু গুণীজনকে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা দেয়া হয়। সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে- দর্শনা প্রেসক্লাব, সাংবাদিক সমিতি, পুরাতন বাজার দোকান মালিক সমিতি, উদীচী, রামাযুস, ওমেন্স ক্লাব, দর্শনা সোসাইটি, ছাত্রসমাজ, প্রত্যয়, ওয়েভ ফাউন্ডেশন, প্রতিতি, প্রডিজি ও মুক্তি প্রজন্ম ফ্রেন্ডস সঙ্গীত একাডেমী।