স্টাফ রিপোর্টার: দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালাতেই বিকট শব্দ, মুহূর্তের মধ্যে আগুনের শিখা ছড়িয়ে পড়ে সারা ফ্ল্যাটে। গ্যাস লাইন বিস্ফোরণে পুড়েছে একটি পরিবারের সব সুখ আনন্দ। দগ্ধ হয় শিশুসহ ৫ জন। এর মধ্যে দু ভাই শালিল বিন নেওয়াজ (১৫) ও জায়ান বিন নেওয়াজ (১৪ মাস) মারা গেছে। শালিল উত্তরা রাজউক মডেল কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলো। তাদের সাথে দগ্ধ হয়েছেন শালিলের বাবা মার্কিন দূতাবাসের মেইনটেন্যান্স প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ (৫০), মা সুমাইয়া বেগম (৪০), মেজ ভাই জারিফ বিন নেওয়াজ (১১) ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় বিকালে মারা যায় শালিল বিন নেওয়াজ। আর এর এক ঘণ্টা পর মারা যায় জায়ান বিন নেওয়াজ। শাহনেওয়াজ ও মা সুমাইয়া বেগমের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন বার্ন ইউনিটে কর্তব্যরত চিকিত্সক। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ৩ নম্বর রোডের ৮ নম্বর বাড়ির সাত তলা ভবনে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভায়।
পারিবারিক সূত্র জানায়, ছয় তলা ভবনের ছাদে আটশ বর্গফুটের তিন রুমের এ ফ্ল্যাটে প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ ভাড়ায় আসেন পাঁচ দিন আগে। নতুন সংসার, গোছানো চলছিলো। গতকাল ভোরে তিনি ফজরের নামাজ পড়েন। এরপর ১৪ মাসের শিশু পুত্র জায়ানকে কোলে নিয়ে ঘরের মধ্যে পাঁয়চারি করছিলেন। তার স্ত্রী সুমাইয়া বেগম রান্নাঘরে যান। বড় দু ছেলে শালিল ও জারিফ নিজেদের কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলো। সুমাইয়া বেগম দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালতেই বিকট শব্দ, মুহূর্তের মধ্যে আগুনের শিখা ছড়িয়ে পড়ে গোটা ফ্ল্যাটে, দগ্ধ হয় পরিবারের ৫ সদস্য। পরে অন্যান্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা দগ্ধদের উদ্ধার করে ভর্তি করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী উত্তরা পশ্চিম থানার অপারেশন অফিসার এসআই শাহ আলম মোল্লা জানান, ভবনের অন্য ভাড়াটিয়ারা পুলিশকে জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের সময় মনে হচ্ছিলো ভূমিকম্প হচ্ছিলো। তারা দরজা খুলে দেখেন ভবনের ছাদের ফ্ল্যাটে আগুন ধরেছে। প্রথমে আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে অ্যাপোলো হাসপাতালে। পরে সেখান থেকে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। আগুনে রান্নাঘরের সব কিছু পুড়ে গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা আতিকুল আলম চৌধুরী বলেন, গ্যাসের চুলা বন্ধ থাকলেও পাইপের কোনো অংশে হয়তো লিক ছিলো। দীর্ঘ সময় ফ্ল্যাটের দরজা-জানাল বন্ধ ছিলো। এ কারণে চুলা ধরাতে গিয়ে গ্যাস লাইনে বিস্ফোরণ ঘটে।
কর্তব্যরত চিকিত্সক মুন্নি মমতাজ জানিয়েছেন, পাঁচ জনের মধ্যে চারজনের শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। শাহনেওয়াজ ও স্ত্রী সুমাইয়া বেগমের শরীরের ৯৫ ভাগ, শালিলের ৮৮ ভাগ, জায়ানের ৭৪ ভাগ, আর ৬ ভাগ পুড়েছে জারিফের। তিনি বলেন, এ ধরনের দগ্ধ মানুষের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম ।
বার্ন ইউনিটে শাহনেওয়াজের ফুপাতো বোন আরমিন সাংবাদিকদের জানান, হাসপাতালে ছটফট করার সময়ও আমার ভাই বলছিলো যে, আপা আমারে আগুন ধাক্কা দিয়েছে। বাড়িওয়ালাকে গ্যাস লিক হওয়ার কথা বলেছিলাম। কিন্তু বাড়িওয়ালা তা আমলে নেয়নি। পাশাপাশি তিনি অভিযোগ করে বলেন, বাড়ির মালিক দেলোয়ার হোসেন দগ্ধদের দেখতে হাসপাতালে আসেননি। একই অভিযোগ করেছেন শাহ নেওয়াজের ভাগ্নে নাজমুস সাকিব। তিনি বলেন, বাড়িতে ওঠার পর গ্যাস জাতীয় গন্ধ ছড়ানোর বিষয়টি মামা বাড়িওয়ালাকে জানিয়েছিলেন। বাড়ির কেয়ারটেকার সালেহ জানান, এ এলাকায় প্রায়ই গ্যাস থাকে না। গ্যাস না থাকার বিষয়ে স্থানীয় তিতাস গ্যাস কার্যালয়ে একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছিলো।
উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুর রাজ্জাক বলেন, গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনায় সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাড়িওয়ালাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। গত আট মাসে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস লাইন বিস্ফোরণে ২৭ জন দগ্ধ হয়। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মারা যান।