স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশে সরকারের ‘কঠোর নিয়ন্ত্রণ’ চলছে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। ২০১৫ সালে বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় এই পর্যবেক্ষণ দিয়েছে নিউ ইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি। এইআরডব্লিউ’ বলছে, গত বছর একদিকে ব্লগার ও বিদেশিরা জঙ্গিগোষ্ঠীর হামলার লক্ষ্যে ছিলেন, অন্যদিকে সরকারের চোখ রাঙানি হজম করতে হয়েছে গণমাধ্যমকর্মী ও সুশীল সমাজকে।একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারে ‘ত্রুটিগুলো’ প্রশমন না হওয়ায় ‘ন্যায়বিচার’ হচ্ছে না বলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই মানবাধিকার সংগঠনটির দাবি। বুধবার ৬৫৯ পৃষ্ঠার ‘বিশ্ব প্রতিবেদন ২০১৬’ প্রকাশ করে এই মানবাধিকার সংস্থা যাতে ৯০টি দেশ নিয়ে নিজেদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের আন্দোলনে সহিংসতায় প্রাণ হারান অনেক সাধারণ যাত্রী, আহত হন অসংখ্য। হরতাল-অবরোধে শিশুদের স্কুলে শিক্ষা গ্রহণের মতো বিষয়গুলো বাধাগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে সহিংসতা দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন, বিরোধী কর্মীদের বন্দি এবং বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে তার কার্যালয়ে নজরবন্দি করে রাখার ঘটনা ঘটে ওই সময়ে। সরকারের সমালোচনা করে প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ একটি ‘স্বেচ্ছাচারিতা পূর্ণ’ পথে চলতে থাকে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে অবতীর্ণ হতে দেখা যায় বাক স্বাধীনতা ‘হরণ’ এবং সুশীল সমাজকে ‘ছত্রভঙ্গ’ করার ভূমিকায়। বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে নিজের মন্তব্য তুলে ধরে এইচআরডব্লিউ‘র এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্রাড এডামস বলেন, প্রধান দলগুলো নির্বাচন বয়কট করায় সংসদ সক্রিয় বিরোধীদলশূন্য হয়ে পড়েছে। এবং বর্তমানে সরকার সংসদের বাইরেও বাক-স্বাধীনতা হরণের পথ বেছে নিয়েছে। ব্লগার হত্যার তার মন্তব্য, “খুবই মর্মান্তিক বিষয় হলো ব্লগার হত্যার পর সরকার ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে বাক-স্বাধীনতা চর্চায় উল্টো নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালে বাংলাদেশে জঙ্গি আক্রমণের শিকার হয়ে পাঁচজন ব্লগার প্রাণ হারান। এছাড়া হুমকির মুখে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাবে আত্মগোপনে যেতে হয় অনেক ব্লগার, লেখক ও প্রকাশককে।
এছাড়া শিয়া সম্প্রদায়ের মিছিল ও হিন্দু মন্দিরে হামলায় আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে একই বছর। সরকারের বিরুদ্ধে দমনের অভিযোগ তুলে ধরে এই মানবাধিকার সংগঠন তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, “বিরোধী দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদেরকে বিভিন্ন গুরুতর অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার মধ্যে কিছু অভিযোগ ছিল সাজানো। গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় অনেকেই আত্মগোপনের পথ বেছে নেন। হত্যা, গুম এবং নির্বিচারে আটকের মত বেশ কয়েকটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জড়িত থাকার অভিযোগও পাওয়া গেছে; যার মধ্যে মাত্র কয়েকটিতে দোষীদের তদন্ত বা বিচারের আওতায় আনা হয়। বাংলাদেশে সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমকে কঠোর পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। যুদ্ধাপোধের বিচার নিয়ে প্রশ্ন তোলার দায়ে বিচারের সম্মুখীন হতে হয় এক সাংবাদিককে। আর তার তার পক্ষে অবস্থান নেয়ায় সুশীল সমাজের ৪৯ প্রতিনিধির বিরুদ্ধে আনা হয় আদালত অবমাননার মতো অভিযোগ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের সমালোচনা করায় দুজনকে আইনের মুখোমুখি হতে হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এডামম বলেন, গতবছর যেসব সমস্যা ছিল চলতি বছরও বাংলাদেশে একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিস্থিতি মাত্রা আরও ভয়াবহ। মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট সরকারের বেশি কিছু নেতিবাচক বিষয় তুলে ধরা হলেও ২০১৫ সালে শ্রম আইনে কিছু উন্নয়নমূলক সংশোধন আনার কথা তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। ওই সংশোধনের ফলে ইউনিয়ন গঠন বিষয়ক স্বেচ্ছাচারী আইনি জটিলতা দূর হয়েছে। প্রতিবেদনে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে বাল্য বিবাহ ও জোরপূর্বক বিবাহ, প্রবাসী শ্রমিক, যৌন প্রবৃত্তি ও লিঙ্গগত পরিচয়ের বিষয়েও পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে এইচআরডব্লিউ।