৯ জেলায় রেলওয়ে যুক্ত করার ঘোষণা এবং বাস্তবতা

খবরটি সাড়া জাগানো হলেও বাংলাদেশ রেলওয়ের বাস্তবতা দেখে বাস্তবায়ন হবে বলে বিশ্বাস করা কঠিন। যখন পড়শি দেশের রেলযোগাযোগ অবিস্মরণীয়, তখন আমাদের দেশের বহু স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অবশ্য তীব্র আন্দোলনের মুখে কিছু পুনরায় চালু হলেও লোকসান কমাতে যে মন্ত্রণালয় যাত্রী মাশুলবৃদ্ধির বিকল্প খুঁজতে পারেনি, সেই মন্ত্রণালয়ের ওপর উন্নয়ন তরান্বিত করণে কতোটা বিশ্বাস রাখা যায়?
মেহেরপুরসহ দেশের যে জেলাগুলোতে রেল যোগাযোগ নেই, সেই জেলাগুলোতে রেলযোগাযোগ স্থাপনের দাবি দীর্ঘদিনের। শুধু তাই নয়, দেশের প্রথম রাজধানী মুজিবনগরে রেলযোগাযোগের প্রতিশ্রুতি সরকার প্রধানের মুখ থেকে কয়েক বছর আগেই পাওয়া গেছে। দর্শনা থেকে মুজিবননগর সড়কের ধার দিয়ে রেললাইন স্থাপনের স্বপ্ন অবশ্যই অমূলক বা অবান্তর নয়। সরকারের তথা মন্ত্রণালয়ের সদিচ্ছার ব্যাপার মাত্র। এই সদিচ্ছার জন্য অবশ্য দরকার মন্ত্রণালয়ের জৌলুস। সারাদেশের রেলওয়ের দশা দেখে মন্ত্রণালয়ের অবস্থা কেমন তা অনুমান করা অসম্ভব নয়।
অবশ্যই বাংলাদেশ রেলওয়ের অগ্রগতি হয়েছে, তবে অগ্রগতি বিশ্বমানের দৃষ্টিতে নস্যির সামিল। প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দিকে দৃষ্টি দিলেও এর যথার্থতা মিলবে। যেন গ্রামে গ্রামে স্টেশন। লোকালের পর লোকাল। কর্মস্থল দূরে হলেও বাড়িতে গিন্নির রান্না গরম ভাত খেয়ে লোকালে চেপে কর্তা দিব্যি অফিস যায় যেমন, তেমনই ফিরে সামলায় বাড়ির কাজ। মাশুল? মাসকাবারি কিংবা দৈনিক টিকেটের মূল্য কিলো প্রতি কয়েক আনা। শুধু তাই নয়, টিকেট কাটার ঝামেলা মুক্ত করতে এখন সেলফোনেই কাটা যায়। আর আমাদের দেশে? রেলভবনে ওয়াইফাই চালু হয় ঢাকঢোল পিটিয়ে। অবশ্য ওই অনুষ্ঠানে মন্ত্রী ট্রেনে ওয়াইফাই সংযোগ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ভবনে ওয়াইফাই উদ্বোধনের চেয়ে অন্তত আন্তঃনগর এক্সপ্রেসে ওয়াইফাই সংযোজনে ধুমধাম মানাতো। তার পরও ভবনে তো হয়েছে! ট্রেনে সংযোজনের ঘোষণা এসেছে। এরপর মন্ত্রীর মুখ দিয়েই উচ্চারিত হয়েছে, মেহেরপুরসহ দেশের ৯টি জেলায় যুক্ত হচ্ছে রেলওয়ে। এ ঘোষণার বাস্তবায়ন দেখার প্রতীক্ষায় এলাকাবাসী।
একের পর এক স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ করে নয়, কী করলে রেলভ্রমণকারীর সংখ্যা বাড়বে, কী কী করলে জৌলুস ফিরবে, বাংলাদেশ রেলওয়ের তাই তাই করা দরকার। বাংলাদেশ রেলওয়ের করুণ দশা এক দু বছরে হয়নি, দীর্ঘদিন ধরেই লাভজনক ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে অতীব জরুরি বিভাগকে যেন সকলে মিলেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে টেনে নিয়েছি আমরা। জৌলুস ফেরাতে হবে। লোকসান থেকে লাভজনকে নিতে হবে। রেলভ্রমণে আগ্রহী করতে হলে ভ্রমণকারীদের যেমন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, তেমনই সময়ের অপচয় রোধে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে।
কোনোভাবেই অস্বীকার করার জো নেই, বর্তমান সরকারের আমলে অনেক ক্ষেত্রেই উন্নয়নের বাস্তবমুখী ছোঁয়া লেগেছে। তা না হলে মধ্যম আয়ের দেশ ঘোষণা করা হলো কিসের বলে? যদিও এই ঘোষণায় বহুখাতেই বিদেশের অনুদান বন্ধ হয়েছে। তা হোক, কারো দয়ায় পোলাও কোর্মার চেয়ে নিজের অর্জিত শাকভাত অনেক তৃপ্তির। বাংলাদেশ রেলওয়েকে ঢেলে সাজাতে অন্যের দয়ার চেয়ে সর্বপ্রথম দরকার দুর্নীতি দূর করে সম্পদের সঠিক ব্যবহার।