আমনে লোকসান, সার-কীটনাশক মূল্য বৃদ্ধি : বোরো আবাদ নিয়ে হতাশা

স্টাফ রিপোর্টার: বোরো আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা। সার কীটনাশক, ডিজেলের দাম বৃদ্ধি, ন্যায্যমূল্যে আমন ধান বিক্রি করতে না পারা এবং প্রতিবছর ফসল চাষে কৃষকরা তিগ্রস্ত হওয়ায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না বলে আশঙ্কা করছেন তারা। ইতোমধ্যে বীজতলার চারা বড় হতে শুরু হয়েছে। চলতি মাসের শেষ দিকে বোরো রোপণ পুরোপুরি হবে বলে আশা করছেন কৃষকরা। বোরো আবাদসহ অন্যান্য ফসল আবাদে ডিজেল, বীজ, সার, কীটনাশকের মূল্য কমানোসহ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণে সরকারিভাবে ভতুর্কি প্রদানের দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরসূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলায় চলতি বোরো মরসুমে ১ লাখ ৫১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ধান উৎপাদনের ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ২০০ মেট্রিকটন। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের বোরো আবাদের ল্যমাত্রা ৭৮৪৪ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের বোরো আবাদের ল্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৮২২৮ হেক্টর। বিগত কয়েক বছর ধরে ধানের বাজার মূল্য কমে যাওয়ায় ও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ধান চাষে এখন কৃষকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষকরা।
কৃষকরা জানায়, ৩৩ শতকের এক বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করতে ৩৬ থেকে ৪০ লিটার ডিজেলের প্রয়োজন, যার বাজার মূল্য ২ হাজার ৭৪০ টাকা। সব মিলিয়ে প্রতিবিঘায় ধান চাষে প্রায় ১০ হাজার ২৪০ টাকা খরচ হয়। গড়ে প্রতিবিঘায় ২০ মণ ধান উৎপন্ন হলে গড়ে ৫০০ টাকা প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে। এতে বিঘা প্রতি আয় হয় ১০ হাজার টাকা। পরিশ্রমের মূল্য বাদ দিয়েই প্রতি বিঘা জমিতে কৃষকদের প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। সদর উপজেলার ইছালী গ্রামের কৃষক আরমান আলী বলেন, ‘আমন ধানের উৎপাদন খরচ ওঠেনি। ধারদেনা শোধ করতে পারিনি। বোরো আবাদ কীভাবে করবো চিন্তায় আছি।’ একই উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমন চাষাবাদের ক্ষতি কাটতে না কাটতেই বোরো আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছি। বেঁচে থাকার জন্য হলেও বোরো আবাদ করতে হবে। কারণ কৃষি কাজ ছাড়া আমাদের তো আর অন্য কোনো উপায় নেই। ফলে প্রতিবছরই ক্রমশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা।
সরকারিভাবে সহযোগিতা না করলে আমরা কৃষকরা মনে হয় আর এ পেশায় টিকে থাকতে পারবো না। কারণ প্রতিটি ফসল চাষাবাদে আমাদের যদি লোকসান গুনতে হয়, তাহলে কীভাবে টিকে থাকবো। প্রতিবছর লোকসান দিয়ে দিয়ে আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। কৃষকদের তো প্রতিবাদের কোনো ভাষা নেই। আবার প্রতিবাদ করলেও সংশ্লিষ্টরা কর্ণপাত করেন না। আমন ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা গেলে বোরো চাষাবাদে কৃষকরা আরও আগ্রহী হতো। কম দামে ধান বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় পুনরায় বোরো আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। ডিজেল, সার ও কীটনাশকের অতিরিক্ত মূল্যকেই ধান চাষাবাদে লোকসানের অন্যতম কারণ বলে চিহ্নিত করেছেন কৃষকরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক নিত্যরঞ্জন বিশ্বাস জানান, বোরো মরসুমে পঞ্চগড় জেলায় ডিজেল সঙ্কটের কোনো সম্ভাবনা নেই। গত বোরো মরসুমেও এ জেলায় ডিজেলের কোনো সঙ্কট ছিলো না। চলতি মরসুমেও থাকবে না। বোরো আবাদ নিয়ে কৃষকদের চিন্তার কোনো কারণ নেই। কারণ এবছর বোরোর বীজতলার কোনো ক্ষতি হয়নি।