স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর মাতু-য়াইলে সিটি কর্পোরেশনের আবর্জনার স্তূপ থেকে উদ্ধার করা মানুষের কঙ্কাল নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় চলছে। এ আবর্জনার স্তূপে কীভাবে কঙ্কালগুলো চাপা দেয়া হলো তা নিয়ে পুলিশ ও গোয়েন্দাসংস্থাগুলো তদন্ত শুরু করেছে। কঙ্কাল উদ্ধারের ঘটনায় শুক্রবার রাতেই পুলিশ বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের করেছে। পুলিশ ধারণা করছে, উদ্ধার করা কঙ্কালগুলো বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার জন্য ব্যবহার হয়েছে। পুলিশের ডেমরা জোনের সহকারী কমিশনার মিনহাজুল ইসলাম বলেন, উদ্ধার করা কঙ্কালগুলোর মধ্যে ১৩টি টুকরা খাঁটি কঙ্কাল। অন্য ১৬টি অংশে কয়েকটি দেহের কেমিকেল ডি-কম্পোজ করা কঙ্কাল। এ ১৬ টুকরার মধ্যে ৭টি পা, ৩টি হাত, ২টি মাথার অংশ, একটি বুকের অংশ, একটি গলাসহ মাথার অংশ ও ২টি বুকসহ মাথার অংশ রয়েছে। দুটি মাথার অংশের মধ্যে প্রতিটি ভিন্ন দেহের মাথা। একটি মাথা নারীর অংশ ও অপরটি পুরুষের। এ খণ্ডগুলো কেমিকেল ডি-কম্পোজ করা। কঙ্কালগুলো একটি মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের শিক্ষক পর্যবেক্ষণ করে পুলিশকে জানিয়েছেন, এগুলো মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। হাতের অংশগুলো থেকে শিরা কেটে ফেলা হয়েছে। কারণ কলেজের অ্যানাটমি (শরীর ব্যবচ্ছেদ) বিভাগে শিক্ষার্থীদের লাশের হাতের শিরা কেটে পর্যবেক্ষণ করতে দেয়া হয়। তিনি পুলিশকে আরো জানান, খণ্ডিত মাথার অংশ কেমিকেল দিয়ে সংরক্ষণ করার প্রমাণ রয়েছে।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, কোনো খুনি কাউকে খুন করে দেহ এভাবে কেমিকেল দিয়ে সংরক্ষণ করবে না। এমনকি কেমিকেল ডি-কম্পোজ করা অংশগুলো এমনভাবে কাটা হয়েছে যে তা মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার জন্যই ব্যবহার হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে, শুক্রবার কঙ্কালগুলো উদ্ধারের পর তা ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করতে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজমর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের জন্য সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। আজ রোববার মেডিকেল বোর্ডে ময়না তদন্ত ও নমুনা সংগ্রহ করা হবে।
যাত্রাবাড়ি থানার ওসি (তদন্ত) অবণী শঙ্কর কর জানান, কঙ্কাল উদ্ধারের ঘটনায় এসআই জসীম উদ্দিন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। গতকাল মাতুয়াইলে সিটি কর্পোরেশনের ডাম্পিং এলাকায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শন করেছেন। ডাম্পিঙের দায়িত্বরত ঢাকা সিটি করপোরেশনের (দক্ষিণ) সহকারী প্রকৌশলী এএইচএম আব্দুল্লাহ হারুন বলেন, তদন্তের স্বার্থে টোকাই বা বহিরাগতদের ডাম্পিং এলাকায় ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।
অন্যদিকে, পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, ধানমন্ডি এলাকায় অবস্থিত বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে এ কঙ্কালগুলো সেখানে ফেলানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্তের জন্য ৩টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করবে। পুলিশ ধারণা করছে, মেডিকেল কলেজে পড়াশুনা শেষে ওই কঙ্কালগুলো বর্জ্য পরিষ্কারে নিয়োজিতদের একটি স্থানে পুঁতে ফেলার কথা। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের স্থান না থাকায় সেগুলো অনুমতি নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের ময়লা ফেলার স্থানে পুঁতে ফেলা হয়। কিন্তু ওই মেডিকেল কলেজের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা এসব কঙ্কাল পলিথিনের বস্তায় ভরে সিটি কর্পোরেশনে হাসপাতাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গাড়িতে তুলে দিয়েছে। হাসপাতাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গাড়ি মাতুয়াইলে ডাম্পিং এলাকায় ফেলে দেয়।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার সকালে মাতুয়াইলে ময়লা ফেলানোর স্থান থেকে কয়েকটি দেহের ২৯ টুকরা কঙ্কাল উদ্ধার করে।