একটি দেশের সার্বিক অর্থনীতি অগ্রসর না হলে তা পুরো দেশের জন্যই উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে, যা নিশ্চিত করেই বলা যায়। বাংলাদেশ একটি অমিত সম্ভাবনাময় দেশ। বলার অপেক্ষা রাখে না, কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্যদিয়ে দেশের অর্থনীতি আরো বেশি গতিশীল ধারায় এগিয়ে নেয়া সম্ভব। অর্থনৈতিক স্বাধীনতার সূচকে ১৭৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৩৭তম অবস্থানে রয়েছে। আর অর্থনৈতিক মুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থা ‘প্রায় একেবারেই মুক্ত নয়।’ সঙ্গত কারণেই এ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ সাপেক্ষে উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চিন্তন গোষ্ঠী হেরিটেজ ফাউন্ডেশন এ তথ্যটি প্রকাশ করে তাদেরই এক প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশের স্কোর গত বছরের চেয়ে দশমিক ৬ ভাগ কমে এবার ৫৩ দশমিক ৩-এ দাঁড়িয়েছে। যখন এ প্রতিবেদনটি বলছে, বাংলাদেশে আইনের শাসন ও মুক্ত অর্থনীতির ব্যাপারে উদ্বেগ রয়েছে। তখন বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক। একই সাথে উঠে এসেছে অনিশ্চিত এক নিয়ন্ত্রণমূলক পরিবেশ, দুর্বল অবকাঠামো এবং বেসরকারি খাতের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার অনুপস্থিতির মতো বিষয়গুলো, যার ফলে সামগ্রিকভাবে উদ্যোক্তাদের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আর এ কথা বলাই বাহুল্য, উদ্যোক্তাদের কার্যক্রম ব্যাহত হলে তা সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য কোনোভাবেই সুখকর হতে পারে না। আরেকটি বিষয় ভেবে দেখতে হবে, যে কোনো কারণেই যদি বিনিয়োগ কমে যায় তবে তা উৎকণ্ঠাজনক, যা নিরসন করা অপরিহার্য।
বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ গত কয়েক বছরে ২১ থেকে ২২ শতাংশ কমে গেছে। আমরা বলতে চাই, সরকার দেশের অর্থনীতি এগিয়ে নিতে নানা ধরনের ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে তা সত্য। এর সাথে যদি উল্লেখিত বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে আরো বেশি সুষ্ঠু পদক্ষেপ নিশ্চিত করা যায় তবে তার প্রভাব অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে। যখন প্রতিবেদনে এসেছে, এক দশকে দেশের মানুষের জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক অর্জন সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখনো বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশই রয়ে গেছে, তখন এ বিষয়টি আমলে নিয়ে উপলব্ধি করতে হবে এর নেপথ্যের কারণগুলো কী। এবারের সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নেপাল বাদে সব দেশের নিচে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। আর এ তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে হংকং। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, সরকার যদি আরো দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হয় তবে বাংলাদেশের এ চিত্র বদলানো কঠিন কিছু হবে না। একটা সময় অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রের সূচক ও জিডিপি সূচক বৃদ্ধিতে পরিকল্পনা ও কর্মকৌশল টেকসই না হওয়ায় দীর্ঘদিন বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবেই দেখা হতো। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দাতা সংস্থাও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করছে। ফলে যদি আরো বেশি পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্যদিয়ে সঙ্কটগুলো চিহ্নিত করা যায় তবে তা সমাধানের দৃঢ়তায় অর্থনীতি সূচকসহ নানা দিক থেকেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
কিন্তু সংশ্লিষ্টদের মনে রাখতে হবে, অনিশ্চিত নিয়ন্ত্রণমূলক পরিবেশ কিংবা দুর্বল অবকাঠামোর যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে, তার প্রকৃত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং যে কোনো নেতিবাচক বিষয় স্পষ্ট হলে তা সমাধানে প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বিভিন্ন সূচকেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে অর্থনীতি সূচকেও দেশ ক্রমাগত অগ্রসর হবে এমন সম্ভাবনাও প্রবল। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা। সরকারকে যেমন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের মধ্যদিয়ে সামনে অগ্রসর হতে হবে, তেমনভাবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিরও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। আর তার জন্য দেশের প্রতিটি দলই রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দেবে এমনটি কাম্য। কেননা এর আগে দেখা গেছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা একটি দেশের অর্থনীতিকে কীভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। আমরা প্রত্যাশা করি, এবারের প্রতিবেদনে যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে তা আমলে নিয়ে এমন পদক্ষেপই গ্রহণ করা হবে, যেন বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যায় ক্রমাগত গতিশীল ধারায়।