স্টাফ রিপোর্টার: তিল ধারণের জায়গা নেই বিশ্ব ইজতেমা প্রাঙ্গণে। চারদিকে শুধু মানুষ আর মানুষ। তারপরও আসছে স্রোতের মতো। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য লাভের আশায় ছুটে আসার ব্যাকুলতা পেয়ে বসেছে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের।
অনেকেই গত দুদিন ইজতেমায় অংশ না নিলেও আজ রোববার কাঙ্ক্ষিত আখেরি মোনাজাতে শরিক হয়ে আল্লাহর দরবারে দুই হাত তুলে গুনাহ মাফের আশায় ছুটে আসছেন দূর-দূরান্ত থেকে। আজ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে ইজতেমা ময়দানের বিদেশি নিবাসের পূর্বপাশে বিশেষভাবে স্থাপিত মোনাজাত মঞ্চ থেকে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। আর এর মধ্যে দিয়ে শেষ হবে ৫১তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। মাঝে ৪ দিন বিরতি দিয়ে পুনরায় আগামী ১৫ জানুয়ারি শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব।
ইজতেমা আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরব্বি প্রকৌশলী মো. গিয়াসউদ্দিন জানিয়েছেন, দিল্লি জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা সাদ আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করবেন। মোনাজাতে বাংলাদেশসহ সারা দুনিয়ার মানুষের সুখ, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে দোয়া করা হবে। আশা করা হচ্ছে, বিশেষ তাত্পর্যপূর্ণ এ মোনাজাতে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ মুসল্লি অংশ নেবেন।
গাজীপুর জেলা প্রশাসনসূত্রে জানা গেছে, সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, সরকারি-বেসরকারি উচ্চ পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও ইসলামী দেশসমূহের কূটনীতিকবৃন্দ মোনাজাতে অংশ নিবেন।
বিশ্ব ইজতেমার নিরাপত্তা বিষয়ে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এসএম মাহফুজুল হক নূরুজ্জামান গতকাল শনিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ইজতেমা ময়দানে যাতে কোনো ধরনের নাশকতা কেউ করতে না পারে সেজন্য আরো বেশি সতর্ক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নাশকতার বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
আখেরী মোনাজাতে শরিক হতে গতকাল সারাদিন ও রাতে অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসল্লি বাসে, ট্রাকে, রেল ও নদীপথে ইজতেমা প্রাঙ্গণে এসেছেন। অনেককে পায়ে হেঁটে ইজতেমাস্থলে পৌঁছুতে দেখা গেছে। আজ আখেরী মোনাজাতের আগ পর্যন্ত এ জনস্রোত অব্যাহত থাকবে। গতকাল জিকির আসকারের মধ্যদিয়ে দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত করছেন উপস্থিত মুসল্লিরা। ইজতেমায় দ্বিতীয় দিন বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা ইসমাইল গুদরা, ভারতের মাওলানা জামসেদ, মাওলানা ইসুফ ও মাওলানা খোরশেদ। বয়ানে ইমান, আমল, জাহান্নাম, জান্নাত ও দাওয়াতে মেহনতের ওপর গুরুত্বপূর্ণ বয়ান রাখেন তারা। তারা বলেন, মানুষ যখন স্বেচ্ছাচারী জীবনযাপন করে তখন তারা পেরেশানিতে পড়ে। এজন্য রাসুলে পাক (সা.) এর জীবনব্যবস্থাকে অনুসরণ করতে হবে। তা না হলে মানুষ সহজেই পেরেশানিতে পড়ে যাবে। বয়ানে বলা হয়, দ্বীনদার মানুষের প্রতি আল্লাহ সবসময় রাজি-খুশি থাকেন। আল্লাহ যাদের ওপর রাজি-খুশি থাকবেন দুনিয়া ও আখেরাতে তারাই কামিয়াব হবেন।
আরো দুই মুসল্লির মৃত্যু: গতকাল ইজতেমা ময়দানে আরো দুই মুসল্লি ইন্তেকাল করেন। এরা হলেন নোয়াখালীর আবুল বাসার (৬০), সিলেটের আলাউদ্দিন (৭০)। এ নিয়ে গত দু দিনে ৫ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। টঙ্গী সরকারি হাসপাতালসূত্রে জানা যায়, এবার ইজতেমায় শীতের প্রকট না থাকায় রোগীর সংখ্যা অনেক কম। গত দু দিনে এই হাসপাতালে ৬৬ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া আরো ১৫ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
একজনের কারাদণ্ড: সৌদি আরবের এক মুসল্লির পাসপোর্ট চুরির চেষ্টাকালে গতকাল একজনকে আটক করে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম আব্দুল আজিজ (৩২)। বাড়ি কক্সবাজারের উখিয়ায়।
মুসল্লিদের সুবিধার্থে যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ: আখেরী মোনাজাত উপলক্ষে মুসল্লিদের সুবিধার্থে গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ৩টা থেকে ওই এলাকায় যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। আজ রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিধিনিষেধ বলবত থাকবে। আখেরী মোনাজাতে অংশ নিতে আসা মুসল্লীদের অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য দক্ষিণে আন্তর্জাতিক হযরত শাহ্ জালাল বিমানবন্দর, পশ্চিমে উত্তরা-১১নং সেক্টর, এবং গাজীপুর চৌরাস্তা ও মিরের বাজার পর্যন্ত রাত ৩টা থেকে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
গাজীপুরের ট্রাফিক বিভাগের সহকারী পুলিশ সুপার মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান, শনিবার রাত ৩টার পর থেকে রোববার আখেরি মোনাজাতের সময় পর্যন্ত ভোগড়া বাইপাস মোড় থেকে কুড়িল বিশ্বরোড, সাভারের বাইপাইল থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশের গাড়ি ছাড়া সাধারণ যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে মোনাজাতের দিন সকাল থেকে গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস মোড় এলাকা থেকে ইজতেমাস্থল পর্যন্ত মুসল্লিদের সুবিধার্থে ৪০টি ইজতেমার স্টিকার লাগানো বাস চলাচল করবে বলে জানান তিনি।
ইজতেমা উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে আখাউড়া, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন রুটে ২৮টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আখেরি মোনাজাতের আগে ও পরে সকল ট্রেন টঙ্গী স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে।
আজ আখেরি মোনাজাত যৌতুকবিহীন গণবিবাহ: গতকাল বাদ আছর ইজতেমার মূল মঞ্চের পাশে কনের অভিভাবক ও বরের উপস্থিতিতে কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই ২১১ জোড়া যৌতুকবিহীন বিবাহ পড়ানো হয়েছে। কাকরাইল মসজিদের খতিব হাফেজ জুবায়ের এই বিবাহকার্য সম্পন্ন করেন। যৌতুকবিহীন এসব বিবাহ পড়ানোর সময় বর মঞ্চের পাশে সারিবদ্ধ হয়ে বসেন আর ইজতেমার একজন মুরুব্বির তত্ত্বাবধানে কনের এজিন ও তাদের অভিভাবক নিয়ে নির্দিষ্ট একটি স্থানে বিবাহের জন্য কবুলিয়ত করেন। ইজতেমাশেষে বর ও কনের পিতা জামাতবন্দি হয়ে ৩ চিল্লায় (১২০ দিন) তাবলীগের দাওয়াতি কাজে বের হবেন।
ইন্দোনেশীয় নাগরিকের মৃত্যু: গতকাল ইজতেমা ময়দানে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক হাজি সোফা (৭০) অসুস্থ হয়ে পড়লে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি মারা যান। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা গেছেন বলে জানা গেছে। লাশ কুর্মিটোলা হাসপাতালে রয়েছে।