শাক-সবজির আবাদ কীটনাশকমুক্ত রাখতে পারলে যেমন মানুষ পেতো সুস্থতা, তেমনই পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা পেতো। যদিও মানুষের জন্যই মানুষ আগুড়ে আবাদের পাশাপাশি অধিক ফলনের দিকে ঝুঁকে মানুষই মানুষের সর্বনাশ ডেকে আনছে। এর মাঝে কোথাও কোথাও, কেউ কেউ বা কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের বিশেষ উদ্যোগে কীটনাশকমুক্ত বিশেষ ব্যবস্থায় খাটো আবাদ করে উদাহরণও সৃষ্টি করছেন।
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ বিষমুক্ত বেগুনের আবাদ করে দৃষ্টান্তই শুধু স্থাপন করেননি, অন্যদেরও উদ্বুদ্ধ করার মতো পদক্ষেপ নিয়েছেন। বিশেষ এ উদ্যোগের জন্য উদ্যোক্তাদের অভিনন্দন।
নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না, আমরা বংশ পরম্পরায় একজনকে দেখে অন্যজন আবাদ শিখেই কৃষিখাতে বিপ্লব ঘটিয়ে চলেছি প্রায় প্রতিবছর। দেখাদেখি আবাদের পাশে দেশের কৃষি সম্প্রসারণের অবদান কিছুটা হলেও যে যুক্ত হয়েছে তা বলাই বাহুল্য। তবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছুতে কৃষি সম্প্রসারণের যতোটা অগ্রগতি দরকার, অতোটা দূরাস্ত, তার ধারের কাছেও নেই। অথচ পড়শি দেশ এগিয়ে যাচ্ছে অসম্ভব গতিতে। অবশ্য আমাদের দেশের সরকার নানাভাবেই কৃষি বিভাগকে বলিষ্ঠ করে স্বনির্ভরতা অর্জনের দিকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে মন্ত্রী আমলার মুখে মুখে। চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া এলাকার কৃষিখাতকে সরকার বিশেষ গুরুত্বও দিয়েছে। যদিও চাষাবাদে আধুনিকায়নে কৃষকদের সচেতন করার কর্মসূচি পুরোনো হলেও এ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের অধিকাংশই কর্তাদের পকেটস্থ হয় বলে গা সওয়া অভিযোগ রয়েছে। অথচ আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান।
বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটি এতোটাই উর্বর যে, আবাদ হয় না এমন ফসল খুঁজে পাওয়া ভার। এলাকার কৃষকদের অধিকাংশই খাটো আবাদে আগ্রহী। কপি, বেগুনের আবাদ দিন দিন বেড়েই চলেছে। শীত মরসুমেই নয়, আগাম খাটো আবাদেও পারদর্শী হয়ে উঠেছেন বহু কৃষক। প্রয়োজনের তাগিদেই। আগাম আবাদ মানেই প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে ফসল ফলানো। ওই যুদ্ধের মূল রসদ হলো- সার, সেচ ও কীটনাশক। তার ছোঁয়া ভরা মরসুমেও লাগে। লেগেছেও। যে আবাদে এক সময় রাসায়নিক সার, কীটনাশক সেচের দরকার হতো না, এখন তাতেও এসব দেন কৃষকেরা। কারণ- বাড়তি ফলনের আশা। যদিও মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার অধিক ফলন দূরের কথা জমির উর্বরতা বিনষ্ট করে রোগবালাই ডেকে আনে। বুঝে না বুঝে কৃষকদের অধিকাংশই কীটনাশকের ব্যবহার দিন দিন বাড়াতেই থাকেন। অথচ কীটনাশক ছাড়াই বেগুনের মতো আবাদও যে করা যায়, তা জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সহযোগিতায় দেখিয়ে দিয়েছেন।
‘শিম বেগুনে কীটনাশক না দিলে এক বেলার মধ্যেই তো পোকা লেগে যায়’ এ যুক্তি দেখিয়ে অধিকাংশ কৃষকই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কীটনাশক প্রয়োগের মাত্রা বাড়িয়ে দেন, কীটনাশক প্রয়োগ করে নিয়ম না মেনেই সবজি তুলে বাজারে বিক্রি করেন, নিজেও খান। বিষযুক্ত সবজি খেলে মানুষ ক্যান্সারসহ নানা রোগে আক্রান্তের ঝুঁকিতে পড়ে। ক’জন জানেন, কীটনাশক প্রয়োগের পর কতোদিন বিষ থাকে? তাছাড়া বিশেষ যত্নে বিষমুক্ত সবজি বাজারে বিক্রি করতে গিয়ে বাড়তি কদর না পেলে সেদিকে চাষিরা ঝুঁকবেনই বা কেন? এজন্য যেমন দরকার সচেতনতা, তেমনই দরকার বিষমুক্ত সবজি নিশ্চিতকরণসহ অধিক দামে বিক্রির বিশেষ ব্যবস্থা।