সন্ত্রাসের কাছে মানুষ কতোটা অসহায়, তার অন্যতম উদাহরণ চুয়াডাঙ্গা কুতুবপুরের মালয়েশিয়া প্রবাসী তোয়াজ উদ্দীন লাল্টুর স্ত্রী বিলকিস। দু ছেলের মধ্যে বড় ছেলে ৮ম শ্রেণির ছাত্র, ছোট ছেলে শিহাব পড়তো তৃতীয় শ্রেণিতে। হুমকির পর শিহাবকে অপহরণ করে চিহ্নিত গ্যাং। তাকে হত্যা করে মৃত দেহ ফেলে রাখা হয় গ্রামের অদূরবর্তী শিবনগর মাঠের ধানক্ষেতে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করে শিশু শিহাবের মা বিলকিস খাতুন। মামলা তুলে নেয়ার জন্য আসামিদের তরফে হুমকির পর হুমকি অব্যাহত রয়েছে। হুমকির মুখে বিলকিস ঘর বাড়ি ছেড়ে পিতার বাড়ি আশ্রয় নিয়েছেন। অবশ্য গতকাল এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর চুয়াডাঙ্গা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ একটু নড়ে চড়ে বসেছে। দুজনকে গ্রেফতার করেছে।
অবশ্যই একটি গ্রামের একজন বা একটি পরিবারের নিরাপত্তাহীনতাকে জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে বোঝানো যায় না। তারপরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা তথা পুলিশ কি ওই পরিবারের নিরাপত্তা দিতে না পারার ব্যর্থতা অস্বীকার করতে পারে? না, যেমন তা অস্বীকার করার জো নেই, তেমনই দায় এড়ানোর সুযোগও নেই। কেন না, আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় পুলিশ সকলের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজে নিয়োজিত। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, এক সময়ের রক্তাক্ত জনপদ খ্যাত চুয়াডাঙ্গা জেলায় যতো পুলিশ ফাঁড়ি তা দেশের অন্য জেলায় জনসংখ্যা অনুপাতে অকল্পনীয়। এরপরও কি চুয়াডাঙ্গায় পুলিশে অপ্রতুলতা বলে দায় এড়ানো যায়? যে গ্রামে রয়েছে পুলিশ ফাঁড়ি, সেই গ্রামে সন্ত্রাসীদের হুমকি ধামকি, শিশু অপহরণের পর হত্যার পর উল্লাস হয় কীভাবে? সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন, তবে কি পুলিশ ফাঁড়ি ওই গ্রামে সন্ত্রাসীদের দয়ার মর্জিতে রয়েছে? নাকি পুলিশের কোনো কর্তার মদদে বা উদাসীনতার কারণে সন্ত্রাসীরা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে? এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্তা ওদিকে একটু দৃষ্টি দিলেই বুঝবেন নিশ্চয়। শিশু হত্যার পর এজাহার নামীয় দু আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। স্বীকারোক্তি মেলেনি। ঘটনার কয়েক মাস অতিবাহিত হয়েছে। মামলা তুলে নিতে হুমকির মুখে জিডি করা হয়েছে। তারপরও তেমন নড়েনি পুলিশ। পত্রস্থ হওয়ার পর জেলা পুলিশ কর্তার দৃষ্টিগোচর হওয়ায় হয়তো কিছুটা বেগ পেয়েছে তদন্ত। ধরা পড়েছে আরো দুজন। এরপর……। আবারও কি ঝিমিয়ে যাবে? হুমকির কাছেই কি করতে হবে অসহায়ত্বের আত্মসমর্পণ?
প্রবাসীর স্ত্রী-সন্তানের নিরাপত্তা দিতে না পারার দায় সরকারেরও। প্রবাসীরা প্রবাসে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে অর্জিত অর্থ দেশে পাঠান। যে অর্থ নিয়েই আমাদের রেমিটেন্স বৃদ্ধির গর্ব। অথচ প্রবাসীদের রেখে যাওয়া স্ত্রী-সন্তানের নিরাপত্তায় আমাদের চরম উদাসীনতা। তা না হলে চুয়াডাঙ্গা কুতুবপুরের তোয়াজ উদ্দীনের শিশু সন্তানকে কেন অপহৃত হতে হয়েছে, কেন দিতে হয়েছে প্রাণ। প্রবাসী পিতা তার শিশু সন্তানকে হত্যার খবরে কেমন আছেন, কেমন থাকতে পারেন কোনো সন্তানহারা পিতা? এরপরও থামেনি সন্ত্রাসীরা। হুমকি ধামকি অব্যাহত রেখেছে। হুমকির মুখে প্রবাসীর স্ত্রী ঘর বাড়ি ছেড়েছে। জেলা পুলিশের পদস্থ কর্তার আশু পদক্ষেপে পরিস্থিতির উন্নতি হোক। দূর হোক হুমকি। উবে যাক আতঙ্ক।