স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর দারুস সালামে রফিকুল ইসলাম জুনায়েদ (৪০) নামে আবাসিক হোটেল ও প্রপার্টিজ ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। গতকাল সকালে পাইকপাড়া সরকারি স্টাফ কোয়ার্টার জামে মসজিদের সামনে থেকে তার রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় নিহতের ভাই ডা. সাঈদ হোসেন সোহাগ বাদী হয়ে দারুস সালাম থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, চাঁদা না দেওয়া বা ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের কারণে জুনায়েদকে হত্যা করা হতে পারে। ডা. সোহাগ জানান, দক্ষিণ বিশিলের ১১২ নম্বর নিউ শাহজালাল আবাসিক হোটেলের মালিক জুনায়েদ। এ ছাড়া তিনি মিরপুর প্রপার্টিজের ক্যাশিয়ার, ওয়েসিস রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপারস নামক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক অংশীদার, মিরপুর-১ নম্বরে একটি মার্কেট ও বেশ কয়েকটি দোকানের মালিক ছিলেন। জুনায়েদ স্ত্রী লাকী আক্তার এবং দুই সন্তান জাকিয়া (৭) ও রওসিনকে (৪) নিয়ে উত্তর টোলারবাগের ১৯/কে সেল প্রত্যাশা ভবনের ৩-এ ফ্ল্যাটে থাকতেন। সোমবার রাত ১২টার দিকে তিনি হোটেলে যান। হোটেলের হিসাব নেয়ার পর সোয়া ১২টার দিকে বাসার উদ্দেশে বেরিয়ে আসেন। এর পর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। গতকাল ভোরে পাইকপাড়া মসজিদের সামনে মুসল্লিরা তার লাশ দেখতে পান। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে জুনায়েদের বুকে গুলির চিহ্ন দেখতে পান তারা। এ ছাড়া তার পকেটে তিন লাখ ছয় হাজার টাকার একটি চেক পাওয়া গেছে। সোহাগ জানান, জুনায়েদ দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলেন। তিনি স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে দক্ষিণ বিশিলের ১৭০ নম্বর বাড়িতে থাকতেন। দুই বছর আগে এলাকার একটি চিহ্নিত সন্ত্রাসী গ্রুপ তার কাছে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। কিন্তু তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে দুর্বৃত্তরা ওই বাড়ির সামনে দিনে-দুপুরে গুলি করে। এ ঘটনায় দারুস সালাম থানায় একটি জিডিও করা হয়। পরে ওই এলাকা ছেড়ে টোলারবাগ এলাকায় চলে আসেন জুনায়েদ। সম্প্রতি তিনি দক্ষিণ বিশিল এলাকার ৮ নম্বর রোডে একটি ফ্ল্যাট কেনেন। সোমবার রাতে ওই ফ্ল্যাটে বাসার আংশিক মালামালও রেখে আসেন। গতকাল পরিবার নিয়ে ওই বাসায় ওঠার কথা ছিল তার। চাঁদা বা ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের কারণে জুনায়েদকে হত্যা করতে পারে দুর্বৃত্তরা। তিনি হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। হোটেলের ম্যানেজার শাহ আলম জানান, ১৮ বছর ধরে তিনি ওই হোটেলের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন। জুনায়েদের বাবার নাম হাজি বিল্লাল হোসেন। তাদের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার পাড়াগাঁও গ্রামে। নিউ শাহজালাল আবাসিক হোটেলের মালিক ছিলেন বিল্লাল হোসেন। কয়েক বছর আগে তিনি মারা যাওয়ার পর হোটেল দেখাশোনার দায়িত্ব নেন জুনায়েদ। কয়েক দিন ধরে জুনায়েদ খুব চিন্তিত ছিলেন। সোমবার রাতে একটি ফোন পেয়ে তিনি বেরিয়ে যান। দারুস সালাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফারুকুল আলম জানান, জুনায়েদ আবাসিক হোটেলের ব্যবসা করতেন। ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের কারণে তাকে হত্যা করা হতে পারে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে বলা যাবে, কারা কী কারণে তাকে হত্যা করেছে। ঘটনায় জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।