পরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কিরে হায়…….আবার দেখা যদি হলো সখা প্রাণের মাঝে আয়

রহমান মুকুল/ শরিফুল ইসলাম রোকন: ১৯৭৭ সালে এসএসসি পাস করেছেন নাসির উদ্দীন। তিনি রাজউকের ট্যাক্সেন অফিসার। চাকরিসূত্রে সপরিবারে ঢাকায় বসবাস। কতো না স্মৃতি বিজড়িত এ বিদ্যালয়ে, অথচ পেশাগত ব্যস্ততার কারণে বিদ্যালয়ের পরতে পরতে হিরন্ময় কৈশোর ঘুমিয়ে থাকলেও একটিবারের জন্যও আসা হয়ে ওঠেনি আলমডাঙ্গায়। প্রায় ৪ দশক পর প্রিয় বিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগদান উপলক্ষে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পা রেখেছেন তিনি। এখানে উপস্থিত হয়ে পুরোনো বন্ধুদের খুঁজে পেয়েছেন তিনি। খুঁজে পেয়েছেন নির্মল বন্ধুত্বের হাতছানি। বহুদিনের সাক্ষাত না পাওয়া শৈশব-কৈশোরের বন্ধু সুগার অ্যান্ড ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের জিএম সিদ্দিকুর রহমান, পশুসম্পদ বিভাগের সহকারী পরিচালক জিল্লুর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দীন জোয়ার্দার, আলমডাঙ্গার পরিচিত মুখ সাবুসহ বেশ কিছু বন্ধুর সাথে। প্রাণের উৎসবে যোগ দিয়ে গত দু দিন স্বপ্নের মোহাচ্ছন্নতায় কাটিয়েছেন বলে তাদের মন্তব্য।
সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব লুৎফর রহমান জোয়ার্দার। তিনি এ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছেন ১৯৬০ সালে। অবসর জীবনে পরিবারসহ ঢাকা শহরে বসবাস করেন। প্রাণের টানে শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে ছুটে এসেছেন তিনি। এখানে খুঁজে পেয়েছেন কৈশোরের বন্ধু আলমডাঙ্গার ঈর্ষণীয় জনপ্রিয় শিক্ষক আফিল উদ্দীন, অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার আব্দুর রহিম বান্দা, আনসার ও ভিডিপি পরিচালক আবুল কাশেম, মুক্তিযুদ্ধকালীন গেরিলা কমান্ডার আব্দুল হান্নান। এ বার্ধ্যক্যও যেন তাদের অট্টহাসিতে যেন কৈশোরের স্পর্ধা ঝরে ঝরে পড়ছিলো। বয়সকে হার মানিয়েছিলো তাদের হাস্য-লাস্য।
হায়াতুজ্জামান ফরহাদ রাজশাহীর গোদাগাড়ী সরকারি মহিলা কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক। আলমডাঙ্গা ওয়াবদাতে চাকরি করতেন তার বাবা। সেই সূত্রে তিনি কয়েক বছর আলমডাঙ্গা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। বদলি চাকরিসূত্রে তিনিও পরবর্তীকালে পরিবারের সাথে অন্যত্র চলে যান। কিন্তু পিছু ছাড়েনি বিদ্যালয়ের স্মৃতি। প্রিয় বিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি উৎসবের কথা জেনে তিনি রাজশাহী থেকে ছুটে এসেছেন। দেখেন তার নিজের মত কৈশোরের বন্ধু আবুল কাশেম এসেছেন চিকিৎসক স্ত্রী ও কম্পিউটার প্রকৌশলে পড়ুয়া ছেলেকে সাথে নিয়ে। আবুল কাশেম জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব। অন্যান্য বন্ধুর মধ্যে দেখা হলো হায়াতুজ্জামান ফরহাদ ও জগলুল হায়দারের সাথে। হায়াতুজ্জামান ফরহাদ রাজশাহীর গোদাগাড়ী সরকারি মহিলা কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক ও জগলুল হায়দার জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রথম সহকারী মহাব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত। তাদের মতো দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ছুটে এসেছেন। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকেও অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সাত সমুদ্র তের নদীর ওপার থেকে ছুটে এসেছেন অনেকেই।
আলমডাঙ্গা পাইলট বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গত শুক্রবার শুরু হওয়া দু দিনব্যাপী শতবর্ষ পূর্তি উৎসবের গতকাল ছিলো সমাপনী। এই উৎসবের শেষ দিনেও এ রকম অসংখ্য মধুর ঘটনা ঘটে। অনেকে সেলফি, ছবি তোলাসহ গল্প ও আড্ডায় ফিরে যান সোনালি অতীতে।
দ্বিতীয় দিনের ১ম অধিবেশনে সকালের অনুষ্ঠানে আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দীনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের ৮ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চোধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুল কাশেম, ভাওয়াল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ইউসুফ আলী, আফিল উদ্দীন মাস্টার, বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেন, সিভিল এভিয়েশন অথোরিটির ডেপুটি ডিরেক্টর ফিরোজ আলী, বিদ্যুত লাইসেনিং বোর্ডের সচিব আতোয়ার রহমান মোল্লা, ঢাকা আহসানিয়া মিশনের অ্যাসিসটেন্ট ডিরেক্টর হাবিবুর রহমান, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মীর মাহফুজুল হক চৌধুরী, কুষ্টিয়া জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক খন্দকার আমান উল্লাহ, ডা. শফিউল্লাহ মোল্লা ঠানু, মুক্তিযুদ্ধকালীন গেরিলা কমান্ডার আব্দুল হান্নান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন, আলমডাঙ্গা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শফিউর রহমান সুলতান জোয়ার্দার, ব্যাংকার লিয়াকত আলী, মিজানুর রহমান, বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মুক্তিযোদ্ধা কোরবান আলী, ইয়োথ গ্রুপের চিফ অপারেটিভ অফিসার প্রকৌশলী কায়সার আলী।
দ্বিতীয় দিনের সমাপনী অধিবেশনে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি আওরঙ্গজেব মোল্লা টিপুর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দার ছেলুন-এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুল কাশেম, আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দীন, আলমডাঙ্গা পৌর মেয়র হাসান কাদির গনু, মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দার টোটন, আফিল উদ্দীন মাস্টার, জেলা শিক্ষা অফিসার খন্দকার রুহুল আমীন, আলমডাঙ্গা থানার ওসি শেখ আতিয়ার রহমান, সুগার অ্যান্ড ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক কর্মকর্তা আহসানুল হক কায়সার, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম খান, মোল্লা গ্রুপের স্বত্বাধিকারী সহিদুল হক মোল্লা ও লিয়াকত আলী মোল্লা লিপু। প্রভাষক একেএম ফারুক ও তাইমুন নাহার মিমের উপস্থাপনায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সাবেক উপসচিব লুতফর রহমান জোয়ার্দার, রাজউকের ট্যাক্সেন অফিসার নাসির উদ্দীন, সাবেক মৎস্য কর্মকর্তা মীর আব্দুল হামিদ চৌধুরী, সাবেক আনসার ও ভিডিপি পরিচালক আবুল কাশেম, মুক্তিযোদ্ধা মইন উদ্দীন, প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দীন, মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষক খন্দকার রাজা মাস্টার, সহকারী অধ্যাপক চাঁদ আলী, সাবেক পুলিশ সুপার আবুল বাশার মোল্লা, অ্যাড রবকুল হোসেন, উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি জাহিদ হোসেন রেন্টু, এটিও নুরুল ইসলাম, ব্যাংকার লিয়াকত আলী, সাবেক ব্যাংকার দীলিপ কুমার বিশ্বাস, পৌর আওয়া মীলীগ সভাপতি আবু মুসা, সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ইয়াকুব আলি মাস্টার, যুগ্ম সম্পাদক কাজী রবিউল ইসলাম, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী খালেদুর রহমান অরুন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আতিয়ার রহমান, আলম হোসেন, বিআরডিবি চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলাম মুহিদ, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদের নেতা সহকারী অধ্যাপক নাজমুল হক পানু, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা নূর মোহাম্মদ জকু, উপজেলা যুবলীগ আহ্বায়ক আহসান উল্লাহ, কাউন্সিলর জহুরুল ইসলাম স্বপন, মতিয়ার রহমান ফারুক, জাহিদুল ইসলাম, আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি আশরাফুল হক প্রমুখ। সন্ধ্যায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

Leave a comment